1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিকারাগুয়ার লব্স্টার শিকারীদের দুরবস্থা

৭ জানুয়ারি ২০১১

সমুদ্র আর সবুজ পাহাড় ঘেরা প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমি ক্যারিবীয় দেশ নিকারাগুয়া৷ তার অর্থনীতির একটি বড় অংশ আসে সামুদ্রিক মৎস সম্পদ থেকে৷ আর এর অন্যতম হলো লব্স্টার বা বিশাল আকারের গলদা চিংড়ি৷

https://p.dw.com/p/zuaf
hummer, lobster
লব্স্টার বা বিশাল আকারের গলদা চিংড়ি খেতেও কিন্তু দারুণ!ছবি: picture-alliance / Bildagentur Huber

গোটা বিশ্বের পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে সেই লীলাভূমি৷ সমুদ্রের অতল জলরাশিতে যে সম্পদ ছড়িয়ে আছে তার ওপর নির্ভর করে আছে দেশটির অর্থনীতি৷ নিকারাগুয়ার অর্থনীতির একটি বড় অংশ আসে সামুদ্রিক মৎস সম্পদ থেকে৷ আর এর অন্যতম হলো লব্স্টার বা বিশাল আকারের গলদা চিংড়ি৷

গোটা বিশ্বের ভোজনরসিকদের কাছে নিকারাগুয়ার এই লব্স্টারের রয়েছে দারুণ খ্যাতি৷ প্রতি বছর এই লব্স্টার রপ্তানি করে নিকারাগুয়া মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে৷

এই মাছ কিভাবে ধরা হয়? নিকারাগুয়াতে সাধারণভাবে জাল ফেলে এই মাছ ধরা হয় না৷ সেখানে সমুদ্রের বুকে ঝাঁপ দিয়ে ডুবুরিরা তল থেকে এই মাছ ধরে আনে৷ চোখে গগল্স আর পিঠে অক্সিজেনের ট্যাংক ঝুলিয়ে ডুবুরিরা চলে যায় সমুদ্রতলে৷ কখনো কখনো তারা একশ মিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে নেমে যায়৷ তবে এই মাছ ধরাও কিন্তু সহজ নয়৷ সমুদ্রে তলের খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে থাকে এই গলদা চিংড়ি৷ ডুবুরির হাতে থাকে এটি চিমটা৷ লম্বা হাতল বিশিষ্ট এই চিমটা দিয়ে খুব আস্তে আস্তে মাছটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে৷ তারপর খুব সাবধানে চিমটা দিয়ে লব্স্টারটিকে আটকে ফেলা হয়৷ এরপর ডুবুরি সেটাকে তুলে নিয়ে আসে ওপরে৷ এভাবেই দিনের পর দিন লব্স্টার ধরে আসছে নিকারাগুয়ার স্থানীয় ডুবুরিরা৷

Nicaragua
নিকারাগুয়ার অর্থনীতির একটি বড় অংশ আসে সামুদ্রিক মৎস থেকেছবি: AP

কিন্তু এভাবে স্কুবা ডাইভারদের দিয়ে গণহারে মৎস আহরণের ফলে নিকারাগুয়ার সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে৷ প্রতিদিন শত শত ডুবুরির আনাগোনার ফলে সমুদ্র তলের প্রাণী বৈচিত্র্যও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না৷ তাই নিকারাগুয়ার সরকার বিগত ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি নতুন আইন করে৷ এর ফলে এইভাবে গণহারে ডুবুরি দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়৷ কোম্পানিগুলো শুধু জাল এবং ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ ধরার অনুমতি পায়৷ তবে এই আইন কার্যকর হবে চলতি বছরের আগামী মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে৷

Hummer und Langusten
সমুদ্রে তলের খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে থাকে এই গলদা চিংড়িছবি: picture-alliance / dpa/dpaweb

এই বিশাল বাণিজ্য আর বিনিয়োগের পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাদের করুণ কাহিনী কিন্তু কেউ জানে না৷ যেসব দরিদ্র ডুবুরি জীবনের মায়া তুচ্ছ করে গভীর সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের অনেকেই এর ফলে মারাত্মক শারীরিক দুর্বলতার শিকার হয়৷ কখনো কখনো তারা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়৷ এছাড়া সমুদ্রের তলে নানা হিংস্র সামুদ্রিক প্রাণীর হামলারও শিকার হয় তারা৷ এতে অনেকের মৃত্যুও হয়৷ নিকারাগুয়ার নর্থ অ্যাটলান্টিক অটোনমাস রিজিওন বা রান অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে প্রতি বছর সমুদ্রের তলে লব্স্টার ধরতে গিয়ে প্রাণ হারায় গড়ে ১০ জন ডুবুরি৷ এছাড়া প্রতি বছর আড়াইশ ডুবুরি আক্রান্ত হয় ভয়াবহ ডিকম্প্রেশন সমস্যায়৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ডুবুরি যখন সমুদ্রের তলে নামতে থাকে, তখন তার শরীরের ওপর ভয়াবহ চাপের সৃষ্টি হয়৷ ডুবুরি যতই নামতে থাকে ততই পানির চাপ বাড়তে থাকে৷ এজন্য নিচ থেকে ওপরে ওঠার সময় মাঝখানে কিছুক্ষণ তাদের থামতে হয়, যাতে করে পানির অতিচাপ থেকে অল্পচাপে তাদের শরীর সইয়ে নিতে পারে৷ কিন্তু যারা লব্স্টার ধরে তারা দ্রুত পানির ওপরে উঠে আসে৷ ফলে অতিরিক্ত গ্যাসের ফলে শরীরের রক্তকণিকায় বুদ্বুদের সৃষ্টি হয়৷ এক পর্যায়ে ডুবুরির শরীর অবশ হয়ে আসে, সে নড়তে চড়তে পারে না৷ ডিকম্প্রেশনের শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত বহু ডুবুরি পঙ্গু হয়ে গেছে বলে জানা গেছে৷ নিকারাগুয়ার বেসরকারি হিসাব মতে গত ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিনশ ডুবুরি পঙ্গু হয়ে গেছে৷

ডুবুরিদের এই ঝুঁকির সঙ্গে যোগ হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নির্মমতা৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ডুবুরি প্রতিদিন চারবার সমুদ্রের বুকে ডাইভ দিতে পারে৷ এবং সে ১৮ মিটার পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে৷ কিন্তু নিকারাগুয়ার ডুবুরিদের দিনে ১০ বার পর্যন্ত সাগরের বুকে ঝাঁপ দিতে হয়৷ এবং কখনো কখনো তাদের পানির ১০০ মিটার গভীর পর্যন্ত যেতে হয়৷ মাছটি ধরে দ্রুতই তাদের নৌকায় ফিরতে হয়, কারণ যত বেশি মাছ ধরবে তত বেশি পয়সা তারা পাবে৷ আর ফলেই তারা আক্রান্ত হয় ভয়াবহ ডিকম্প্রেশন এ৷ উল্লেখ্য, প্রতি পাউন্ড মাছের জন্য একজন ডুবুরি পায় মাত্র এক ডলার মজুরি৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক