নতুন সাজে ইসলামি শিল্পকলার মিউজিয়াম
১২ অক্টোবর ২০১০ইসলামি সংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শনগুলি ২০১৯ সালের মধ্যে মিউজিয়াম ভবনের উত্তরাংশে নিয়ে যাওয়া হবে৷ এর ফলে শুধু যে জায়গাই বাড়বে তা নয়, ইসলামি সংস্কৃতিকে নতুনভাবে তুলেও ধরা হবে৷
নতুন রূপে, নতুন সাজে
মিউজিয়ামের নতুন পরিচালক শ্টেফান ভেবার এই বিশেষ উদ্যোগটা নেওয়াতে খুশি৷ কেননা শিল্পসামগ্রীগুলো সেই গত শতকের গোড়ার দিকের ধ্যানধারণায় সাজানো রয়েছে আজও৷ অন্যদিকে জার্মানির সমাজ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে অনেকটাই বদলে গেছে, সেই সাথে দর্শকদের চাহিদাও৷ শ্টেফান ভেবার'এর ভাষায়, ‘‘তাঁরা ইসলামি দুনিয়ার সাংস্কৃতিক ইতিহাস আরো ভাল করে জানতে ও বুঝতে চান৷ তাই ইসলামি ইতিহাসের প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের নিদর্শনগুলিকে আমরা কালানুক্রমে সাজাব, বংশানুক্রমে নয়৷''
মিউজিয়াম পরিচালক ভেবার ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য সরলীকরণ নয়৷ বরং ইসলামি শিল্পকলার জটিল বিষয়গুলি এমনভাবে তুলে ধরা, যাতে তা সবাই বুঝতে পারে৷ ভেবার জানান, ‘‘যেমন অষ্টম শতাব্দীর এক খলিফার প্রাসাদের সামনের অংশটা আরো বড় করে পুনর্নির্মাণ করা হবে৷ স্পেনের গ্রানাডার আলহামব্রা প্রাসাদের চূড়াকেও দেয়া হবে নবরূপ৷'' ভেবার আরো জানান, ‘‘ইসলামের খলিফা বা রাজাদের সাম্রাজ্যের চেয়ে আমরা তাঁদের দেশ বা রাজধানীর নাম তুলে ধরতে বেশি আগ্রহী৷ যেমন, নাম করা যায় দামাস্কাস, কায়রো, বাগদাদ, দিল্লি বা তেহরানের৷ বংশপরিচয়ের চেয়ে এসব নামই মানুষের মনে দাগ কাটে বেশি৷''
বিষয়ের গভীরে যাবার সুযোগ
যে সব দর্শকের সময় কম, ভবিষ্যতে তাঁরা মিউজিয়ামের বিশেষ বিশেষ অংশগুলো দেখে মোটামুটি একটা ধারণা করতে পারবেন তৎকালীন ইসলামি শিল্পকলা সম্পর্কে৷ কিন্তু যাদের সময় নিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে, তাঁরা তিনটি তলায় সাজানো প্রাচীন ইসলামি শিল্পের নিদর্শনগুলি উপভোগ করতে পারবেন প্রাণভরে৷ ভেবার বলেন, ‘‘আমাদের মিউজিয়ামের শিল্প-সামগ্রীগুলির মধ্যে প্রায় সবই মধ্যপ্রাচ্যের, যেমন তুরস্ক, মিশর, ইরাক এবং সিরিয়া থেকে আনা৷ এসব ঘুরে ফিরে দেখলে বোঝা যাবে, এগুলোর মধ্যে কোথায় মিল এবং কোথায়ই বা পার্থক্য রয়েছে৷''
দর্শকরা যাতে মিউজিয়ামটিতে এসে খেই হারিয়ে না ফেলেন, এজন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার ব্যবস্থা করা হবে৷ যাদুঘরের পরিচালক শ্টেফান ভেবার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারেন যে, মানুষ ইতিহাসের গল্প শুনতে ভালবাসে৷ ইসলামি শিল্পের প্রদর্শনীটিতে এই দিকটাও বিবেচনা করা হবে৷ শ্টেফান ভেবার'এর ভাষায়, ‘‘এজন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পরিচিত নগর ও খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা হবে৷ যেমন, হারুন আল-রশিদ, কার্ল দ্য গ্রেট ও দ্বিতীয় ফ্রিডরিশ সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারবেন দর্শকরা৷ জানা যাবে জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রিডরিশ যে ভাল আরবি বলতে পারতেন, সে কথাও৷''
অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধ
ইসলামি সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একটা বিশেষ ভূমিকা রাখতে চায় ইসলামি শিল্পকলার মিউজিয়ামটি৷ ইদানীং জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমান ও তাঁদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে লোকের আগ্রহ বাড়ছে৷ এ প্রসঙ্গে ভেবার বলেন, ‘‘কোনো একটি প্রতিষ্ঠান যখন বলে, আমরা তোমাদের সংস্কৃতির দেখাশোনা করব আর রাষ্ট্র যখন এ ব্যাপারে সুযোগ সুবিধা করে দেয়, তখন মুসলমানরাও এই দেশটিকে নিজেদের স্বদেশ বলেই ভাবতে পারেন৷ মুসলমানরা যখন বলতে পারবেন, আমরা জার্মানির একাংশ, আমাদের এখানে গ্রহণ করা হয়েছে, তখন আমরাও বলতে পারব সম্পৃক্তকরণ প্রক্রিয়ায় একটা বড় রকমের পদক্ষেপ রাখা হয়েছে৷''
আর তাই তো ইসলামি মিউজিয়ামটি ঈদ বা মুসলমানদের নানা ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কনসার্ট, ছায়াছবি ও সাহিত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যেখানে অংশ নিতে পারেন মুসলমান ও অমুসলমান সকলেই৷ এর মাধ্যমে কাছাকাছিও আসতে পারেন তাঁরা৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন