জেনেভায় মৃত্যুদণ্ড বিরোধী বিশ্ব কংগ্রেস, সমালোচিত চীন
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০চীনের আইনে ৬৮টি অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে৷ কিন্তু পরিসংখ্যান ছাড়া সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্য কিছু বলাটা কঠিন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আনু কুলতালাথি যেমন ব্যাখ্যা করছিলেন, ‘‘বাকি বিশ্বে মোট মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যার চেয়ে চীনের একক মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা এখনও বেশি৷ এটা সত্যি যে চীনে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি গোপনীয়তার বেড়াজালে মোড়ানো এবং মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা হিসেবে রক্ষা করা হয়৷''
চীন দাবি করে থাকে, সেদেশে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমে এসেছে এবং এখন এ ধরণের সব রায়কেই সর্বোচ্চ জনআদালতের অনুমোদন পেরিয়ে যেতে হয়৷ কিন্তু এটা যাচাই করা সম্ভব নয়৷
চীনের অনেক জনজরিপেই দেখা গেছে ৮০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন৷ কিন্তু, জার্মানির ‘বিদেশি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিষয়ক মাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট' এর ডিট্রিশ ওবারভিটার বলছেন, তার গবেষণাই চীনে প্রথম নিয়মতান্ত্রিক জনসমীক্ষা এবং এতে ভিন্ন ফলাফল দেখা গেছে৷
ডিট্রিশ বলছিলেন, ‘‘জরিপে অংশগ্রহণকারীরা কেবলমাত্র চারটি অপরাধের কারণেই মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে কথা বলেছেন৷ এই চারটি অপরাধ হল - হত্যা, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে মারাত্মক আহত করা, মাদক ব্যবসা এবং নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন৷ এছাড়া অন্যান্য যে বহু অপরাধের কারণে চীনে এখনও মৃত্যুদণ্ড প্রচলিত রয়েছে সেগুলোকে যথাযথ মনে করেন না সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই৷ তাই বিষয়টি এমন নয় যে সব চীনারাই অত্যন্ত রুঢ়, বরং এ বিষয়ে তাদের ভিন্ন অভিব্যক্তি রয়েছে৷''
চীনের তিনটি প্রদেশে প্রায় ৪,৫০০ মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ ২০০৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এই জরিপের ফল অনুযায়ী সাধারণভাবে চীনে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে ৫৮ ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে৷
ডিট্রিশ জানান, ‘‘আপনি এটা বলতে পারেন না যে, এটা পশ্চিমা বিশ্বের যে কেনো দেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ যেমন আমরা সবসময়ই শুনি যে এশীয় মানুষরা অন্যরকম, তারা অনেক বেশি কঠিন শাস্তির পক্ষে৷ এই ফলাফল বলছে তা পশ্চিমা বিশ্বের জনগণের ওপর চালানো অন্যান্য জরিপের মতো কমবেশি একই রকম৷''
‘চীনে মৃত্যুদণ্ড: ইতিহাস, আইন এবং বর্তমান চর্চা' শিরোনামে একটি বইয়ের লেখক এবং সমাজকর্মী টন হং বলছিলেন, ‘‘এর পক্ষে সমর্থনের বিষয়টি আসলে ঐতিহাসিক-সাংস্কৃতিক কারণে৷ অনেকাংশে তা এমন যে, চীনা সমাজ বরাবরই ছিল একটি সামষ্টিক সমাজ৷ সবসময়ই তারা ব্যক্তির অধিকারের চেয়ে সমষ্টির স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছে৷ অন্য একটি কারণ হয়তো এমন যে, চীনা সমাজ এখন যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রশ্নে তারা কঠোর আইন চায়৷''
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক