1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নৌবাহিনীতে সক্রিয় নারীরা

১৬ জানুয়ারি ২০১১

জার্মানির নৌ-বাহিনীতে অনেক মহিলা কাজ করছেন৷ সফল অফিসার হিসেবে তারা সবাই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন৷ পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে পার করেছেন কঠিন সময়৷

https://p.dw.com/p/zyEf
জার্মান নৌ-বাহিনী (ফাইল ছবি)ছবি: picture-alliance / dpa

সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌ-বাহিনী – এসব পেশায় সাধারণত শুধু পুরুষদেরই দেখা যায়৷ অস্ত্র হাতে দৌড়াদৌড়ি, গোলাগুলি – এসব করতে প্রয়োজন অত্যন্ত কঠিন দুঃসাহসের৷ তবে দিন পাল্টেছে এসব কাজে এখন এগিয়ে এসছেন অনেক মহিলা৷ সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন তারা৷

জাহাজে যখন এ্যালার্ম বাজে তার মানে – বিপদসঙ্কেত! কোন ধরণের প্রস্তুতি ছাড়াই প্রত্যেক সৈন্যকে তৈরি হতে হবে সমস্যা মোকাবিলার জন্য৷ জাহাজের নাম ‘নের্তস'৷ জার্মানির উপকূলবর্তী শহর রস্টক-ভার্নেমুন্ড'এ জাহাজটি ভেড়ানো৷ অবশ্য এটি একটি প্রশিক্ষণ৷ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছে ৪০ জন পুরুষ অফিসার এবং একজন মহিলা অফিসার৷ ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট বারবারা টেশ একমাত্র মহিলা অফিসার৷ তিনি জানান দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর মনোমত চাকরি৷ বারবারা বললেন, ‘‘নতুন করে সবকিছু শিখতে হয়, পরিচিত পরিবেশের সঙ্গে আরেকবার খাপ খাওয়াতে হয়৷ যে কাজ এতদিন আমি করেছি তাই করছি কিন্তু ভিন্ন পরিবেশে৷ আমার বয়স মাত্র ২৭৷ এখানে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হয়৷ কখনো অস্ত্র নিয়ে, কখনো মানুষের সঙ্গে৷ এখানে সবকিছুর মূল্য অনেক অনেক বেশি৷ মানুষের জীবন থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রয়োজনীয় জিনিস – যা নিয়ে বা যাদের নিয়ে আমরা কাজ করি৷ আর এ কারণেই এই কাজটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়৷''

অথচ দশ বছর আগেও জার্মান নৌ-বাহিনীতে কোন মহিলাকে দেখা যেত না৷ পুরুষদের মাঝে নৌবাহিনীর জাহাজে একটি মেয়ে – তা কেউ ভাবতেও পারতো না৷ তবে আজ যেসব সহকর্মী বারবারাকে ঘিরে রয়েছে তারা বয়সে তরুণ৷ পুরো বিষয়টি তারা গ্রহণ করেছে বেশ স্বাভাবিকভাবে৷ চিফ অফিসার মাটিয়াস স্টেডিং জানান, ‘‘এখানে কে পুরুষ কে মহিলা সেদিকে নজর দেওয়া হয় না৷ সবাইকে একইরকমভাবে দেখা হয়৷ আলাদা করে কেউ কোন ধরণের সুযোগ বা সুবিধা পায় না৷ যেমন যে কোন মেয়েকে পুরুষদের সঙ্গে একই টয়লেট ব্যবহার করতে হবে৷ গোসলের জন্য আলাদা কোন জায়গা নেই৷ আমরা সবাই তা ব্যবহার করি৷ একজন মহিলা বলে বারবারা কোন সুবিধা পাচ্ছে না, এক চুল পরিমাণও না৷''

কথা ঠিক৷ মহিলার জন্য আলাদা একটি রুম? একটি জাহাজে সেটা কী করে সম্ভব? কোথা থেকে তা তৈরি করা হবে? জাহাজের সব জায়গাই পুরোপুরি কাজে লাগাতে হয়৷ এবং প্রতিটি কোনাই বারবারাকে অন্যান্য ক্রু'র সঙ্গে ভাগ করতে হয়৷ দিনে এবং রাতে৷ এভাবেই চলবে, এভাবেই কাজ করতে হবে৷ বারবারা জানান, ‘‘আমার সুবিধা হল, আমি বিবাহিতা৷ তার ফলে আমার মনে হয় অনেকেই কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখে৷ তার উপর আমি একজন অফিসার৷ মোটকথা এখনো পর্যন্ত আমার কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি৷''

দু বছর আগে বারবারাকে একটি মিশনে পাঠানো হয়েছিল লেবাননে৷ উদ্দেশ্য ছিল নৌ-পথে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান প্রতিরোধ করা৷ বারবারা কাজ করছিলেন জাতিসংঘের পক্ষ হয়ে৷ সেই সময়কার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বারবারা বলেন, ‘‘আমি বলবো না যে আমি খুব শান্ত ছিলাম বা খুব স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্ব গ্রহণ করছিলাম৷ তবে স্বস্তি বোধ করছিলাম এই ভেবে যে আমি একা নই৷ আমার দায়িত্ব কী তা আমি বেশ পরিস্কারভাবেই আমি জানি৷ আমাদের সবার লক্ষ্য ছিল একটাই৷ তবে অবশ্যই কোন কাজ কত গুরুত্বপূর্ণ বা কতটা বিপজ্জনক তা আগে থেকে কখনোই টের পাওয়া যায় না৷ সেই সময়ে, লেবাননের উপকূলে আমি সবসময় নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম৷''

নৌ-বাহিনীতে কাজ – বলার সঙ্গে সঙ্গেই চোখে ভেসে উঠবে একদল পুরুষকে৷ অস্ত্র, প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরণের মেশিনের সঙ্গে যেন শুধুমাত্র পুরুষদেরই মানায়৷ তবে মহিলারা যোগ দিচ্ছেন৷ বর্তমানে প্রায় বারোশো মহিলা কাজ করছেন জার্মান নৌ-বাহিনীতে, যা পুরো নৌ-বাহিনীর প্রায় সাত শতাংশ৷ সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীতে রয়েছে আরো অনেক বেশি নারী৷

বারবারা টেশ এগিয়ে যেতে চান৷ নৌ-বাহিনীতেই তিনি তাঁর ক্যারিয়ার গড়তে চান সফলভাবে৷ তাঁর মতে – ইউনিফর্ম পরিহিতা নাগরিক – তা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন