1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুর্গাপুজোয় সুন্দরবন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ

১৫ অক্টোবর ২০১০

সুন্দরবনের অনন্য পরিবেশ এবং তার সংরক্ষণের প্রয়োজন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে অভিনব উদ্যোগ দেখা গেল শারদীয় উৎসবে৷ কিন্তু অসাবধানী পর্যটকরা, যাঁরা জেনে বা না জেনে বনাঞ্চলে দূষণ ছড়ান, তাঁরা কতটুকু বুঝলেন এর গুরুত্ব?

https://p.dw.com/p/Pf6X
দুর্গাপুজাছবি: AP

খাস শহর কলকাতায় সুন্দরবনের গহন ম্যানগ্রোভ অরণ্য৷ নদীর ধারে পলিমাটি ফুঁড়ে উঠে থাকা শ্বাসমূল, গরান, হেঁতালের ঠাসবুনোট জঙ্গলের ভয় ধরানো নিস্তব্ধতা, সব অবিকল উঠে এসেছে দক্ষিণ কলকাতার এক দুর্গাপুজোর মণ্ডপের অঙ্গসজ্জায়৷ যারাই দেখছেন, তারিফ করছেন৷ উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, সুন্দরবনের বিচিত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং তার সংরক্ষণ সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করতেই তাঁদের এই শিল্পভাবনা৷

কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা নেই তো? কারণ সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান সমস্যা এখন পর্যটকরা৷ সমস্যা তথাকথিত ইকো-ট্যুরিজম, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে৷ বললেন দীর্ঘ চার দশক সুন্দরবনের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা সমাজসেবী, পরিবেশবিদ তুষার কাঞ্জিলাল৷ তিনি জানালেন, সজনেখালি এবং তার উল্টোদিকে পাখিরালা এবং দয়াপুর গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রিজর্ট তৈরি হচ্ছে৷ নদীর বাঁধ থেকে যথেষ্ট দূরে পাকা ইমারত তৈরির যে নিয়মকানুন, তার কিছুই তারা মানছে না৷ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই সব রিজর্টগুলিতে না আছে বিদ্যুৎ, না পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহ৷

পর্যটকদের অবকাশযাপন আরামদায়ক করার উপযুক্ত আধুনিক কোনও পরিকাঠামো আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি সুন্দরবনে৷ অন্যদিকে পর্যটকরাও জঙ্গলের পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে আদৌ সচেতন নন৷ বললেন তুষার কাঞ্জিলাল৷ কিছুটা মজা করেই তিনি বললেন, লোকে সুন্দরবনে বাঘ দেখতে যায় কিন্তু তিনি নিজে ৪০ বছরের উপর সুন্দরবনে বাস করেও বাঘ দেখেছেন কেবল চিড়িয়াখানায়৷ সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ তার অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷ যারা সেটা দেখার মন নিয়ে যান, সুন্দরবন তাদের কাছে পর্যটন স্থান৷ কিন্তু লোকে তো যায় উপভোগ করতে৷ তারা জোরে জোরে মাইক বাজায়, নাচানাচি করে৷ তাদের কোলাহলে বন্যপ্রাণীরা বিরক্ত হয়৷

তাহলে কি উৎসবের আঙিনায় পরিবেশ সচেতনতা প্রসারের উদ্যোগ বিফল হবে? না, তা হয়তো নয়৷ সুন্দরবনের আদলে গড়া ওই পুজোমণ্ডপ দেখে বেরোনোর সময় প্রশ্ন করেছিলাম এক দর্শক, রাহুল সেনগুপ্তকে৷ তিনি প্রথমেই ধন্যবাদ দিলেন ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের, যারা থিমের মাধ্যমে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে তুলে ধরেছেন৷ রাহুলের আশা, যে লক্ষ লক্ষ মানুষ উৎসবে সামিল হয়েছেন, তারা এবার সুন্দরবন বেড়াতে যাবেন একটা সচেতন মন নিয়ে৷

পরিবেশ সুরক্ষার ভাবনা যদি সত্যিই এভাবে ছড়িয়ে যায়, তাহলে উৎসব সত্যিই হয়তো বহুজনহিতায় হয়ে উঠতে পারবে৷ বাঁচবে সুন্দরবন, বাঁচবে পরিবেশ৷

প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন