1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নান আর টিক্কা, টিকে থাকবে তো লন্ডনে?

১৯ জুলাই ২০১০

নান আর টিক্কার মতো মুখরোচক খাবার দিয়ে ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশদের মজিয়ে এসেছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ৷ কিন্তু এগুলো যারা তৈরি করবেন, ব্রিটিশ সরকারের আইনের কড়াকড়িতে তাদের যাওয়ার পথই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/OOwx
মুখরোচক মশলাদার খাবার ছাড়া ব্রিটেনের খাবার সংস্কৃতির কথা আর ভাবাই যায় নাছবি: Holger Casselmann

ক্যাফে নাজ৷ ইস্ট লন্ডনের ব্রিক লেনের একটি রেস্তোরাঁ৷ মালিক বাংলাদেশি, নাম মুকিম আহমেদ৷ ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি আছেন লন্ডনে৷ ব্যবসা ভালোই চলছিলো, তবে এখন তিনি বেশ খেপে আছেন৷ কারণ যুক্তরাজ্য সরকারের অভিবাসন আইনের কড়াকড়ি৷ শুধু ইস্ট লন্ডনেই কারি হাউস আছে শতাধিক৷ এর বেশিরভাগ বাবুর্চিই বাংলাদেশি৷ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, অভিবাসন আইনের কড়াকড়িতে এই বাবুর্চির স্রোত বন্ধ হয়ে গেলে অনেককেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে৷ তাহলে নান রুটি আর টিক্কা কাবাবের যে ঝাঁঝে ব্রিটিশরাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো, তার কী হবে?

দক্ষিণ এশিয়ার এই খাবার ব্রিটেনে এসেছে আজ থেকে ২০০ বছর আগে৷ ১৮১০ সালে লন্ডনে রেস্তোরাঁ খোলেন ভারতের শেখ দীন মোহাম্মদ৷ তাঁর মসলাদার সব খাবার জিভে জল আনে ব্রিটিশদেরও৷ এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রেস্তোরাঁর সংখ্যা৷ অনেক রাত পর্যন্ত এসব রেস্তোরাঁ খোলা থাকে বলে অনেকেই ঢুঁ মারেন এগুলোতে৷ এখন এই সব ক্যাফে-রেস্তোরাঁর বেশিরভাগই বাংলাদেশিদের৷ তাঁদের আবার সমিতিও আছে৷ বাংলাদেশি কেটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রশীদ জানালেন, গোটা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি মালিকানার রেস্তোরাঁ আছে ১২ হাজার৷ আর এগুলোতে কাজ করে অন্তত এক লাখ লোক৷ যারা আবার এসেছে মূলত বাংলাদেশ থেকেই৷

Feuriges Essen
দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা বাবুর্চিদের ছাড়া মোগলাই খাবারের রান্নাঘর অচলছবি: AP

ইংল্যান্ড অভিবাসন আইনে কড়াকড়ি আনছে মূলত তাঁদের বেকার সমস্যা নিরসনে৷ আগামী ১৯ জুলাই থেকে নতুন আইন সাময়িকভাবে কার্যকর হওয়ার কথা৷ আইনে কড়াকড়ির বিষয়ে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ডেমিয়েন গ্রিন বলেন, ‘‘কারিহাউসগুলোতে বাবুর্চি ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে ব্রিটিশ এবং ইউরোপের দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে৷ কারণ বিদেশ থেকে কর্মী আনায় এখানকার বেকার এবং কম দক্ষতার লোকদের কর্মসংস্থানে সমস্যা হচ্ছে৷'' তিনি জানালেন, কারি হাউসগুলোর জন্য দক্ষ কর্মী তৈরিতে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এজন্য ভারত, বাংলাদেশ, চীন ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন নামি রেস্তোরাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে৷ যারা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে৷

তবে ব্রিটিশ সরকারের এই পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট রেস্তোরাঁগুলোর মালিকরা৷ তাঁরা বলছেন, এখান থেকে দক্ষ বাবুর্চি পাওয়া মুশকিল৷ এই জন্যই বাংলাদেশ থেকে আনতে হয়৷ আর শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই এই ধরনের বাবুর্চি তৈরি করা যাবে কি না, তা নিয়েও মালিকদের সংশয় রয়েছে৷ তাঁদের মতে, এর সঙ্গে সংস্কৃতিও যুক্ত৷ কেটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর বলেন, ‘‘রান্না শুধু শেখার বিষয় নয়, আনন্দের সঙ্গে তা করতে হয়৷ এটা শিল্পের ব্যাপারও৷ নতুন আইন আমাদের বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷'' বাংলাদেশি বাবুর্চি দেওয়ান তৌহিদ তো বলেই দিলেন, ‘‘কারি রান্না ব্রিটিশদের দিয়ে হবে না৷''

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করেই প্রজন্ম পার করে দিচ্ছেন মুকিম আহমেদ৷ তবে তাঁর ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ছে৷ মুকিম জানালেন, ছেলে কিংবা এই প্রজন্ম আর এই ব্যবসা নিয়ে আগ্রহী নয়৷ তাই বাংলাদেশ থেকেই তাকে লোক আনতে হয়৷ আর অভিবাসন আইন কঠোর থাকলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা উঠিয়ে দেওয়ার আর বিকল্প থাকবে না৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক