1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুর্কি এবং আরব মেয়েদের ফুটবল প্রীতি

১৯ জুন ২০১০

জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অভিবাসীদের মধ্যে ফুটবলপ্রীতি চোখে পড়ার মত৷ প্রায় সবাই ফুটবলে মেতে রয়েছে৷ মেয়েরাও এগিয়ে রয়েছে ফুটবল খেলায়৷

https://p.dw.com/p/NxIM
জার্মানির মহিলা ফুটবলে জায়গা করে নিচ্ছে অনেক বিদেশী বংশোদ্ভুত নারীছবি: AP

বার্লিনে অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছে পোলিশ, রুশ, তুর্কি এবং আরব বংশোদ্ভূত মানুষ৷ জার্মানিতে থাকার কারণেই হয়তো সবার মধ্যে ফুটবলের প্রতি দুর্বলতা জন্মে গেছে৷ শ্প্রে নদীর তীরে প্রায় প্রতিটি ফুটবল ক্লাবেই দেখা যায় দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের ভিড়৷ এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বড় ‘তুর্কিয়েম' অর্থাৎ ‘আমার তুরস্ক' ফুটবল ক্লাব৷ এই ক্লাবে রয়েছে প্রায় চারশ' খেলোয়াড়৷ এরা এসেছে ২৫টি বিভিন্ন দেশ থেকে৷ এই দলে মেয়েরাও ফুটবল খেলছে৷ তবে অভিবাসী অনেক বাবা-মায়েরাই পছন্দ করছেন না মাঠে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও ফুটবল খেলুক৷ রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসা মেয়েরা তারপরেও ফুটবলে মেতে থাকতে চায়৷

Albanien Frauen Fußball Tirana
আলবেনিয়ার জাতীয় দলছবি: DW/Arben Muka

বার্লিনের শ্যোনেব্যার্গ এলাকা৷ এখানে অভিবাসীদের বসবাস বেশি৷ দশ-বারো জন মেয়ে ফুটবল খেলছে৷ বেশিরভাগই মেয়েই তুরস্ক অথবা আরব দেশের নাগরিক৷ জেসিকা মনসুর বলল, ‘‘আমার বাবা সবসময়ই ফুটবল খেলা নিয়ে হাসাহাসি করে৷ আমাকে ক্ষেপায়৷ বাড়ি ফিরলেই বলে, ‘এইতো এসে গিয়েছে আমাদের ফুটবলার! জানতে চাইছি, আমাদের ফুটবলারের আবার ট্রেনিং কবে?' আমার মাও এর বিরুদ্ধে৷ মা সরাসরি আমাকে নিষেধ করেন, ‘তুমি ট্রেনিং-এ যেতে পারবে না৷ বাড়িতে অনেক কাজ, এগুলো কি সব আমি একা করবো? এখন কোথাও যাওয়া চলবে না৷''

জেসিকা মনসুর যে ক্লাবে খেলছে, তার নাম ‘তুর্কিয়েমস্পর'৷ এই ক্লাবে মেয়েরাই খেলে৷ ১৭ বছরের জেসিকাকে তার শখের খেলা টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়তে হয়৷ জেসিকার বান্ধবী তুর্কি বংশোদ্ভূত হুলিয়া কায়াও বলল একই কথা৷ কায়া জানাল তার সমস্যার কথা, ‘‘ব্যাপারটি এরকম: বাবা-মায়েরা মনে করে, একটি মেয়ে শর্ট্স পড়ে মাঠে দৌঁড়াচ্ছে – এটা ভাবা যায় না৷ এসব কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়৷''

Bilder zum Frauenfußballcamp in Leipzig
লাইপজিগে মহিলা ফুটবল ক্যাম্পিং এ অংশ নেয় অনেক মুসলিম ফুটবলারছবি: eurient e.V.

আরো মেয়ে ফুটবলার চাই – ট্রেনার দোগান

তেত্রিশ বছর বয়স্ক ফুটবল ট্রেনার মুরাদ দোগান জানান, ফুটবলে আগ্রহী মেয়ে খুঁজে পেতে তাঁকে ভীষণ বেগ পেতে হয়৷ তাঁর দলে সবসময়ই মেয়ে ফুটবলারের প্রয়োজন৷ জার্মান-তুর্কি বংশোদ্ভূত হয়েও প্রায় সব বাবা-মায়েরাই চায় তুর্কি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অনুযায়ী ছেলে-মেয়েদের বড় করতে৷ তিনি বললেন,‘‘ বাস্তব সত্য হল, বেশির ভাগ তুর্কি পরিবারই তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে এসেছে৷ ছোট ছোট গ্রাম থেকে তারা একেবারে সরাসরি বার্লিনের মত বিশাল এবং অত্যন্ত আধুনিক শহরে এসে পড়েছে৷ তাই খুব দ্রুত এদের কাছ থেকে তেমন কোন পরিবর্তন আশা করা উচিত নয়৷ পাঁচ, দশ বা কুড়ি বছরে কোন পরিবর্তন আসবে না৷ এই পরিবর্তন আসবে কয়েক প্রজন্ম পর৷ সমস্যা হল, একটি মেয়ে যখনই সাবালিকা হয়, তখনই রক্ষণশীল পরিবারের বাবা-মায়েরা মনে করে, মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত৷ এসব বাবা-মাকে দোষ দেওয়া যায় না৷ এদের কাছে ফুটবল কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে হবে না৷ সেই তুলনায় পড়াশোনা করা বা নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করাকেই অনেক বাবা-মা প্রাধান্য দেয়৷

ফুটবলের মাঠে বিদেশি বৈরিতা

তবে এসব মেয়েরা শুধু বাবা-মা বা পরিবারের সঙ্গেই দ্বন্দ্বে লিপ্ত নয়৷ অনেক ফুটবল দর্শক বা ফুটবলপ্রেমী রয়েছে, যারা জার্মান দলে বিদেশি খেলোয়াড় দেখতে চায় না৷ এরা সবসময়ই কটুক্তি করে৷ বিদেশি বৈরিতা ফুটবলের মাঠেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ জেসিকা বলল, ‘‘বিপক্ষ দলের অনেক খেলোয়াড়ের বাবা-মা খেলা দেখতে আসে৷ আমরা ভাল খেললেই তখন তারা চিৎকার করে আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে৷ আমরা কেন জার্মানিতে এসেছি, আমাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত – এসব৷ খেলার মাঝখানে না চাইলেও আমাদের এগুলো শুনতে হয়৷ তবে আমরা কোন ধরণের প্রতিবাদ করি না৷ আমরা বিদেশি, আমরা তুর্কি – সেজন্য আমরা গর্বিত৷ আমরা ভাল ফুটবল খেলি – সে জন্য তো বটেই! ''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন