1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন বছরে ভারতের চিত্রনাট্য

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১ জানুয়ারি ২০১৬

নতুন বছরে ভারতের জাতীয় রাজনীতি কীভাবে আবর্তিত হবে, সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন৷ মোদী সরকার তার স্বপ্ন কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত৷ ভারতের আর্থ-সামাজিক ও পররাষ্ট্রনীতিতে সত্যিই কি হবে কোনো নাটকীয় দিক-বদল?

https://p.dw.com/p/1HWYT
Bildergalerie Kinderarbeit in Indien
ছবি: DW/J. Singh

২০১৬ সালে ভারতের জাতীয় রাজনীতি রাতারাতি সাবালক হয়ে উঠবে – এমনটা কোনো অর্বাচীনও আশা করবে না৷ বরং সংসদের ভেতরে ও বাইরে দলীয় রাজনীতি নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ির ধারাবাহিকতা চলবে৷ অতীত অভিজ্ঞতার সূত্র থেকে বলা যায়, সংসদের অধিবেশন অচল করার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না বিরোধি দলগুলি৷ গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ ইস্যুগুলি পড়ে থাকবে বাক্সবন্দি হয়ে৷ উন্নয়নের কোনো বড় পদক্ষেপ নিতে বাধা আসবে প্রতিপদে৷ যেমন জমি অধিগ্রহণ বিল, পণ্য ও পরিষেবা কর, শ্রমিক আইন সংশোধন ইত্যাদি৷ অর্থাৎ আর্থিক সংস্কার থমকে যাবার সম্ভাবনা আছে, যেটা দিল্লি ও বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর বেশ বড় রকম ধাক্কা খেয়েছে৷ এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কৌশলের ওপর৷ পাশাপাশি কয়েকটি রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে কেন্দ্র ও অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাড়বে দলীয় কোন্দল৷ চলতে থাকবে অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগের কাজিয়া৷ আগামী ফেব্রুয়ারির বাজেট অধিবেশন হবে মোদী সরকারের অর্থনৈতিক অগ্নিপরীক্ষা৷ মনে করা হচ্ছে, এ বছরের বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কর্ম সংস্থান, পরিকাঠামো ও শিল্পায়ন ছাড়া বিশেষ জোর দেয়া হবে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক এবং সেচ তথা কৃষি বিকাশের ওপর৷ বিশ্ব আর্থিক সংকটের চাপে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার প্রভাবিত হবে৷ সরকারের তরফে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার এবং সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান ফলাও করে তুলে ধরা হলেও, সাধারণ মানুষের জীবনে তার ভূমিগত বাস্তবতা নিয়ে থাকবে প্রশ্ন৷

সামাজিক ইস্যু

আশা করা যায়, গোমাংস নিয়ে দাদরি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না৷ মোদী স্বয়ং বুঝেছেন, এতে তাঁর লাভের চেয়ে লোকসান হয়েছে বেশি৷ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা রুখতে এবং মৌল হিন্দুত্ববাদীদের মোকাবিলা করতে মোদী আরও কড়া হতে বাধ্য৷ সন্ত্রাসের পাশাপাশি আরও একটা নতুন সংকট ভারতে মাথা তুলছে৷ শুরু হয়েছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর জন্য ভারত থেকে তরুণ মুসলিম যুবকদের ভাড়া নেয়া৷ এর জন্য চলেছে জোর মগজ ধোলাই কর্মসূচি৷ কয়েকজনকে ধরা পড়েছে ঠিকই, কিন্তু এতে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ বরং সরকারকে সজাগ থাকতে হবে৷ অঙ্কুরে বিনাশ করতে হবে৷ না পারলে আরও বড় বিপদ আসতে পারে৷ অন্যদিকে অযোধ্যায় আবারো রাম মন্দির নির্মাণের যে তোড়জোড় চলছে, সেটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে জাগানোর নামান্তর৷ কে বলতে পারে, আর একটা বাবরি মসজিদ কাণ্ড হবে না? এছাড়া নতুন বছরে পরিবেশ দূষণ রোধ মোদী সরকারের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ প্যারিস বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত খসড়া চুক্তিতে ভারত সই করলেও, ভারতের শিল্পায়নের কথা মাথায় রেখে কার্বন-নির্গমন নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব হবে, বলা কঠিন৷

দুর্নীতি

নতুন বছরে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে, এমনটা আশা করা আকাশকুসুম৷ হয়ত ইতরবিশেষ হলেও হতে পারে৷ কারণ মোদী সরকার নতুন বছরে ব্যাপকমাত্রায় শুরু করতে চলেছেন ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া', যার অঙ্গ হিসেবে ই-গভর্নেন্স, টুইটার, অ্যাপ, ই-ট্রেড, মোবাইল পরিষেবা, স্টার্ট-আপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া৷ তাতে আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কমবে৷ তবে ইন্টারনেটকে কবজা করা নিয়ে ফেসবুককে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ শুরু হয়েছে অবাধ অন-লাইন অভিযানের পক্ষে এবং বিপক্ষে৷ ‘ফ্রি বেসিক' নামে অন-লাইন সার্ভিস সাধারণ মানুষ যোগাযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, কর্ম সংস্থান ও কৃষি সংক্রান্ত খবরাকবর৷ এটা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে নতুন বছরে৷

পররাষ্ট্রনীতি

রাশিয়াকে পাশে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমের ধণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে ভারতের নৈকট্য তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রয়াস নতুন বছরে এক ভিন্ন মাত্রা পেতে পারে৷ ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ারও সম্ভাবনা৷ তবে ইইউ-ভারত অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যত এ বছরেও ঝুলে থাকবে৷ চীনের সঙ্গে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে৷ ভারতের চিরাচরিত পাকিস্তান নীতিকে গ্রাহ্য না করে পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে সরাসরি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দোড়গোড়ায় হাজির হলেন, আপাতদৃষ্টিতে তা নাটকীয় মনে হলেও এর রাজনৈতিক তাত্পর্য অনস্বীকার্য৷ এতে দু'দেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের জটিলতা কিছুটা হলেও শিথিল হতে পারে৷ সন্ত্রাস, কাশ্মীর ইস্যুর শক্ত জমিটা হয়ত কিছুটা নরম হয়েছে৷ তাই এই জানুয়রিতেই বৈঠকে বসতে চলেছেন দু'দেশের বিদেশ সচিব৷ মোদী-শরিফ মিলিত হতে পারেন এ মাসেই সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ফাঁকে৷ পশ্চিম এশিয়া নিয়ে মোদী সরকার আগ্রহী হতে দেখা যাবে৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীদের আসন্ন দিল্লি সফর তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ছেদ পডবে না৷ আফগানিস্তান ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন চলছে৷ নেপালের সঙ্গে হয়ত সেটা মিটে যাবে৷ শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানে ভারতের বৈষয়িক সাহায়্য অব্যাহত থাকবে৷

প্রতিরক্ষা

ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আগাগোড়া ঢেলে সাজাবার প্রক্রিয়া নতুন বছরে বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে৷ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইসরায়েল থেকে বড় রকম প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পাওয়ার আশা করা যেতে পারে৷ আর সেটা হতে পারে মোদীর ‘মেক-ইন ইন্ডিয়া' কর্মসূচির অধীনে৷ প্রতিরক্ষা সমরাস্র সংগ্রহে রাশিয়ার স্থান বিঘ্নিত হবে না৷ নতুন বছরে দেশকে সার্বিক সাফল্যের মুখ দেখাতে না পারলে বিজেপিকে তার দাম চুকাতে হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে৷

বন্ধু, আপনি কি অনিল চট্টোপাধ্যায়ের এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত? জানান মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান