1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের পরিচয় শুধু হিসেব-নিকেশ নয়

২ অক্টোবর ২০১০

ইতিহাসের বিচারে বিশটা বছর কিছুই নয়৷ যারা দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের ২ দশকপূর্তি উপলক্ষ্যে আজও বিভিন্ন ব্যর্থতার সমালোচনা করে চলেছে এবং কোনো সাফল্যকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয়, তাদের একথা মনে রাখা উচিত৷

https://p.dw.com/p/PPu4

পুনরেকত্রীকরণের ২ দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে তথ্য ও পরিসংখ্যানের যেন শেষ নেই৷ আজকের জার্মানির পরিস্থিতি তুলে ধরতে এইসব চুলচেরা হিসাবের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে৷ এর মধ্যে অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, যে গত ২ দশকে কিছু ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এখনো দুই অঞ্চলের মধ্যে কিছু বৈষম্য রয়েছে৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বেকারত্বের হার পশ্চিমের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷ পশ্চিমের মানুষ একই কাজের জন্য পূবের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আয় করেন৷ বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে এই বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে৷ কিন্তু জার্মানি বা জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ সম্পর্কে জানতে হলে এই সব তথ্য-পরিসংখ্যানই কি যথেষ্ট? উত্তর – মোটেই না৷

অভিনব ঐতিহাসিক ঘটনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ হয় নি৷ শুধু তথ্য-পরিসংখ্যানের বিচারে এই প্রক্রিয়ার মূল চরিত্র বোঝা সম্ভব নয়৷ পূবের উন্নয়নের জন্য পশ্চিমের মানুষকে আজও যে বিপুল আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে, তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ কিন্তু অন্যদিকে এটাও ভুললে চলবে না যে পূবের মানুষকে যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা আর যাই হোক মোটেই সহজ নয়৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পেছনে ফেলে তাদের একেবারে নতুন করে জীবন শুরু করতে হয়েছে৷

Deutsche Welle Chefredakteur Marc Koch neu
ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক মার্ক কখছবি: DW

অভিনব এই প্রক্রিয়ার সাফল্য কিন্তু জার্মানির জনমানসে তেমন স্বীকৃতি পায় নি৷ তার বদলে শুধু খুঁত ধরার মানসিকতা দেখা যায়৷ তবে গত ২০ বছর ধরে যেসব অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, তার মূল কারণ স্বার্থের সংঘাত৷ পূব ও পশ্চিম – দুই জায়গায়ই এই সঙ্কীর্ণ মনোভাব দেখা যায়৷ কেউ কখনো ভাবতে পারে নি, যে মাত্র দুই দশকের মধ্যে একেবারে ভিন্ন ও পরস্পরবিরোধী দুই সামাজিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ একাত্ম হয়ে যাবে৷ কেউ যদি আজ দাবি করে, যে ২০ বছর পর জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে কোনোরকম তফাত থাকা উচিত নয়, তাহলে বলতে হয় যে সে এমন এক অভিনব ঐতিহাসিক ঘটনার তাৎপর্যই বুঝতে পারে নি৷

পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় ছিল না

১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবরের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং অনেক পরিস্থিতিরও ভুল মূল্যায়ন হয়েছে৷ তবে একটি বিষয় আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ পুনরেকত্রীকরণের স্থপতিদের হাতে সেসময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোনো সময় ছিল না৷ দুই জার্মানিকে আরও ধীর গতিতে ধাপে ধাপে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসার সময়ও তাদের হাতে ছিল না৷ এমন এক মুহূর্তে তাঁদের ঐতিহাসিক এক সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হয়েছিল, যখন আন্তর্জাতিক স্তরে চির-পরিচিত ক্ষমতার ভারসাম্য আমূল বদলে যায়৷ তাঁরা সেদিন সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন৷ কয়েক বছরের মধ্যে এবং মোটামুটি নির্দিষ্ট ব্যয়ভারের কাঠামোর মধ্যেই পুনরেকত্রীকরণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে যাবে – মানুষের কাছে এমন এক অবাস্তব প্রতিশ্রুতি অবশ্য দেওয়া উচিত হয় নি৷ অথচ এমনটাই বলেছিলেন তৎকালীন পশ্চিম জার্মান চ্যান্সেলার হেলমুট কোল৷ তাঁর এবং বাকি কুশিলবদের সামগ্রিক অবদান ভুলে আড্ডার আসরে আজও শুধু সেই অলীক প্রতিশ্রুতি নিয়েই সমালোচনার ঝড় ওঠে৷

সব অর্থেই জার্মানি পুনরেকত্রীকরণের ফলে লাভবান হয়েছে৷ গত ২০ বছরে এই দেশে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ সমাজ আড়ষ্টতা কাটিয়ে আরও খোলামেলা হয়ে উঠেছে৷ বৈচিত্র্য অনেক বেড়ে গেছে৷ মানুষ আরও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠেছে৷ পরস্পরবিরোধিতা, সামাজিক সংকট সহ বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে আজ খোলামেলা আলোচনা হয়৷ সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করে তা ধামাচাপা না দিয়ে বরং তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলে৷ জার্মানি যেন এক গবেষণাগার৷ ইউরোপের হৃদয়ে অবস্থিত এই সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন, নতুন চ্যালেঞ্জ ও নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে৷ এটাও পুনরেকত্রীকরণের প্রাপ্তি৷ এটাই জার্মানির আজকের বাস্তব – তথ্য-পরিসংখ্যানের মাধ্যমে যা প্রকাশ পায় না৷

লেখক: মার্ক কখ, প্রধান সম্পাদক, ডয়চে ভেলে

অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ