1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিজের বিশ্বাসে স্থির

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১০ জুলাই ২০১৭

কে সি পাল৷ সারা কলকাতা শহর তো বটেই, এমনকি সম্ভবত গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চেনে তাঁকে৷ ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও রাস্তার ধারের দেওয়ালে, বাতিস্তম্ভের গায়ে কালো আলকাতরা দিয়ে অপটু হাতে লেখা তাঁর মতবাদের সঙ্গে মানুষ নিশ্চিত পরিচিত৷

https://p.dw.com/p/2g85E

কে সি পাল বিশ্বাস করেন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে না, বরং সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে৷ অর্থাৎ প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যা বিশ্বাস করতেন, কোপার্নিকাস যে ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন, সেই ভুলটাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন কে সি পাল৷ এবং নেহাত অন্ধ বিশ্বাস নয়, যুক্তি দিয়ে, অঙ্ক কষে তিনি সেই ভুলটা ঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে আসছেন৷ মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করে আসছেন গত ৪৩ বছর ধরে৷ 

বলা বাহুল্য, যে কে সি পালকে তার জন্য কম হেনস্থা সহ্য করতে হয় না৷ ঘরে এবং বাইরে তিনি যারপরনাই অপদস্থ হন, লোকের উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের পাত্র হন, এমনকি বাড়ির গঞ্জনায় একবার তাঁকে গৃহত্যাগীও হতে হয়৷ এসে থাকতেন শহরের ফুটপাথে, ছাউনি খাটিয়ে৷ ওই অবস্থাতেও তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করে গেছেন, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে৷ এবং সূর্য, চন্দ্র — এগুলো আদতে গ্রহ৷ আর পৃথিবী হলো তারা৷ প্রতি বছর বইমেলায় বর্ষীয়াণ মানুষটিকে দেখা যায়, নিজের তত্ত্বের সমর্থনে রেখাচিত্র আঁকা চার্ট টাঙিয়ে, বই-খাতাপত্র নিয়ে বসে পড়েছেন৷ খুব সামান্য দামে বিক্রি করছেন পুস্তিকা, যাতে প্রমাণ করে দেওয়া আছে, কেন কে সি পাল ঠিক, বাকি পৃথিবী ভুল!‌ সেই ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে তিনি চিঠি লিখেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘‌নাসা’‌, ব্রিটিশ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘‌রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি’‌-র কাছে৷ কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে, প্রচলিত ধারণায় অবিশ্বাস করার কোনো কারণ যেহেতু এখনও ঘটেনি, আপাতত সেই ধারণাটিই বহাল থাকছে৷ তবু অদম্য কে সি পাল৷ আজকাল যখন সকাল বিকেল মানুষের ধারণা, বিশ্বাস বদলে যায়, সেখানে এই মানুষটি স্থিত আছেন নিজের বিশ্বাসে৷