1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে নারী জঙ্গি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৯ আগস্ট ২০১৬

নারী জঙ্গি, বিশেষ করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি'র নারী সদস্যদের নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা পুলিশের৷ এরইমধ্যে জেএমবি'র নারী জঙ্গিরা শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/1Jli7
Syrien Bürgerkrieg Frauensoldaten in Aleppo
ছবি: Transterra

তাদের অবস্থান গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের নামি-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ তারা, অর্থাৎ এই নারী জঙ্গিরাই নাকি এখন চাপের মুখে থাকা জেএমবি'র বিকল্প শক্তি৷ নানা কারণে তাদের চিহ্নিত করা যেমন কঠিন, তেমনি চিহ্নিত করলেও ব্যাপক যাচাই-বাছাই করেই তাদের আটক করতে হয়৷

গুলশান হামলার পর গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের একটি ভাড়া বাসা থেকে আটক করা হয় চার নারী জঙ্গিকে৷ তাদের কাছ থেকে পুলিশ ১৩টি জেহাদি বই, ৬টি তাজা ককটেল ও গ্রেনেড তৈরির চারটি খোল ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উদ্ধার করে৷ পুলিশের দাবি, জেএমবির এসব সক্রিয় নারী সদস্য আটকের ৩ মাস আগে আরেক জেলা থেকে এসে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল৷ তারা সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে জেএমবির জন্য তহবিল সংগ্রহ, সদস্য সংগ্রহ, সাংগঠনিক এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ৷

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মিরাজউদ্দিন আহমদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আটক নারীরা সরাসরি জঙ্গি তত্‍পরতায় জড়িত ছিল৷ তারা বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল৷''

সানোয়ার হোসেন

ওই চার নারী আটকের কয়েকদিনের মধ্যেই, গত সোমবার ঢাকার কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে ব়্যাব৷ এরা হলেন, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান মনি, ইশরাত জাহান মৌসুমি, খাদিজা পারভিন মেঘলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিত্‍সক ইসতিসনা আক্তার ঐশি ৷

ব়্যাব দাবি করছে, এরা জেএমবির সদস্য এবং তারা প্রধানত 'দাওয়াতি' কার্যক্রম ও তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল৷ তাদের আরো ১০ সহযোগীর নাম পাওয়া গেছে৷ সেই ১০ নারী সহযোগী সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, মাইমুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, তাসনুভা ওরফে তাহিরা, শায়লা ওরফে শাহিদা, সালেহা ওরফে পুতুল, দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে বানী, তানজিলা ওরফে মুন্নী, আলিয়া ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলি, মনিরা জাহান ওরফে মিলি এবং ছাবিহা ওরফে মিতু৷ পুলিশের দাবি, বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া না গেলেও তাদের অধিকাংশই ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী৷ তাদের নেটওয়ার্কে আরো নারী সদস্য আছে, যাদের নাম এখনো জানা যায়নি৷

ঢাকায় আটক চার নারী জঙ্গিকে চারদিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা জানান, ‘‘আমরা নারী জঙ্গি নেটওয়ার্কের ব্যাপারে আরো ভয়াবহ তথ্য পাচ্ছি৷ একটি বিষয় নিশ্চিত যে, নারীদের জঙ্গি হওয়ার ব্যাপারে পারিবারিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব আছে৷''

সিরাজগঞ্জে আটক চার নারী জঙ্গি বিবাহিতা৷ তাদের স্বামীরাও জেএমবি'র সদস্য এবং তারা এখন পলাতক৷ তাদের পরিবারের সবাই জেএমবি'র সঙ্গে যুক্ত৷ নারীরা পুরুষ জঙ্গিদের রক্ষায়ও কাজ করে৷

কাউন্টার টেরোররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রধানত নারীরা জঙ্গি হয় তিনভাবে৷ ১. পুরো পরিবারটিই জঙ্গি ২. জঙ্গি হয়ে যাওয়া স্বামী স্ত্রীকে জঙ্গিতে পরিণত করে এবং ৩. অবিবাহিত পুরুষ জঙ্গিরা বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীকে জঙ্গি দলের সদস্য করে৷''

তিনি জানান, ‘‘এর বাইরে কথিত দাওয়াতি প্রক্রিয়ায় নারীদের জঙ্গি দলে ভেড়ানো জটিল৷ তবে কিছু যে হচ্ছে না তা নয়৷ তবে এক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই নারী তার চিন্তার দিক দিয়ে আগেই জঙ্গিবাদের কাছাকাছি ছিল৷ আর নারী জঙ্গিরা তাদের পরিচিত পরিবশে বা সামাজিক মেলামেশায় পরিস্থিতি বুঝে রিক্রুটের চেষ্টা করে৷''

গেয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকা এবং অন্যান্য বড় বড় শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নারী জঙ্গি রিক্রুটের একটি টার্গেট এরিয়া৷ বিশেষ করে স্কুলে বাচ্চাদের দিয়ে বাইরে মায়েরা যখন অপেক্ষা করেন, তখন তাদের সঙ্গে ইসলাম প্রচারের নামে বা চর্চার নামে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন অভিভাবকরূপী নারী জঙ্গিরা৷ তারপর বাসায় গিয়ে ইসলামি আলাপের নামে টার্গেট করা হয়৷

কোনো কোনো নারী শিক্ষক সরাসরি ছাত্রীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন৷ ওই শিক্ষকরা জঙ্গি দলের সদস্য৷ জেলা পর্যায়ে, পাড়ায় মহল্লায় ধর্ম প্রচারের নামে এবং ছোট ছোট সাপ্তাহিক ধর্মীয় আলোচনার আড়ালে কার্যক্রম চালায় তারা৷

কাউন্টার টেরোররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আরো জানান, ‘‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে নারী জঙ্গিরা সরাসরি হামলায় অংশ নিলেও বাংলাদেশে এর কোনো রেকর্ড নেই৷ বাংলাদেশে নারী জঙ্গিরা অর্থ সংগ্রহ, সদস্য সংগ্রহ এবং পুরুষ জঙ্গিদের জন্য তথ্য সংগ্রহসহ নানা ধরণের সহযেগিতামূলক কাজ করে৷ তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে নারী জঙ্গিরা আরো বড় দায়িত্ব পালনে আগ্রহ দেখাচ্ছে৷''

জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামাআ'তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হিজবুত তাহরির তাদের নারী সংগঠকদের ওপর এখন অনেক বেশি নির্ভর করছে৷ চাপের কারণে নতুন রিক্রুটমেন্ট বা গোপন সভার খবরাখবর দেওয়ার কাজ নারীদের দিয়েই করানো হচ্ছে৷ আর নারীকর্মীদের সঙ্গে পরিবারের শিশুদেরও এখন কিছু কিছু কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান