1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে নারী ভবন

৫ এপ্রিল ২০১০

৭০’এর দশকে জার্মানিতে পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে কথা বলা ছিল ‘ট্যাবু’৷ ১৯৭৬ সালে বার্লিনে প্রথম যখন নিগৃহীত নারীদের জন্য নিরাপদ বাসের স্থান ফ্রাউয়েন হাইজ বা নারী ভবন তৈরি হয়, তখন থেকে প্রকাশ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷

https://p.dw.com/p/MnNb
জার্মানিতে নারী ভবনের দাবিতে বিক্ষোভছবি: PA/dpa

এইসব ফ্রাউয়েন হাউজে নিগ্রহের শিকার অনেক মহিলাই আশ্রয় নিত৷ এর মধ্যে জার্মানিতে এ ধরণের আরো কয়েক'শ বাড়ি তৈরি করা হয় যেখানে প্রায় ৭ হাজার মহিলা আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন৷ জার্মানিতে মহিলারা শিক্ষা, পেশাগত জীবন, রাজনৈতিক প্রায় সবগুলো ক্ষেত্রেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ গত ৩০ বছরে সমানাধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অগ্রগতিও লক্ষ্য করা গেছে৷ তাই মাঝে মাঝে এই সমানাধিকারের দাবিতে যে নারী ঘরের চার দেয়ালের ভিতরে সোচ্চার হয়েছে তার ওপর নেমে এসেছে চরম দুর্যোগ৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা স্বামী বা জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে৷

জার্মানিতে প্রতি বছর স্বামী বা বন্ধুর নিগ্রহের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে প্রায় ৪০ হাজার মহিলা আশ্রয় নেন মহিলাদের জন্য নির্মিত এসব নিরাপদ আশ্রয়ভবনগুলোতে৷ বন শহরেও রয়েছে এমন একটি নারী ভবন৷ সেখানে কাজ করছেন ইসাবেল৷ তিনি জানালেন, ‘‘যে সব মহিলা এখানে আসেন তারা বেশির ভাগ সময়ই কাঁদতে কাঁদতে আসেন৷ এখানে তারা ততদিন থাকেন যতদিন তারা অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা খুঁজে না পান৷ তাদের বাড়ি খুঁজে দিতেও আমরা সাহায্য করি৷ অনেকের কাছে একা একা কিছু করা বেশ কষ্টকর, তাদের অভ্যাসও নেই৷ অনেকেই সারাক্ষণ ভীত থাকেন, কোন সময় স্বামী এসে হাজির হয় - সে ভয়ে৷ এসব পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যখন স্বামী স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তখন বাচ্চারা তা দেখেছে, বাচ্চাদের চোখের সামনেই এসব হয়েছে৷''

বনের এই বাড়িতে শুধুই আশ্রয় দেয়া হয় না, নিগৃহীত এসব মহিলাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শও দেয়া হয়ে থাকে৷ মানসিক ভাবে তাদের শক্ত করার চেষ্টাও করা হয়, জানান ইসাবেল৷ তিনি আরো বলেন, যে সব মহিলা এখানে আসেন তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে৷ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী থেকে তারা আসেন৷ অনেকেই বাচ্চা নিয়ে আসেন৷ বাচ্চাদের বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করার দায়িত্ব থাকে আমাদের হাতে৷

যেসব মহিলা এসব নরী ভবনেআশ্রয় নেন নতুন একটি ঠিকানা না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে থাকেন৷ নতুন বাড়ি পওয়া গেলে তারা সেখানে চলে যান তবে কোন অবস্থাতেই স্বামী বা বন্ধুকে ঠিকানা দেয়া হয় না৷ পুলিশকে জানানো হয় যেন তারা নতুন ঠিকানায় হাজির হয়ে স্ত্রী বা সন্তানদের ওপর চড়াও হতে না পারে৷ এসব ঠিকানায় নিয়মিতভাবে পুলিশ আসা-যাওয়া করে, তারা খোঁজ খবর রাখে৷

প্রশ্ন উঠতে পারে কেন নির্যাতন ? এর মূল কারণ কী ? উত্তরে বলা যেতে পারে - এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ৷ সে বিষয়ে ইসাবেলের মত হল: ‘‘প্রথম কারণ বেকারত্ব, মাদকাসক্তি আরেকটি কারণ৷ নিশ্চিতভাবে আর একটি কারণ উল্লেখ করা যায় তা হল এসব মহিলার অনেক অল্প বয়সে বিয়ে হয়৷ অনেকেই এমন পরিবার থেকে আসে যেখানে তারা নির্যাতনের সম্মুখীন হত প্রতিনিয়ত৷ বাড়িতে তারা এসব দেখতে দেখতে বড় হয়েছে৷ বেকারত্ব এবং বেকার ভাতা কে পাবে, সে টাকা কিভাবে খরচ হবে সে আরেকটি কারণ৷ জার্মানি সমাজ কল্যাণমুখী দেশ৷ এখানে সরকার থেকেই বেকার ভাতা দেয়া হয়৷ এই বেকার ভাতা পাওয়ার লোভেও অনেকে কাজ করতে চান না৷ বিশেষ করে স্বামীরা চান, কোন কিছু না করেই প্রতি মাসে এই টাকা হাতে পেতে৷''

জার্মানির পরিবার মন্ত্রণালয় একটি জরিপে জানিয়েছে, ১৬ থেকে ৮৫ বছরের মহিলাদের মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ সারা জীবনে কয়েকবার শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ চড় থেকে শুরু করে কোন কোন সময় তা পিস্তল দিয়ে হুমকি পর্যন্ত গড়ায়৷ এসব পরিবারে ছোট বাচ্চাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি৷ বাচ্চারা ধরেই নেয় এটাই স্বাভাবিক৷ একটু বড় হলে তারাও তা দেখাতে চায়৷ অনেক ছোটবেলা থেকেই তারা শেখে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ৷

প্রতিবেদক : মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক : আবদুল্লাহ আল-ফারূক