1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জোরালো কার্যক্রম নিতে একটু দেরি হয়ে গেছে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১ আগস্ট ২০১৭

চিকুনগুনিয়া এখন এক আতঙ্কের নাম৷ মে মাস থেকে ঢাকা শহরে এ রোগ ছড়াতে শুরু করলেও সিটি কর্পোরেশনকে তৎপর হতে দেখা যায়নি৷ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন স্বীকার করেছেন যে, জোরালো উদ্যোগ নিতে দেরি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2hLra
ফাইল ফটোছবি: DW

ডয়চে ভেলে: হঠাৎ করে ঢাকা শহরে এত মশা বিস্তারের কারণ কী?

মেয়র সাঈদ খোকন: মশা নয়, হঠাৎ করে মূলত চিকুনগুনিয়ার একটা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে৷ এটা বাড়ার অনেকগুলো কারণ আছে৷ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আমরা মূলত জানতে পেরেছি যে, জলবায়ুগত পরিবর্তনটা এর অন্যতম কারণ৷ তাছাড়া এবার বৃষ্টিটা শুরু হয়েছে একটু আগে৷ ডেঙ্গু মশাকে প্রতিরোধ করতে জুলাই-আগস্ট মাসে আমাদের প্রস্তুতি থাকে৷ এপ্রিল মাসে আমাদের প্রস্তুতিটা সেভাবে ছিল না, যেভাবে মশার বিস্তার ঘটেছে৷ আমার ধারণা, এ সবকিছু মিলিয়েই জিনিসটা হয়েছে৷

মশা বাহিত রোগ প্রতিরোধে সম্প্রতি আপনারা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনগুলো?

মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে আমাদের যে প্ল্যানটা ছিল, সেটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে প্রতিরোধ করা৷ ফগিং মেশিন দিয়ে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা৷ সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল এর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা৷ স্কুল-কলেজগুলোতে আমাদের বিশেষজ্ঞরা গেছেন, তাঁদের বুঝিয়েছেন, কলেজগুলোতে আমরা ব়্যালি বের করেছি৷ অর্থাৎ আমাদের নাগরিকদের এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য যা করার, আমরা সেটা করেছি৷ তার সঙ্গে আমাদের মশা নিধনের যে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম' সেটাও করেছি আমরা৷ 

মেয়র সাঈদ খোকন

মশা নিধনে আপনাদের যে বাজেট থাকে সেটা কি যথেষ্ট?

গত বছর আমাদের দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ছিল ১১ কোটির বেশি৷ কিন্তু চিকুনগুনিয়ার কারণে আমাদের সেই বাজেট বাড়াতে হয়েছে৷ প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে৷ সম্প্রতি আমি নতুন বছরের বাজেট ঘোষণা করেছি৷ সেখানে মশা নিধনে বাজেট রাখা হয়েছে ৩০ কোটি টাকার মতো৷ পাশাপাশি আমরা ‘হটলাইন' চালু করেছি৷ আমাদের নাগরিকরা যাতে ফোন করে সেখানে পরামর্শ চাইতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কেউ সহযোগিতা চাইলে আমাদের ডাক্তাররা বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন৷ ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে এসএমএস-এর মাধ্যমে বিষয়টা জানানো হয়েছে৷ এর মধ্যে আমরা ৫৫ হাজার ২১২টি কল রিসিভ করেছি৷ ইউনিক কলারের সংখ্যা ৩৬ হাজার ২৫৮৷ ১ হাজার ২১ জন হোম সার্ভিসের জন্য রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে৷ আমাদের ডাক্তার ৪৩৫ জনকে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়েছেন৷ এছাড়া ২৩৭ জন টেলিফোনে সেবা নিয়েছেন৷

এই প্রক্রিয়াটা শুরু করতে কি আপনাদের দেরি হয়েছে যায়নি?

হ্যাঁ, এটা আপনি বলতেই পারেন৷ এর জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় দায়ী৷ এর মধ্যে একটা হলো – আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি বা কোনো ধারণা ছিল না৷ এই চিকুনগুনিয়া নামটার সঙ্গে দেশবাসী যেমন পরিচিত ছিল না, আমি নিজেও গত মে মাসের আগে এর সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না৷ মে মাসের প্রথম দিকে যখন এটা নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়, তখন আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে ফোন করে বিষয়টা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি৷ তখন তিনি আমাকে জানান, তাঁরা একটা সেমিনার করবেন যেখানে বিশেষজ্ঞরা বিষয়টা নিয়ে জানাবেন৷ তাঁরা সেই সেমিনার করেন, আমরাও তাঁদের সঙ্গে ছিলাম৷ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি৷ এরপর কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিই৷ এর মধ্যে রমজান চলে আসে৷ আপনারা জানেন, রমজানে আমাদের ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণসহ আরো অনেক কিছু থাকে৷ এর মধ্যে ন'দিনের ছুটি ছিল৷ ওই ন'দিন সব অফিস-আদালত বন্ধ ছিল৷ সবকিছু মিলিয়ে জোরালো কার্যক্রম নিতে আমাদের একটু দেরি হয়ে গেছে৷ এখন আমরা প্রত্যেক নাগরিকের ডোর-টু-ডোর সেবা দিচ্ছি৷ 

অভিযোগ আছে, মশা নিধনের ওষুধে ভেজাল দেয়া হয়৷ পাশাপাশি মশা নিধনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ঠিকমতো মনিটরিং করা হয় না...

এই অভিযোগটা আছে, পাশাপাশি আরেকটা অভিযোগও আছে৷ একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি টেলিভিশনে বলেছেন, মশার ওষুধ ছিটালে কেরোসিনের গন্ধ বের হয়৷ এটা কিন্তু সাধারণ নাগরিকরা বলেন৷ আরেকটা অভিযোগ হলো, ওষুধে পানি মেশানো হয়৷ উড়ন্ত মশাগুলো মারার জন্য ডাব্লিউএইচও-র একটা প্রেসকিপশন আছে৷ সেটা হলো, ৯৯ দশমিক ৪ শতাংশ কেরোসিন ও পয়েন্ট ৬ শতাংশ টেট্রামাইসিন মিশিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়৷ এই ওষুধটা যখন স্প্রে করা হয়, তখন তো কেরোসিনের গন্ধ বের হবেই৷ আর লারভিসাইটের ব্যাপারে ১০ লিটার পানিতে মাত্র ৬ মিলিমিটার ওষুধ দিয়ে এটা তৈরি করা হয়৷ এটা কিন্তু ডাব্লিইএইচও-র প্রেসকিপশন৷ আসলে পানি মেশানো ছাড়া এই ওষুধ তৈরিই করা যাবে না৷ আসলে ওষুধ কী দিয়ে তৈরি হয়, সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে এই ধরনের অভিযোগ আসে৷ আসলে সাধারণ মানুষ তো সবকিছু জানবেন না, তাঁদের জানার কথাও না৷ এটা তাঁদের কোনো দোষও না৷

শুধু তো মশা মারলেই হবে না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও তো গুরুত্বপূর্ণ, তাই না?

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে৷ বিশেষ করে গণমাধ্যমের আলোচনা-সমালোচনায় আমাদের দু'টি দিক খুবই কাজে লেগেছে৷ গণমাধ্যমের ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনায় আমাদের কাজ আরো দ্রুত ও বেগবান হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় যেটি হয়েছে, গণমাধ্যমের এই আলোচনার কারণে নাগরিকগণ অনেক সচেতন হয়েছে৷ তাঁরা সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন৷ আপনারা দেখেন প্রাকৃতিক নিয়মেই একটা রোগ-ব্যাধি শুরু হলে কিছুদিন পর সেটা দুর্বল হতে শুরু করে৷ এর সঙ্গে আমাদের কার্যক্রমের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব একেবারেই নীচে নেমে এসেছে৷

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি? আর আপনাদের সঙ্গে সমন্বয়টা বা কেমন?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দু'টি সভা ডেকেছিল৷ আমরা সেখানে গেছি৷ আমাদের কাছে মতামত চেয়েছিল৷ তাই আমরা আমাদের কথা সেখানে বলেছি৷ আমি যতটুকু দেখেছি, তারা নিজস্বভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷

স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো এ ব্যাপারে আপনাদের অভিযুক্ত করেছেন...

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিনিয়র মন্ত্রী৷ উনি যদি কিছু বলে থাকেন, তাহলে আমাদের সেটাই করা উচিত৷ তাঁর পরামর্শে আমাদের কার্যক্রম আরো বেগবান হবে৷ তিনি যদি কোনো গাইডলাইন দিয়ে থাকেন, সেটা ফলো করা আমাদের কর্তব্য৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য