1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সড়কের পাশে মদের দোকান নিষিদ্ধ

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৪ এপ্রিল ২০১৭

সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার জেরে জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে সব মদের দোকান বন্ধ করে দিতে শনিবার থেকেই বিভিন্ন রাজ্যের আবগারি বিভাগ ও পুলিস তত্পর হয়ে উঠেছে৷ উঠে আসছে এর লাভ-লোকসানের খতিয়ান৷

https://p.dw.com/p/2aexs
Alkohol - 'Alkohol Frau - reduziertes Trinken'
ছবি: MDR

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে দেশের বহু রাজ্যে জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মদের দোকান, হোটেল ও রেস্তোরাঁ-পাবে মদ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ তবে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও অন্য কয়েকটি রাজ্যে মদের দোকান এবং রেস্তোরাঁ-পাবের চলতি লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরায়নি বলে এখনও তারা মদ বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের আর্জির প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত তার নির্দেশিকায় কিছুটা সংশোধন করে বলে, যেখানকার জনসংখ্যা ২০ হাজারের কম সেখানে এই দুরত্বটা হবে ২২০ মিটার৷ এতে লাভ-লোকসানের দিক থেকে ইতরবিশেষ কিছু হবে বলে মনে করছে না রাজ্যগুলির প্রশাসন৷ মদের দোকান, পাব ইত্যাদি বেশির ভাগই জাতীয় সড়কের আশেপাশে৷ এর সহজগম্যতার কারণে খদ্দেরদের ভিড় থাকে সবসময়৷ সেজন্য রাজস্বের হিসেবে রাজ্যগুলির মাথায় হাত৷ মদের লাইসেন্স থেকে একটা মোটা টাকা আসে রাজ্যগুলির রাজস্ব ভাণ্ডারে৷ সেটা বড় লোকসান৷

শীর্ষ আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা কেন? রাজস্বের চেয়ে মানুষের জীবনের দাম বেশি৷ মদ খেয়ে গাড়ি, বাস, ট্রাক চালানোর বিপজ্জনক প্রবণতা ক্রমশই বাড়ছে৷ তার পরিণামে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা৷ ভারতে সবথেকে বড় ঘাতক লো সড়ক দুর্ঘটনা, এমনটাই মনে করছে শীর্ষ আদালত৷ হাড় হিম করা পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি চার মিনিটে ভারতে একজন মারা যায় রোড অ্যাক্সিডেন্টে৷ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় ১৬টি বাচ্চা৷ খোদ দিল্লিতেই রোজ মারা যায় পাঁচজন৷ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ভারতে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় গড়ে দেড় লাখের মতো৷ দেশের যুদ্ধেও এত লোক মারা যায়নি৷ সবথেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে টু-হুইলারে (মোটর সাইকেল, স্কুটার ইত্যাদি)৷ বছরে গড়ে ৪৬ হাজার৷ এরপর ট্রাক৷ বছরে প্রায় ২৯ হাজার আর কারে বা গাড়িতে বছরে ১৯ হাজারের মতো৷

দিল্লির ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তাব্যক্তির কাছে প্রশ্ন রাখি, তবে কি দেশে ট্রাফিক নিয়মকানুন বলে কিছু নেই? থাকলে এত সড়ক দুর্ঘটনা কেন? উত্তরে উনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘থাকবে না কেন? কিন্তু সেটা বেশিরভাগ চালক, বিশেষ করে কম বয়সি চালকদের মানার বালাই নেই৷ সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ জরিমানা করে, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করে৷ রাস্তার ধারে ধারে সারিবদ্ধভাবে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রাখা তো সম্ভব নয়৷ চালক তথা নাগরিক সমাজ যদি দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে পুলিশ কী করতে পারে?'' হালে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দশগুণ৷ দুই বা তিনবার মারাত্মক দুর্ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স চিরদিনের মতো বাতিলও করা হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সড়ক ডিজাইনিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অবশ্য গলদ আছে, ডয়চে ভেলেকে বলেন দিল্লির ট্রাফিক অফিসার৷

অন্যদিকে নিখিল ভারত হোটেল ও রেস্তোরাঁ সমিতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জি জানাবার কথা ভাবছে৷ আগামীকাল, অর্থাৎ ৫ই এপ্রিল দিল্লিতে বসছে তাদের বৈঠক৷ এই নিষেধাজ্ঞার ফলে জাতীয় সড়কের পাশ থেকে রাতারাতি তাদের ব্যবসাপাতি অন্যত্র স্থানান্তরিত করতে গেলে লালবাতি জ্বলবে ব্যবসায়৷ কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী মহেশ শর্মা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের আওতায় একটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে এর সুরাহা করার পক্ষপাতি৷ তবে রাজস্বের বিষয়টি রাজ্য সরকারগুলির এক্তিয়ারে থাকায় রাজ্য সরকারগুলিকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় সড়কের ধারে ধারে আছে ১৮০০-এর মতো মদের দোকান৷ এর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজস্ব আসে হাজার কোটি টাকার মতো৷

শুধু রাজস্ব নয়, পাশাপাশি আঁচ পড়বে পর্যটন শিল্পেও৷ গোয়ার মতো রাজ্য যেখানে পর্যটনই রাজ্যের অর্থনৈতিক ধমনি৷ বিশেষ করে গোয়ায় বিদেশি পর্যটকই বেশি৷ তাঁদের সুরাপানে বঞ্চিত করলে হাহাকার পড়ে যাবে৷ গোয়ার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকর আদালতের নির্দেশিকার মধ্যে থেকে কতটা কী করা যায়, সেবিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন হাজার তিনেক খুচরো ও পাইকারি মদের দোকান ও রেস্তোরাঁ-বার মালিকদের৷ একই বন্ধনিতে পড়ে দিল্লিও৷ পর্যটন ছাড়াও দিল্লিতে বেশি আসেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা৷ তাঁদের বক্তব্য, বিমানবন্দরের কাছে একটু গলা ভিজিয়ে নিতে না পারলে ঠিক যুত হয় না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য