1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাহাজ ভাঙার নামে সীতাকুন্ডে বন উজাড়

১০ মে ২০১০

১৯৯১ সালের জলোচ্ছ্বাসে মারা গিয়েছিল এক লাখ আটত্রিশ হাজার মানুষ৷ মৃতদের মধ্যে ছিলেন আবুল কালাম-এর বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়রা৷ কিন্তু সমুদ্র তটে থাকা সত্ত্বেও মারা পড়েননি আবুল কালাম৷ কেন?

https://p.dw.com/p/NKDT
ফাইল ফটোছবি: AP

আবুল কালাম এমন বিখ্যাত কোন ব্যক্তি নন৷ সীতাকুন্ড উপকূলে বাস তার৷ ১৯৯১ সালের মে মাসের প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাসের সময় তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল একটি নারিকেল গাছ৷ সঙ্গে বাঁচিয়েছিল তার স্ত্রীকেও৷ শুধু তারাই নয়, আরো অনেককে বাঁচিয়েছিল সীতাকুন্ডের বনাঞ্চল৷

কিন্তু এখন আর তেমনটা সম্ভব নয়৷ কারণ সীতাকুন্ডের বনাঞ্চল দিনে দিনে উজার হচ্ছে৷ প্রাকৃতিক এই দেয়ালতো থাকছেই না, বরং সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে পরিবেশের জন্য আরো ক্ষতিকর জাহাজ ভাঙা শিল্প৷

মনে কি প্রশ্ন জাগে না, ঠিক কি পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে সীতাকুন্ডে? বেসরকারি সংগঠন প্ল্যাটফর্ম অন শিপব্রেকিং লবি গ্রুপ এর প্রধান মোহাম্মদ আলী শাহিন জানাচ্ছেন, গত ছয় মাসে জাহাজ ভাঙা শিল্পের সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কাটা হয়েছে ৪০ হাজার বড় গাছ৷

চট্টগ্রামের স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ৷ তার ওপরে জাহাজ ভাঙা শিল্পের নামে বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছে৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, সীতাকুন্ডের উপকূলে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে তেমন একটা বনভূমি আর নেই৷ জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব বনভূমি উজাড় করছে বলেও মত তাঁর৷

কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, মানে সেই জাহাজ ভাঙা শিল্পের মালিকরা কি বলছেন? বাংলাদেশ শিপ ব্রেকারস এসোসিয়েশন এর সভাপতি জাফর আলম জানালেন, জাহাজ ভাঙা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প৷ আমরা হাজার হাজার মানুষের জন্য কাজের সংস্থান করেছি এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্ভাবে আমাদের সম্পদের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার৷

জাফর জানালেন, এই শিল্প এখন ব্যাপকহারে বাড়ছে৷ আর তাই, তারা আরো নতুন নতুন জায়গায় জাহাজ ভাঙা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছেন৷

বলাবাহুল্য, এই খবর মোটেই সুখকর নয় সীতাকুন্ডে বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য৷ ৭০ বছর বয়সি যতীন্দ্র জলদাস তাই বললেন, তারা সব মাছ মেরে ফেলেছে, বন উজাড় করে দিয়েছে৷ এখন শুধু আমাদের তাড়ানোই বাকি৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক