1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তানজানিয়ায় জীবন বাঁচাতে এসএমএস

২৯ জুন ২০১০

ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে এবার ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ফোন৷ তানজানিয়া ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিহত করতে হাতে নিয়ে একটি প্রকল্প৷ নাম দেয়া হয়েছে এসএমএস ফর লাইফ৷

https://p.dw.com/p/O4ld
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লু বুশ তানজানিয়া সফরকালে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের উদ্যোগ সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছিলেনছবি: AP

এই প্রকল্পের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস, মোবাইল সেবাপ্রদানকারী সংস্থা ভোডাফোন এবং কম্পিউটার নির্মাতা আই বি এম৷

আফ্রিকা মহাদেশে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা অর্থাৎ এনজিও কাজ করে যাচ্ছে দশকের পর দশক ধরে৷ ম্যালেরিয়ার ওষুধ বের হয়েছে অনেক আগেই কিন্তু সেসব ওষুধপত্র সুলভে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না৷ পরিবহন একটি বড় সমস্যা এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর হেল্থ সেন্টার৷ এসব সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসা করা হয় কিন্তু কোন্ ওষুধ কি পরিমাণে আছে বা কোন্ ওষুধটি নেই তার সঠিক হিসাব কেউই জানেনা৷

তানজানিয়ায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতি বছর৷ বিশেষ করে গ্রামে এ মৃত্যুর হার অনেক বেশি৷ এর মূল কারণ হল গ্রামে যে সব হেল্থ সেন্টার বা ক্লিনিক থাকে সেগুলো ভালভাবে রোগীদের চিকিৎসা করতে সক্ষম নয়৷ যে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে তার নাম ‘স্টক আউট' অর্থাৎ কোন ওষুধ নেই বা মজুদ ওষুধ শেষ৷ তানাজনিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ ডেভিড মোয়াকিউসা এ সমস্যা সম্পর্কে বেশ ভালভাবেই অবহিত৷ তিনি জানালেন, ‘‘এই সমস্যার কথা আমাকে সংসদে যেয়েও শুনতে হয়– ‘প্রয়োজনীয় ওষুধ শেষ'৷ আমাদের একটি সংস্থা রয়েছে যাদের কাজ বিদেশ থেকে ওষুধ দেশে আমদানি করা৷ সেই সংস্থার হাতেই দায়িত্ব থাকে ওষুধ স্টক করে রাখার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ পত্র বিলি করার৷ সবাইকে হাতে হাতে ওষুধ দেওয়া হয় না৷ ওষুধ বিতরণ করা হয় জেলা পরিষদে, হাসপাতালগুলোতে এবং ওষুধের দোকানগুলোতে৷ তবে গ্রাম পর্যায়ে হাসপাতাল এবং ডিসপেন্সারিতেওষুধ পত্র বিতরণের দায়িত্বে থাকে জেলা পরিষদের সদস্য৷ ''

জানানো হয়েছে, জেলা পরিষদের সদস্য কখনোই জানতে পারেন না তার এলাকায় কোন্ কোন্ ওষুধগুলো মজুদ রয়েছে৷ প্রায়ই দেখা গেছে একটি হেল্থ সেন্টারে যদি সব ধরণের ওষুধ এক শিশি বা এক পাতা করেও থাকে পাশের হেল্থ সেন্টারে কোন ওষুধই নেই – একেবারে ফাঁকা৷ রোগী আসছে কিন্তু ওষুধের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না৷ ফোন বা ইন্টারনেট না থাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য কোন সংবাদও পাঠানো যাচ্ছে না৷

প্রকল্পের শুরু যেভাবে

তানজানিয়ায় এক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে মোবাইল ফোন৷ মোবাইল ফোনের সাহায্যে প্রতিটি হেল্থ সেন্টার, এবং হাসপাতালের অষুধের প্রয়োজনীয়তা জানা এবং দ্রুত ওষুধ পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ এ লক্ষ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে একটি প্রকল্প – নাম এসএমএস ফর লাইফ অর্থাৎ জীবনের জন্য এসএমএস৷ একটি এসএমএস পাঠানো হলে সঙ্গে সঙ্গে তা ন্যাশনাল ম্যালেরিয়া কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কাছে পৌঁছে যাবে৷ এই প্রকল্পের মূল উদ্যাক্তা জিম ব্যারিংটান৷ তিনি বললেন, ‘‘ দু বছর আগে এই বুদ্ধিটি আমার মাথায় আসে৷ তখন আমি নোভার্টিসের চিফ ইনফরমেশন অফিসার৷ আমাদের একটি আইটি কনফারেন্স চলছিল৷ আমরা সিলভিও গ্যাব্রিয়েলকে আমন্ত্রণ করি৷ তিনি ম্যালেরিয়া ইনিশিয়েটিভ গ্রুপের প্রধান ছিলেন৷ তিনি বক্তব্য শেষ করেন এই বলে যে – আমরা প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য ওষুধ সরবরাহ করে থাকি কিন্তু তারপেরও প্রতিদিন তিন হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে৷ একজন আইটি বিশেষজ্ঞ হয়ে যে বিষয়টি আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছিল না তা হল – নিরাময়ের জন্য ওষুধ থাকতেও কেন মানুষ মারা যাচ্ছে ?''

সাহায্য সহযোগিতা চারপাশ থেকে

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকল্পের নাম ‘রোল ব্যাক ম্যালেরিয়া' অর্থাৎ ম্যালেরিয়াকে হটিয়ে দেওয়া৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করতে তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে৷ আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস, মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী সংস্থা ভোডাফোন এবং কম্পিউটার নির্মাতা কোম্পানি আই বি এম৷

তানজানিয়ায় মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে ম্যালেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আফ্রিকায় প্রতি পাঁচ জন শিশুর মধ্যে একটি শিশু ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়৷ জিম ব্যারিংটন এবং তার অন্যান্য সহকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এই রোগ প্রতিরোধ করতে৷ প্রায় এক বছর সময় লেগেছে প্রকল্পটি দাঁড় করাতে ৷ মোবাইল ফোনে দেখা যাবে এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে ম্যাপ, মোবাইল ফোনে আসবে মূল তথ্য কেন্দ্র থেকে ওষুধ সংক্রান্ত নানা খবর৷ এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম৷ এই পাইলট প্রকল্পের অধীনে রয়েছে প্রায় ১০০ টি হেল্থ সেন্টার এবং হাসপাতাল৷ তিনটি জেলার ২২৬ টি গ্রাম প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদন: আবদুল্লাহ আল-ফারূক