1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিও কি জিততে পারতো ট্রাম্প?

১৫ নভেম্বর ২০১৬

জার্মান রাজনীতির এমন কিছু গুণগত বৈশিষ্ট্য আছে, যাদের কল্যাণে এ দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কোনো রাজনীতিকের উদয় ও উত্থান সম্ভব নয়, বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের জেফারসন চেজ, যিনি নিজে একজন প্রবাসী মার্কিন নাগরিক৷

https://p.dw.com/p/2Si7P
জার্মানিতেও কি ট্রাম্প জিততে পারতেন?

চেজ লিখছেন: ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর জার্মান বন্ধুবান্ধবদের কাছে আমার মতামতের কদর বেড়ে গিয়েছিল, কেননা আমি জার্মানি প্রবাসী মার্কিন নাগরিক৷ ট্রাম্পের মতো কেউ যে ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে উঠতে পারেন, জার্মানদের কাছে তা একটা দুঃস্বপ্নের মতো৷ কাজেই আমাকে যে দু'টো প্রশ্ন বারংবার শুনতে হয়েছে, সে দু'টি হলো – ‘‘অ্যামেরিকায় এটা ঘটল কিভাবে?'' আর ‘‘এটা কি এখানেও ঘটতে পারে?''

বাকি ইউরোপের মতো জার্মানিতেও পপুলিস্ট বা লোকানুবর্তী দক্ষিণপন্থি রাজনীতি ক্রমেই আরো বিস্তার লাভ করছে, এএফডি রাজনৈতিক দল ও পেগিডা আন্দোলন যার প্রমাণ৷ জার্মান জনগণের কিছু কিছু অংশ নিঃসন্দেহে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ সন্তুষ্ট নয়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কারোর সাফল্যের সম্ভাবনা কম, বলে আমি মনে করি৷ তার একটি কারণ হলো, জার্মান রাজনৈতিক দলগুলি উচ্চ আসনের জন্য যেভাবে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন করে থাকে৷

যুক্তরাষ্ট্রে যে কেউ ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান হিসেবে নিজের নাম লিখিয়ে রাজ্য পর্যায়ের প্রাইমারিগুলিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন৷ জার্মানিতে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের কনভেনশনে প্রার্থী মনোনয়ন করে বটে, কিন্তু দলীয় সম্মেলনে শুধুমাত্র অ-নির্বাচিত প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন৷ দলের নেতৃস্থানীয় সদস্যরাই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলির জন্য প্রার্থী নির্বাচনে ভূমিকা নিতে পারেন৷ কাজেই জার্মানিতে প্রার্থীরা তাদের দলের মূল ধারার সঙ্গে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত৷ ওদিকে ট্রাম্প রাজনীতির সঙ্গে আদৌ যুক্ত না হয়ে, এমনকি রিপাবলিকান দলেও ‘আউটসাইডার' হয়ে থেকে স্রেফ ঘোষণা করেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পাবার চেষ্টা করবেন – জার্মানিতে যে কথা ভাবাই যায় না৷

একটি পন্থা অবশ্য থেকে যাচ্ছে: ধরে নেওয়া যাক ‘জার্মান ডোনাল্ড' একজন নাম-করা সেলিব্রিটি; সেক্ষেত্রে তিনি একটি নতুন দল গঠন করতে পারেন কিংবা কোনো সাম্প্রতিককালে সৃষ্ট দলের চাঁই হয়ে উঠতে পারেন – যেমন এএফডি দলের৷ অ্যাডল্ফ হিটলার ঠিক এভাবেই ন্যাশনাল সোশ্যালিস্টদের নেতা হয়ে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান শুরু করেন, যা থেকে তিনি ১৯৩৩ সালে জার্মান চ্যান্সেলরের পদে উন্নীত হন৷

কিন্তু আমাদের ‘জার্মান ডোনাল্ড' কোনো প্রথা ও ঐতিহ্যবর্জিত ভুঁইফোড় দলের হয়ে একদিন জার্মান চ্যান্সেলরের পদ অলঙ্কৃত করতে পারবেন, এটা ভাবা বৃথা৷ জার্মান নির্বাচন হয় ‘প্রোপোর্শনালিটি' বা ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে৷ এখানে কোনো ভোটই মাঠে মারা যায় না৷ এছাড়া জার্মানিতে বহুদলীয় নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো শুধু দু'টি দল নয়৷ এদেশের নির্বাচন পদ্ধতিতে কোনো দলের পক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়াটা খুবই বিরল; ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ৬৭ বছরের ইতিহাসে  ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১, শুধুমাত্র এই একটি কর্মকালে সিডিইউ-সিএসইউ দল একা শাসন চালাতে পেরেছে৷

‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' প্রণালীর সঙ্গে মার্কিন প্রথার মূল তফাৎ হলো এই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন প্রার্থী সাকুল্যে বেশি ভোট পেলেও, নির্বাচনে পরাজিত হতে পারেন৷ এবারেও হিলারি ক্লিন্টন বস্তুত ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন: ক্লিন্টন পেয়েছেন ৪৭.৭ শতাংশ ভোট, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৫.৫ শতাংশ ভোট৷ ট্রাম্প যা জিতেছেন, তা হলো ইলেক্টোরাল কলেজ৷ এই ইলেক্টর-ভিত্তিক নির্বাচন প্রণালীর সুবিধা হলো এই যে, এর ফলে ছোট ছোট এলাকাগুলির মানুষজনের মতামতও গুরুত্ব পায়, শুধু নিউ ইয়র্ক কিংবা ক্যালিফর্নিয়ার মতো বড় শহরগুলি নয়৷ তা সত্ত্বেও বিগত কয়েক দিনে আমি আমার বন্ধু-বান্ধবদের বলতে বাধ্য হয়েছি যে, জার্মানরা যেভাবে তাদের সর্বোচ্চ নেতাদের নির্বাচন করেন, সে পদ্ধতি সুপারিশ করা চলে৷

জেফারসন চেজ/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান