1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধূমপানের ইতিবৃত্ত

২১ জুলাই ২০১০

ইউরোপে ধূমপানের ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো৷ অ্যামেরিকা আবিষ্কারের পর সেখান থেকে তামাকও এসে পৌঁছায় ইউরোপে৷ শুরু হয় ধূমপান৷ একই সাথে শুরু হয়ে যায় ধূমপান নিয়ে বিতর্কও৷

https://p.dw.com/p/OQY2
নাৎসি শাসনামলেও ধূমপানে আসক্তি মোটেই সুনজরে দেখা হোতনাছবি: AP

সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপের দেশগুলি যখন পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত, তখন আর একটা বড় সমস্যাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ আর তা হল ধূমপানে আসক্তি৷ সৈন্যদের মধ্যে দ্রুত সিগারেটের নেশা ছড়িয়ে পড়তে থাকে, সিগারেটের আগুনে কাঠের বাড়িঘরগুলি পুড়ে যাওয়ার আশংকাও বাড়তে থাকে৷ তাই ধূমপান নিষিদ্ধকরণ আইন জারি করা হয় বেশ কিছু দেশে৷ আইন ভঙ্গকারীকে দেয়া হোত কঠোর শাস্তি ৷ কোন কোন দেশে মৃত্যুদণ্ডও বাদ যেত না৷ কিন্তু তামাকের জয়যাত্রা রোধ করা যায়নি তাতেও৷ অবশেষে তামাক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটা আপোশে আসতে হয় কর্তৃপক্ষের৷ এ ক্ষেত্রে তামাক খাতে পাওয়া করটাও কম লোভনীয় ছিলনা৷

বিংশ শতাব্দীতে বিশেষ করে জার্মানিতে নাৎসি শাসনামলে ধূমপানে আসক্তিটা মোটেই সুনজরে দেখা হোতনা৷ সে জন্য ধূমপান বিরোধী নানা আইন কানুনও চালু হয় তখন৷ ধূমপান হয় বাধাগ্রস্ত৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউরোপের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আবার প্রয়োজন হয় তামাকের৷ অ্যামেরিকা থেকে ৯০ হাজার টন তামাক আসে ইউরোপে৷ শক্তিশালী এক তামাক শিল্প গড়ে ওঠে জার্মানিতেও৷ ৭০-এর দশকে প্রথম ধূমপানবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকে জার্মানিতে৷ ৯০-এর দশকে অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য আইন প্রণয়নের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়৷ ১৯৯৮ সালে জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষে আনা ধূমপান বিরোধী একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাভারিয়া রাজ্যের খ্রিস্টীয় সামাজিক দলের জেহোফারের প্রতিরোধে৷ জেহোফার এখন বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী৷ এখন আবার তিনিই ধূমপানবিরোধী কঠোর আইন কানুন প্রণয়নের ব্যাপারে সংসদে উচ্চকন্ঠ৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার কাছে যেটি বেশ সমস্যাজনক মনে হয়, তা হল, কোনো কোনো রাজ্যে রেস্তোঁরার মালিকদের ওপরই ধূমপানের ব্যাপারটা ছেড়ে দেয়া হচ্ছে৷ আবার কোনো কোনো রাজ্যে পাবসহ সব রকম রেস্তোঁরাতেই ধূমপান নিষিদ্ধকরণ আইন তৈরি হচ্ছে৷''

Deutschland Rauchverbot Bahnhof Hamburg
ধূমপান শুধু মাত্র বাইরে - আগামী অগাস্ট মাস থেকে এমনই আইন চালু হচ্ছে জার্মানিতেছবি: AP

২০০৬ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী দলের সাংসদ লোথার বিন্ডিগের আনা ধূমপান নিষিদ্ধ করার একটি প্রস্তাবকে সরকার সমর্থন করেছিল৷ কিন্তু কার্যকর করা সম্ভব হয়নি৷ তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্রিগিটে সিপ্রিস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘টাউন হলে বা স্কুলগুলিতে ধূমপানের ব্যাপারে কী করা হবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্তিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষের নেই৷''

২০০৭ সালে জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা দেশব্যাপী ধূমপানবিরোধী এক ধরনের আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আলোচনায় বসেছিলেন৷ কিন্তু মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি৷ তাই এক এক রাজ্যে এক এক ধরনের ধূমপানবিরোধী আইন চালু রয়েছে এখন৷

সম্প্রতি বাভারিয়া রাজ্যে গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হল, বার ও রেস্তোঁরাগুলিতে ধূমপান একেবারেই নিষিদ্ধ৷ পয়লা আগস্ট থেকে এই নির্দেশটা মেনে চলতে হবে সবাইকে ‘‘ধূমপান শুধু মাত্র বাইরে''৷

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, ধূমপান বিষয়ক আইন রাজ্যসরকারের হাতেই থাকবে৷ বাভারিয়া রাজ্যের স্বাস্থমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এটা একটা বাভারীয় আইন৷ অন্যান্য রাজ্যকে এই ব্যাপারে পরামর্শ দেয়াটা মনে হয় কিছুটা ঔদ্ধত্য হয়ে যাবে৷ তারা নিজেদের ব্যাপারে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে৷''

নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়া রাজ্য ও বার্লিনে অবশ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধূমপান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শিগগিরই৷ উল্লেখ্য যে, আসছে হেমন্তে ধূমপানের আইনটি কিছুটা শিথিল করা হবে বাভারিয়া রাজ্যে৷ এই বছরের অক্টোবর ফেস্টিভ্যালের চত্বরে শেষ বারের মত ধূমপান করা যাবে তখন৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক