1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির পূর্বাঞ্চলকে গড়ে তোলা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

জার্মান পুনর্মিলনের পর পরই তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল পূর্বের মানুষদের বলেছিলেন, ফলে-ফুলে ভরে যাবে এই দেশ৷ সেযাবৎ জার্মানি পূর্বাঞ্চলকে গড়ে তোলার কাজে ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো নিয়োগ করা হয়েছে৷ কিন্তু সে’কাজ আজও সমাপ্ত হয়নি৷

https://p.dw.com/p/PPSu
কিছু কিছু অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে জার্মান পুনর্মিলনে ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল অবধি ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো ব্যয় করা হয়েছেছবি: picture-alliance/ ZB

আজ যখন পশ্চিম জার্মানির ট্যুরিস্টরা জার্মানির পূর্বাঞ্চলে যান, তখন তারা সুন্দরভাবে মেরামত করা ঘরবাড়ি, ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট দেখে চমকে যান৷ অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে: এখানে করার মতো আর কোন কাজ বাকি আছে কি? সত্যিই, পুনর্মিলনের ২০ বছর পরে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে অনেক পরিবর্তনই চোখে পড়ার মতো৷ অপরদিকে পুনর্মিলনের পর সময়ও তো কিছু কম কাটেনি: দীর্ঘ দু'দশক৷ ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে সাবেক পূর্ব জার্মানির প্রথম মুক্ত নির্বাচনে যিনি দেশটির শেষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন, সেই লোথার ডে মেইজিয়ার'ও স্বীকার করেন:

‘‘আমরা তখন ভেবেছিলাম, সম্ভবত সব কিছু অনেক তাড়াতাড়ি হবে৷ কিন্তু আজ যারা সেই ‘ফলে-ফুলে ভরা দেশ' দেখতে পায় না, তারা হয় অন্ধ, নয়তো নির্বোধ৷ আমি যখন আজ গ্যোরলিৎস, কোয়েডিনবুর্গ কিংবা অন্যান্য শহর দিয়ে যাই, তখন এই শহরগুলো আজ যে কি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা' দেখে বুক ভরে যায়৷''

অর্থ এবং তার বিনিয়োগ

জার্মান পুনর্মিলনে আজ অবধি কতো খরচ হয়েছে, তা শুধু অনুমান করা যায়৷ কিছু কিছু অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল অবধি ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউরো ব্যয় করা হয়েছে৷ এই অর্থের একটি বড় অংশ সরাসরি পূর্বের নতুন অঙ্গরাজ্যগুলির বাজেটে চলে যায়৷ ফেডারাল সরকারের তরফ থেকে শুধুমাত্র জাতীয় সড়ক, মোটরওয়ে এবং জলপথ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করা হয়৷ কিন্তু শুধু মান্ধাতার আমলের অবকাঠামোর সংস্কার, কি পূর্বাঞ্চলে যে সব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে, তাদের জন্য সরকারি ভরতুকিই তো নয়৷ বলতে কি, পূর্ব জার্মানির গোটা অর্থনীতিটা ভেঙে পড়ার ফলেই পূর্বে বেকারত্ব এরকম অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়৷ কাজেই ঐ ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউরোর দুই-তৃতীয়াংশই গেছে বেকার ভাতা এবং অন্যান্য সামাজিক ভাতার জন্য অর্থসংস্থানে৷ আজও পূর্বের বেকারত্ব পশ্চিমে বেকারত্বের তুলনায় অনেক বেশী৷

Währungsunion DDR und BRD 1990 Flash-Galerie
১৯৯০ সালের পয়লা জুলাই পূর্ব জার্মানিতেও ডয়চে মার্ক চালু করা হয়ছবি: picture alliance/dpa

কাঁচা টাকা

১৯৯০ সালের পয়লা জুলাই পূর্ব জার্মানিতেও ডয়চে মার্ক চালু করা হয়৷ তা'তে জিডিআর'এর নাগরিকরা খুশী হলেও, জিডিআর'এর অর্থনীতির পক্ষে তার ফল হয় মারাত্মক৷ পূর্বের মুদ্রা এবং পশ্চিমের মুদ্রা সমমূল্য ধরায়, নাগরিকরা তাদের সঞ্চয়, অবসর ভাতা ইত্যাদি হঠাৎ ডয়চে মার্কে রূপান্তরিত হতে দেখে৷ অপরদিকে শিল্পসংস্থা ইত্যাদিরা তাদের শ্রমিকদের ডয়চে মার্কে বেতন দিতে গিয়ে পশ্চিমের অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে - যে প্রতিযোগিতায় তাদের হারা ছাড়া জেতার কোনো সম্ভাবনা ছিল না৷ স্বয়ং জিডিআর'এর মানুষরা স্বদেশের পণ্য ছেড়ে পশ্চিমের, কিংবা বিদেশী পণ্য কেনার দিকে ঝোঁকেন৷

কিসের সওদা?

একীকৃত জার্মানিতেও পূর্ব-পশ্চিমের অর্থনৈতিক শক্তির তারতম্য বজায় থাকে৷ পশ্চিম জার্মানির শিল্পসংস্থাগুলি পূর্বের বাজারে পণ্য বিক্রয় করলেও, তাদের কারখানাগুলো পশ্চিমেই রাখে৷ অতি ধীরে ধীরে পূর্বেও শিল্প-কারখানা বসতে শুরু করে৷ এবং আজও পূর্ব-পশ্চিমের এই বুনিয়াদী ফারাক থেকেই গেছে, যদিও তা অনেক কমেছে৷

প্রাক্তন জার্মান অর্থমন্ত্রী থিও ভাইগেল'কে একবার এক মার্কিন শিল্পসংস্থার প্রধানের কাছ থেকে একটি অদ্ভূত প্রশ্ন শুনতে হয়েছিল: ‘‘আপনারা জিডিআর ‘কিনে' খারাপ সওদা করেননি তো?'' ভাইগেল উত্তর দিয়েছিলেন: এক কোটি আশি লক্ষ মানুষ আজ একটি মুক্ত গণতন্ত্রে বাস করছে৷ মার্কিনিরা ইরাকে দশ বছর পরে যদি সেটুকু বলতে পারে, তবেই তাদের এ'প্রশ্ন করার অধিকার আছে৷

প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকার্জ, অনুবাদ: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ