1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বন্যা কেন?

৭ জুন ২০১৩

জার্মানিতে ‘হোখভাসার’ বা বন্যা কিছু নতুন নয়৷ তবে এ বছর দেশের ছোটবড় নদীগুলি যেভাবে কূল ভাসিয়েছে, বাঁধ ভেঙে শহরে ঢুকেছে, তা বহু শতকের মধ্যে অনন্য৷ সমস্যা বেড়েই চলেছে – কিন্তু কেন?

https://p.dw.com/p/18lG5
Volunteers pile sandbags to build an embankment fortification in an effort to contain the rising Elbe River at Leipziger Street in the east German city of Dresden, June 5, 2013. Tens of thousands of Germans, Hungarians and Czechs were evacuated from their homes on Wednesday as soldiers raced to pile up sandbags to hold back rising waters in the region's worst floods in a decade. REUTERS/Thomas Peter (GERMANY - Tags: DISASTER ENVIRONMENT)
Dresden Hochwasser Sandsäcke Hilfeছবি: Reuters

জার্মান টেলিভিশনে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নানা জায়গা থেকে পাওয়া যাচ্ছে একই ছবি৷ নালার মতো ছোট ছোট ‘নদী'-গুলো যেন খরস্রোতা নদী হয়ে উঠেছে, গ্রাম বা জনপদের মাঝখান দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি-বাড়ি৷ বড় নদীগুলো কূল ছাপিয়ে, মাঠ-প্রান্তর ছাপিয়ে হ্রদের আকার ধারণ করেছে৷ বিভিন্ন কৃত্রিম জলাধারে ছাপাছাপি জল৷ ছোটবড় বহু শহরের কাছে ‘ডাইশ' বা বাঁধগুলি ভেজা কম্বলের মতো নরম হয়ে ভেঙে পড়ার মুখে কিংবা ভেঙে পড়েছে৷ অথবা সেগুলো বালিভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে শক্ত করা হচ্ছে৷

কিন্তু অনেক জায়গায় এতো করেও ‘বাড়' আটকানো যাচ্ছে না৷ দক্ষিণ-পূর্ব জার্মানির ডেগেনডর্ফ শহরের কাছে ড্যানিউব ও ইসার নদীর দু'টি বাঁধ ভেঙে বহু বাড়ি ভেসে গেছে, জল দাঁড়িয়েছে প্রায় এক তলা৷ মানুষজন শেষ মুহূর্তে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন৷ সেখান থেকে তাদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হচ্ছে৷

পূর্ব জার্মানির হালে শহরের একাংশ ঠিক ঐভাবেই ভেসে গেছে৷ দক্ষিণ জার্মানির একটি হাইওয়ে জলে ডুবে গেছে, বন্যার জল মোটরগাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, কয়েকটা ট্রাকের মাথা টাপুর মতো ঘোলাজলের উপর ভেসে রয়েছে৷ অন্যত্র, যেমন দক্ষিণের পাসাউ শহরে জল নেমে যাওয়ার পর মানুষজন, সেনা, পুলিশ, দমকল, স্বেচ্ছাসেবীরা বন্যার জলে ভেসে আসা পাঁক, মাটি আর ময়লা সরাতে ব্যস্ত৷ সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি অপরিমেয়৷

ভুলটা কোথায়?

২০০২ সালের পর আর এ সব এলাকায় এত বড় বন্যা বিপর্যয় ঘটেনি৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ১০ কোটি ইউরোর তাৎক্ষণিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ সাহায্য আসছে ব্রাসেলস, অর্থাৎ ইইউ থেকেও৷ একদিকে সাহায্য, অন্যদিকে দোষারোপ৷ কারো দৃষ্টিতে জলবায়ুর পরিবর্তন দায়ী৷ কেউ বলছেন, শুধু আরো উঁচু বাঁধ দিয়ে এই বন্যা রোখা সম্ভব ছিল না৷ তার জন্য চাই পরিবেশসম্মত বন্যা সুরক্ষা৷

সেটা কী বস্তু? পরিবেশ সংগঠন ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর এক পানি বিশেষজ্ঞ গেয়র্গ রাস্ট বলেছেন: বিগত কয়েক বছরে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কিংবা যান্ত্রিক উপায়ে বন্যা সুরক্ষার উপর বড় বেশি জোর দেওয়া হয়েছে৷ সেই সঙ্গে আবার আছে নদীর ধারের গ্রাম-শহরগুলির পরস্পরের মধ্যে হিংসা, দ্বেষ, রেষারেষি, নিজেদের স্বার্থ৷

এলবে নদীর কথাই ধরা যাক৷ ২০০২ সালে এলবে নদীর ভয়াবহ বন্যার পর ফেডারাল ও রাজ্য সরকারগুলি মিলে একটি সার্বিক বন্যা সুরক্ষা কর্মসূচির পরিকল্পনা করে৷ কিন্তু সে ধরনের কর্মসূচি বাস্তবে রূপায়িত করতে ১০ বছরের বেশি সময় লেগে যাবে৷ এর মধ্যে প্রতিবারের বন্যাতেই ইঞ্চি-ইঞ্চি করে জলের উচ্চতা বেড়ে চলেছে, বাড়ছে তার বিনাশের শক্তি৷ বন্যার পর পরই ‘ডাইশ' বা বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা'তে আবার বিপুল পরিমাণ সময় ও অর্থ খরচ হয়৷ কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে এই অসম প্রতিযোগিতায় মানুষের পক্ষে জেতা অসম্ভব৷

করণীয় কী?

ডাব্লিউডাব্লিউএফ কিংবা জার্মানির ‘নাবু' অথবা ‘বুন্ড'-এর মতো আন্তর্জাতিক ও দেশি পরিবেশ সংগঠনগুলির মতে স্থায়িভাবে বন্যা রোখার একমাত্র পথ হল, নদ-নদীগুলোকে তাদের ‘আউয়ে' বা নদীর দু'পাশে জল ধরার মাঠ-প্রান্তর-জলাভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে৷ তাহলে বান বা বন্যার জল এলে, তা এত তাড়াতাড়ি এক শহর থেকে আরেক শহরে পৌঁছতে পারবে না, শহরগুলো ভাসাতে পারবে না৷

শুধুমাত্র এলবে নদী বিগত কয়েক দশকে তার দু'পাড়ের প্রকৃতিদত্ত জোলো জমি ও জলজঙ্গলের ৮০ শতাংশের বেশি হারিয়েছে; সেই ‘আউয়ে' পরিবর্তিত হয়েছে গোচারণের মাঠে; কিংবা সেখানে গজিয়ে উঠেছে বাড়িঘর, কলকারখানা৷ নদীর খাত এক কথা; আর বাড়তি জল এলে, তা সাময়িকভাবে ধরে রাখার জন্য যে চরভূমির প্রয়োজন, নদীকে সেটা ফেরত না দিলে, ২০০২ সালের বন্যা কি ২০১৩ সালের বন্যার পুনরাবৃত্তি হতে বাধ্য৷ এ বন্যা প্রতিবারেই আরো ঘন ঘন হবে, তার তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পাবে, বলেছেন বিশেষজ্ঞরা৷

এসি/এসবি (ডিপিএ, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য