1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন পরমাণু নীতিতে ‘ভারসাম্যের চেষ্টা’ করেছেন ওবামা

৭ এপ্রিল ২০১০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নতুন পরমাণু নীতিতে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আদর্শ এবং পরমাণু যুদ্ধাস্ত্রসম্পন্ন বিশ্বের কঠিন বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

https://p.dw.com/p/MpRF
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাছবি: AP

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে, পেন্টাগনের ঘোষিত এই নতুন মার্কিন পরমাণু নীতি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে৷ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নজরদারি সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশ একে স্বাগত জানালেও, এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত ইরান৷

‘পরমাণু বিস্তার রোধ এবং নিরস্ত্রীকরণ আন্তর্জাতিক কমিশন' (আইসিএনএনডি) এর সহ-সভাপতি গ্যারেথ ইভান্স ওবামার এই নতুন পরমাণু নীতিকে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করে একে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান্স রেডিও অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একইসঙ্গে বলেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘোষণায় অল্পের জন্য পিছিয়ে পড়লো যুক্তরাষ্ট্র৷ আরেকটু সামনে অগ্রসর হলেই এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারতো৷''

Luftbild vom amerikanischen Verteidigungsminsterium Pentagon in Washington 2003
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে মঙ্গলবার এ নতুন পরমাণু নীতির ঘোষণা দেওয়া হয়৷ছবি: AP

নতুন পরমাণু নীতিতে ‘‘চরম পরিস্থিতি'' ছাড়া পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে পরমাণু অস্ত্রহীন কোনো দেশ যদি পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা ‘এনপিটি' লঙ্ঘন না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কখনো পরমাণু হামলা চালাবে না যুক্তরাষ্ট্র৷

দ্য টাইমস পত্রিকাকে ওবামা বলেছেন, ‘‘এখন ‘নিউক্লিয়ার পশ্চার রিভিউ'বা এনপিআর-এ-তে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে আপানারা যদি একটি পরমাণু অস্ত্রহীন দেশ হন এবং ‘এনপিটি' মেনে চলেন, তাহলে তার বিপরীতে এই নিশ্চয়তা থাকছে যে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবো না৷''

যুক্তরাষ্ট্রের নিরস্ত্রীকরণ গোষ্ঠীগুলো এবং বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে আরও জোরালো পদক্ষেপসহ কেবলমাত্র পরমাণু অস্ত্রসম্পন্ন দেশের বিরুদ্ধেই হামলার সুযোগ সীমিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছিল৷ কিন্তু, ওবামা প্রশাসনের এনপিআর-এ যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নের জন্য ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার আহ্বানসহ পরমাণু অস্ত্রহীন দেশে হামলা চালানোরও সুযোগ রাখা হয়েছে৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ে ওবামা পরমাণু অস্ত্র নিয়ে যে মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন, তার খুব বেশি কাছাকাছি যেতে পারেননি ওবামা৷ তবে, তা যে কেবল ইচ্ছের অভাব নয় বরং রাজনৈতিক বাস্তবতা সেটাও উল্লেখ করেছেন তারা৷ আরও বৈপ্লবিক পরমাণু নীতি ঘোষণার বিপক্ষে বাধা রয়েছে ওবামা প্রশাসনের মধ্যেই, বাধা রয়ে গেছে মার্কিন সামরিক নেতৃত্বের দিক থেকেও৷ এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপসহ ন্যাটো মিত্রদেশগুলোর জন্য একটি পরমাণু নিরাপত্তা বলয়ের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে - তাও বিবেচনা করা হয়েছে এই নতুন পরমাণু নীতিতে৷

তবে, এ সপ্তাহেই ঝিমিয়ে পড়া স্নায়ুযুদ্ধকালীন শত্রু রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি এবং আগামী ১২ ও ১৩ই এপ্রিল রাজধানী ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরাপত্তা সম্মেলনের সঙ্গে এই পরমাণু নীতিকে মিলিয়ে দেখলে ওবামা প্রশাসনের একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা বেশ স্পষ্টভাবেই চোখে পড়বে৷

Ahmadinejad Interview Iran Präsident
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদছবি: AP

ওদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ নতুন পরমাণু নীতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং এর ‘‘দাঁতভাঙা জবাব'' এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন৷ নতুন নীতিতে ‘‘ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য ব্যাতিক্রমী বিধান থাকবে'' বলে ওবামা যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়াতেই আহমাদিনেজাদের এই হুমকি৷

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বার্তায় ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমি আশা করছি প্রকাশিত ওই মন্তব্যগুলো সত্য নয়...যে তিনি (ওবামা) অ্যামেরিকার কাছে মাথা নত না করা দেশগুলোকে পরমাণু এবং রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন৷''

ওবামাকে উদ্দেশ্য করে আহমাদিনেজাদ আরও বলেন, ‘‘সাবধান৷ আপনি যদি মিঃ বুশের পথ অনুসরণ করেন তাহলে জাতির প্রতিক্রিয়াও সেইরকম দাঁতভাঙাই হবে, ঠিক যেমনটা বুশকে তারা দেখিয়েছিল৷''

প্রতিবেদক : মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়