1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘...তোমার কথা বলা যেন মধুবালা, হাঁটাচলা সোফিয়া লরেন...'

৬ মে ২০১১

অঞ্জন দত্তের গানেও এভাবে ঘুরেফিরে এসেছিলেন চলচ্চিত্র জগতের ইটালীয় দেবী বলে খ্যাত সোফিয়া লরেন৷ সম্প্রতি এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দিল অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস৷

https://p.dw.com/p/11ARa
রূপালি পর্দার দেবী সোফিয়া লরেনছবি: AP

গত ৪ঠা এপ্রিল এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেখানো হলো তাঁর অভিনিত ভিত্তোরিও ডি সিকার ‘টু ওমেন' ছবিটির অংশবিশেষ৷ ১৯৬১ সালে এই ছবির জন্যই প্রথমবার অস্কার জিতেছিলেন সোফিয়া৷ অবশ্য, পরবর্তীতে ডি সিকা পরিচালিত ‘ম্যারেজ ইটালিয়ান স্টাইল'-এ অভিনয়ের জন্যও অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি৷ এ বছর তাঁর অস্কার জেতার ৫০ বছর পূর্তি৷ বলা বাহুল্য, অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে মর্যাদাকর পুরস্কার সেই অস্কারেরই আয়োজক৷ তাই বুধবারের অনুষ্ঠানে সোফিয়ার পাশে উপস্থিত ছিলেন তাঁর অসংখ্য বন্ধু ও সহকর্মী৷ বিলি ক্রিস্টাল, জন ট্রাভোল্টা, এভা মেন্ডেস – আরো কতো কে!

পুরস্কার পেয়ে ৭৬ বছর বয়স্ক সোফিয়া লরেন বলেন, ‘‘আমি এক কথায় আমার আনন্দ প্রকাশ করবো কীভাবে? তবে যেদিন অস্কার নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিলাম – তারপর যে ৫০ বছর পার হয়ে গেছে – সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে৷'' তবে এটাই প্রথম নয়৷ চলচ্চিত্রে অনন্য সাফল্য ও অবদান রাখার জন্য ১৯৯০ সালেও সোফিয়া লরেনকে একটি সম্মাননা পুরস্কারও দেয় অস্কার কর্তৃপক্ষ৷

Flash-Galerie Golden Globe Awards Sophia Loren
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ‘গোল্ডেন গ্লোব’ পুরস্কারের অনুষ্ঠানে সোফিয়া লরেনছবি: AP

জন্ম ও বড়ো হওয়া

১৯৩৪ সালে রোমের একটি হাসপাতালের দাতব্য ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া৷ শোনা যায়, মা রোমিলদাকে বিয়ে করতে আগেই অস্বীকার করেছিলেন বাবা রিকার্ডো৷ তাই ২০শে সেপ্টেম্বর জন্মের ক'দিন পরই, তাঁদের আশ্রয় নিতে হয়েছিল ইতালির একটি বস্তিতে৷ তখন অবশ্য তাঁর নাম ছিল সোফিয়া সাইক্লোন৷

সে সময় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটে মা এবং মেয়ের৷ আর সেই অবস্থা অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে৷ সোফিয়ার কথায়, ‘‘বেশির ভাগ সময়ই না খেয়ে কাটাতে হতো আমাদের৷ মা আর ছোটবোন মারিয়ার মুখে সব সময়েই থাকতো বিষন্নতার ছায়া৷''

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় খেতাব ও পন্টির সঙ্গে পরিচয়

এ অবস্থার পরিবর্তন হয় ১৯৪৮ সালে, সোফিয়ার ১৪ বছর বয়সে৷ সে সময় ইটালির এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লেখান তিনি৷ আপাদমস্তক সুন্দরী সোফিয়া সহজেই পৌঁছে যান ফাইনালিস্টদের মধ্যে৷ তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁর৷ মজার বিষয়, ঐ প্রতিযোগিতাতেই সোফিয়া দৃষ্টি কাড়েন ৩৭ বছর বয়সী চলচ্চিত্র পরিচালক কার্লো পন্টির৷ তিনিই সোফিয়াকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন৷ পরবর্তীতে সেই পন্টিকেই বিয়ে করেন সোফিয়া৷ 

সোফিয়া সাইক্লোন থেকে সোফিয়া লোরেন

চলচ্চিত্রে পা দেয়ার পরই সোফিয়া সাইক্লোন থেকে তিনি সোফিয়া লরেন হয়ে যান৷ ১৯৫২ সালে ‘লা ফ্যাভোরিটা' এবং ১৯৫৩ সালে ‘এইডা' নামের ছবিতে অভিনয়ের পরপরই সোফিয়ার সামনে হলিউডের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়৷ ১৯৫৭ সালে প্রথম অ্যামেরিকান ছবি ‘বয় ইন আ ডলফিন'-এ অভিনয় করেন তিনি৷ সে সময়কার সুপারস্টার ক্যারি গ্রান্টের সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন ‘দ্য প্রাইড অ্যান্ড দ্য প্যাশন' ও ‘হাউসবোট' নামের ছবিতে৷ আর ইটালীয় ছবি ‘লা সাইওসায়ারা'-তে অভিনয় করে ১৯৬০ সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন লরেন৷

Marcello Mastroianni und Sophia Loren
রূপালি পর্দার ডাকসাইটে জুটি মার্চেলো মাস্ত্রোইয়ানি ও সোফিয়া লরেনছবি: Dpa

রূপকথার সতেজ, স্নিগ্ধ সুন্দরী সোফিয়া

ষাট ও সত্তর দশকে সোফিয়া লরেন ছিলেন বিশ্বের জনপ্রিয়তম অভিনেত্রীদের অন্যতম৷ ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় তিনি সমান তালে অভিনয় করেন পল নিউম্যান, মার্লন ব্র্যান্ডো, গ্রেগরি পেক, চার্লটন হিউসটনদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে৷ অস্কার তো বটেই, জিতে নেন পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড৷ তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য হলিউডি ছবির মধ্যে ‘এল সিড', ‘দ্য ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার', ‘অ্যারাবেস্ক', ‘ম্যান অফ লা মাঞ্চা' এবং ‘দ্য ক্যাসান্ড্রা ক্রসিং' অন্যতম৷ তবে আশির দশকের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় কমিয়ে দেন সোফিয়া৷ সময় কাটান স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে৷ তাঁর দুই ছেলে - কার্লো পন্টি জুনিয়র ও এডৌরো পন্টি৷

সোফিয়া লোরেন : হার ওন স্টোরি

১৯৮০ সালে সোফিয়ার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তৈরি হয় - সোফিয়া লরেন: হার ওন স্টোরি৷ এখানেই অবশ্য শেষ নয়৷ ১৯৯৪ সালে প্রায় ৬০ বছর বয়সে সোফিয়া অভিনয় জগতে ফিরে আসেন৷ ‘প্রিট-আ-পোর্টার' নামের ছবিতে বক্স অফিস কাঁপিয়ে আবারো দশর্কদের মুগ্ধ করেন তিনি৷ এরপর বিচ্ছিন্ন কিছু ছবিতে অভিনয় করলেও মূলত বিরতিতে চলে যান সোফিয়া৷ প্রায় ৫০ বছরের জীবনসঙ্গী কার্লো পন্টিকে হারান ২০০৭ সালে৷ ২০০৯ সালে ড্যানিয়েল ডে-লুইসের বিপরীতে অভিনয় করেন নিজের শেষ ছবি ‘নাইন'-এ৷


অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তবেই বিশ্বসেরা অভিনেত্রীর খেতাব পান সোফিয়া লরেন৷ একেবারে শূন্য থেকে জীবন শুরু করতে হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু তারপরও, নিজের মনোবল, মেধা ও সৌন্দর্যের কারণে বিশ্বের তাবৎ দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেন তিনি, অচিরেই৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন