1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে মরণাপন্ন মানুষের মৃত্যুর অধিকার

৬ জুলাই ২০১০

জীবনের শেষ দিনগুলি কেমন যাবে, এই নিয়ে মানুষের মনে একটা শংকা থাকে৷ যদি অচেতন হয়ে থাকতে হয়? কিছু করার ক্ষমতা না থাকে?

https://p.dw.com/p/OBPM
assisted suicide
আদালতের রায় অনুযায়ী মরণাপন্ন মানুষ এবার আগাম স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে পারবেনছবি: AP

এমন অবস্থায় পড়লে কী করণীয় সে ব্যাপারে উইল করে রাখার সুযোগ রয়েছে জার্মানিতে৷ ২০০৯ সাল থেকে রোগীর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করাটা বাধ্যতামূলক৷

ইনগ্রিড জান্ডার সাঙ্ঘাতিক অসুস্থ৷ প্রতিটি পদক্ষেপই তাঁর জন্য রীতিমত কষ্টদায়ক৷ তাঁর বা হাত প্রায় নাড়াতেই পারেন না৷ ডান পাও অবশ৷ ব্যথা তাঁর নিত্যসঙ্গী৷ কড়া কড়া ওষুধ খেয়ে কোনো রকমে দিনটা পার করতে হয় তাঁর৷ ভাল হওয়ার তেমন আশাও নেই৷ ইনগ্রিড জান্ডার বলেন: ‘‘ব্যথা বেদনা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সহ্য করা যায়৷ কিন্তু ব্যথা যখন সারা শরীরের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার করে বসে, তখন আর উপায় থাকেনা৷ তখন শুধু একটাই চিন্তা ঘোরে ফেরে৷ কীভাবে এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷''

৫ বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন ইনগ্রিড৷ তখন থেকে তাঁর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে৷ স্নায়ুগুলি শক্তি হারিয়ে ফেলছে৷ মাংসপেশি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে৷ এজন্য মৃত্যু নিয়ে চিন্তা ভাবনাটা তাঁর লেগেই থাকে৷ ইনগ্রিড জান্ডারের মতে, যার যেভাবে ইচ্ছা সে ভাবেই তাকে মরতে দেওয়া উচিত৷ যন্ত্রণা যদি অসহ্য হয়, ওষুধ দিয়ে হলেও৷ ‘‘আগে থেকে কেউ বলতে পারেনা, কতটা যন্ত্রণা সহ্য করা সম্ভব৷ কিন্তু যদি আমি মনে করি যথেষ্ট হয়েছে, তাহলে আমার চলে যাওয়ার অধিকারও রয়েছে৷''

কৃত্রিম উপায় যন্ত্রের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাননা তিনি৷ ৭১ বছর বয়সি ইনগ্রিড মৃত্যুকে ভয় পাননা৷ কিন্তু মেশিন লাগিয়ে বিছানায় বন্দি হয়ে থাকার আতঙ্ক রয়েছে তাঁর৷ ইনগ্রিড জান্ডার বলেন: ‘‘অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে অসহায় অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে ভয় হয় আমার৷''

তাই ইনগ্রিড জান্ডার আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্রে আবদ্ধ হতে চাননা৷ কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য গ্রহণেও ইচ্ছা নেই তাঁর৷ ইনগ্রিড তাঁর এই ইচ্ছাপত্র লিখে রেখেছেন৷ তিনি আশা করেন, তাঁর সন্তানরা তাঁকে এই ইচ্ছাপূরণে সহায়তা করবেন৷

এটা পরিবারের জন্য এক বিরাট দায়িত্ব৷ বলেন তাঁর ছেলে কার্সটেন৷ অন্য এক শহরে বাস করেন তিনি৷ কার্সটেন বলেন, ‘‘ব্যাপারটা খুবই কঠিন৷ তবে আমি তা করব৷ কেননা আমি জানি এটা তাঁর ভালোর জন্যই৷''

কার্সটেন ছেলেবেলা থেকেই দেখেছেন, এই রকম একটা কঠিন অসুখ নিয়ে জীবন কাটানোটা কত কঠিন৷ কার্সটেন জানান: ‘‘আমি ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করেছি, আমার মাকে কী রকম কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে৷ তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও করিতকর্মা এক মানুষ৷ আমি জানি হঠাৎ করে নয় বরং চিন্তা ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷''

ইনগ্রিড জান্ডার আশা করেন, সে রকম অবস্থা আসতে যেন অনেক দেরি হয়৷ আবার এটাও আশা করেন, এরকম হলে যেন মারা যাওয়ার অধিকারটাও তাঁর থাকে৷

ইনগ্রিড বলেন: ‘‘নীরবে, শান্তিতে৷ আমার প্রিয় মানুষদের মাঝে কোনো কষ্ট ছাড়াই মারা যেতে চাই আমি৷ সবারই নিজের মৃত্যুকে বরণ করে নেয়ার অধিকার থাকা উচিত''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক