1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলোর দিশারী ‘বাসক্লিনিক’

আনিয়া পাসেনহাইম/আরবি২০ জানুয়ারি ২০১৪

বিশ্বের আর কোনো শিল্পোন্নত দেশে জন্মের পর এত বেশি শিশুর মৃত্যু হয় না, যেমনটি হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে৷ অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা ও দারিদ্র্যই হলো এর মূল কারণ৷ এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে একটি বেসরকারি উদ্যোগ৷

https://p.dw.com/p/1At3w
বাসক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা চলছেছবি: DW/Antje Passenheim

বাস স্টপ অ্যানেক্সোটিয়া: অ্যামেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনের এক দরিদ্র জনবসতি৷ এই এলাকায় একটি বাস এসে দাঁড়ায় মাঝে মাঝে৷ এক ভ্রাম্যমাণ শিশু ক্লিনিক এটি৷ চিকিৎসক ও নানা ধরনের চিকিৎসার সরঞ্জাম রয়েছে এতে৷ মায়েরা আশেপাশের বাড়িগুলি থেকে ছুটে আসেন তাঁদের অসুস্থ বাচ্চাদের নিয়ে৷ এক মা বলেন, ‘‘আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি৷ দুই মাস ধরে তার কাশি হয়েছে৷'' মায়ের শরীরও অত্যন্ত কাহিল৷ মুখে অল্প কয়েকটি দাঁত৷ পাঁচ মাসের জুলিয়া ২২ বছর বয়সি এই তরুণীর তৃতীয় সন্তান৷ ‘‘আমার তিন ও পাঁচ বছর বয়সি আরও দুই সন্তান রয়েছে'', বলেন এই তরুণী মা৷

রাজধানীর ভুলে যাওয়া অঞ্চল

১৭ বছর বয়সে প্রথম সন্তান হয় তাঁর৷ প্রত্যেকটি মেয়েরই আলাদা আলাদা বাবা৷ মা আবার স্কুলে যাচ্ছেন৷ কোনোরকমে এই ব্যবস্থাটা করতে পেরেছেন তিনি৷ এই অঞ্চলের অসংখ্য সিংগেল বা একক মায়ের একজন তিনি৷ এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই আফ্রো অ্যামেরিকান৷ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের রাজধানীর ভুলে যাওয়া এই অংশে দুই জনের মধ্যে একজন বেকার৷ অনেকেই স্কুলের শিক্ষা শেষ করতে পারেননি৷ এইডস-এর হার এত বেশি যে আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলেও এমনটি দেখা যায় না৷ ১০০ জনে একজন এই ভাইরাস বহন করেন৷ একজন ডাক্তারকে পারিশ্রমিক দিয়ে রাখাটা অন্ধকারাচ্ছন্ন এই এলাকায় রীতিমত বিলাসিতা৷

Armut macht krank
বাসক্লিনিকে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন এই মা-মেয়েছবি: DW/Antje Passenheim

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে একটি বাসকে অতি আধুনিক এক ‘হাসপাতালে' পরিণত করা হয়েছে৷ সমস্যাপূর্ণ সাতটি এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করে এটি৷ সাদা রঙের এই যানটি বিষন্ন এই অঞ্চলে অনেকটা ‘উফো'-র মতোই অচেনা এক বস্তু মনে হয়৷ আশার আলোও জাগায়৷ অ্যানেকোসটিয়া যেন এক উত্তপ্ত জনবসতি৷

মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে

ওয়াশিংটনে গত কয়েক বছরে মৃত্যুর হার কমে ৫০০ থেকে ৯০ হয়েছে৷ তবে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের আবার বেশিরভাগই ঘটেছে অ্যানেকোস্টিয়ায়৷

বাসটির ভেতরে কয়েকটি বুথ বানিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জায়গা তৈরি করা হয়েছে৷ একটি দৃশ্যের কথা কল্পনা করা যাক: বাসের ভেতরে সরু করিডোরের ওয়েটিং রুমটা সবসময় রোগীতে ভর্তি থাকে৷ এক অল্পবয়সি ডাক্তার জুলিয়াকে পরীক্ষা করতে এক বুথের দরজা ঠেলে বের হয়ে আসেন৷ করিডোরে একটি ছোট ছেলেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ আর একটি বুথে এক মা নিজের স্বাস্থ্যটাও পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন৷

২০ বছর ধরে সাদা রঙের ‘রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড কেয়ার মোবাইল প্রোগ্রাম' অ্যানেকোস্টিয়াতে যাতায়াত করছে৷ দাতাদের সহায়তায় চলে এর কার্যক্রম৷ এ পর্যন্ত ৫০,০০০ রোগী চিকিৎসা পেয়েছেন এই কর্মসুচি থেকে৷ বলেন প্রকল্পটির প্রতিষ্ঠাতা শিশু চিকিৎসক মাথিউ লেভি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এই প্রকল্প শুরু করেছি, যেহেতু শহরের এই অংশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্যটা বেড়ে যাচ্ছে৷ আমরা এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে চাই৷''

Armut macht krank
সবার পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় নাছবি: DW/Antje Passenheim

ধীর গতিতে চলা স্বাস্থ্য সংস্কার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার স্লথ গতিতে চলা স্বাস্থ্যপরিষেবা সংস্কার মাঝে মাঝেই হোঁচট খাচ্ছে৷ আশা করা যায় অচিরেই সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করা সম্ভব হবে৷ আর তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক বিরাট বাধা দূর হবে৷ বলেন জর্জ টাউন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের প্রফেসর ম্যাথিউ লেভি৷ তবে অনেক বাধা রয়েছে সামনে৷ ওয়াশিংটনে ধনী দরিদ্রের বিরাট ফারাক একটা বড় অন্তরায়৷ কোনো কোনো এলাকায় শিশু মৃত্যুর হার উন্নয়নশীল দেশের সমতুল্য৷ এই মত প্রকাশ করেন ড. লেভি৷

‘সেভ দ্য চিল্ডরেন' সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, অ্যামেরিকায় প্রতিবছর যত শিশু জন্মের পরপরই মৃত্যু বরণ করে, সেরকম কোনো শিল্পোন্নত দেশে দেখা যায় না৷ এই হার অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি৷ অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা ও মন্দ শিক্ষা এর মূল কারণ৷ এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ড. লেভি ও তাঁর টিম৷

বিশেষ অসুখ নিয়ে আসেন অল্পবয়সিরা

এইডস, স্থূলতা, ডায়বেটিস, হাঁপানি, বিশেষ করে এসব অসুখ-বিসুখ নিয়েই তাঁর কাছে আসে অল্পবয়সি রোগীরা৷ এছাড়া মানসিক দিক দিয়েও সহায়তা করা হয় অনেককে৷ ‘‘আতঙ্ক, ডিপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে আমরা তাদের সমাজকর্মীদের কাছে পাঠাই'', জানান ড. লেভি৷

Armut macht krank
প্রকল্পটির প্রতিষ্ঠাতা শিশু চিকিৎসক মাথিউ লেভিছবি: Matthew Levy

স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষেধকমূলক চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় বসু এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্টাকলারের সমীক্ষার ফলাফলে জানা গিয়েছে: দারিদ্র্য মানুষকে অসুস্থ করে তোলে৷ সঞ্জয় বসু জানান, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অ্যামেরিকায় আত্মহত্যার হারও বেড়ে গিয়েছে৷ সুইডেনের মতো দেশগুলি নির্দিষ্ট সামাজিক নীতি দ্বারা এই অবস্থার রাশ টানতে পেরেছে৷

নতুন নতুন ব্যাধিও মাথা চাড়া দিচ্ছে

আর্থিক দুর্বলতার কারণে নতুন নতুন ব্যাধিও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে অ্যামেরিকায়৷ দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে অনেকই বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের সেই পরিত্যক্ত বাসস্থান ও বাগানে হঠাৎ করেই অচেনা জীবাণু আস্তানা গেড়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি৷ যেমন ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, যেগুলি মশা দ্বারা সংক্রমিত হয়৷

শিশু চিকিৎসক লেভির কাছে বিষয়টি স্পষ্ট: দারিদ্র্য পীড়িত এলাকার পরিবারগুলির প্রয়োজন সঠিক পরামর্শ ও মানসিক সহায়তা৷ তাঁর দেশটির সামাজিক নেটওয়ার্কে রয়েছে অনেক ছিদ্র৷ সবার জন্য স্বাস্থ্য বিমা হয়ত কিছু কিছু ছিদ্র বন্ধ করতে সাহায্য করবে৷ তবে তাঁর ‘শিশু-ক্লিনিকটি'-কে পার হতে হবে এখনও আরো অনেকটা পথ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য