1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌সাংবাদিকদের জন্য পোশাক!

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৯ মে ২০১৭

মার খাচ্ছেন কলকাতার সাংবাদিকরা! কর্তব্য পালন করতে গিয়ে বেধড়ক মার খাচ্ছেন৷ তা ঠেকাতে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তা সাংবাদিকদের পক্ষে আরও বিপজ্জনক!

https://p.dw.com/p/2djmO
Kalkutta Journalisten Proteste
পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে কলকাতার সংবাদকর্মীদের বিক্ষোভছবি: DW/S. Bandopadhyay

সাংবাদিকদের জন্য আলাদা পোশাক নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ৷ বুকে-পিঠে ইংরেজিতে ‘‌প্রেস’ লেখা, উজ্জ্বল হলুদ রঙের সেই পোশাক পরে থাকলে পুলিশের মার খেতে হবে না, এমনটাই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের৷ বলা হয়েছে, ওই পোশাক থাকলে সাংবাদিকদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে পুলিশের সুবিধা হবে৷ কিন্তু সেটা কি আদৌ সাংবাদিকদের কোনওভাবে সাহায্য করবে?‌ নাকি উল্টে তাঁদের কাজে আরও অসুবিধা সৃষ্টি করবে?‌

৩০-৩৫ বছর ধরে চিত্রসাংবাদিকতা করছেন কলকাতার এক বাংলা দৈনিকের সঙ্গে যুক্ত কুমার রায়৷ বহুবার, বহু গন্ডগোলের মধ্যে থেকে ঠিক ছবিটি তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসার কৃতিত্ব জমা আছে কুমারের ঝুলিতে৷ সম্প্রতি কলকাতায় বামফ্রন্টের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠি চালানোর সময় যখন একাধিক সাংবাদিকও বিনা দোষে মার খেয়ে গেলেন, তখন শহরের বাকি সাংবাদিকদের মতো কুমারও ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ কিন্তু তিনি আরও বেশি ক্ষুব্ধ, পুলিশ সাংবাদিক, আলোকচিত্রীদের পোশাক নির্দিষ্ট করে দেওয়ায়৷ কারণ, তাঁর গভীর সন্দেহ, সংবাদ মাধ্যমের অধিকার আরও খর্ব করতেই এই পোশাক৷ বিশেষত একজন চিত্রসাংবাদিকের কাজ যেখানে বিরোধের, সংঘাতের মুহূর্তের ছবি খুঁজে নেওয়া, সেখানে এই মার্কামারা পোশাক তাঁকে হয়ত নিরাপদ রাখবে, কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অসুবিধা তৈরি করবে৷

কুমার রায়

এ রকম বেশ কিছু সম্ভাব্য পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়েছেন কুমার রায়৷ তার আগে দেখে নেওয়া যাক, বামপন্থি মিছিলে পুলিশের লাঠি চালানোর ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিকেরা কেন মার খেলেন৷ পুলিশ সেদিন নির্বিচারে লাঠিপেটা করেছে মিছিল করতে আসা মানুষদের৷ এমনকি মহিলারা, বয়স্করাও রেহাই পাননি৷ একাধিক পথচলতি লোক, মায় টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরতে থাকা কিশোরের পিঠেও পুলিশের লাঠির বাড়ি পড়েছে৷ চিত্রসাংবাদিকরা, টিভি ক্যামেরাম্যানেরা সেই ছবি তুলছিলেন৷ সেই দেখে ক্ষিপ্ত পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে এলেও সাংবাদিকরা সেদিন ভয় পাননি৷ নিজেদের কাজ ছেড়ে গা বাঁচাতে পালাননি। বরং ওই মারমুখী পুলিশের ছবিও তাঁরা তুলেছেন৷ ফলে আরও ক্রুদ্ধ পুলিশ সংবাদকর্মীদের ওপরেও যথেচ্ছ লাঠি চালিয়েছে৷ তাঁদের ক্যামেরা ভেঙে দিয়ে নিজেদের অপকীর্তির প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে৷ কুমার রায়ের মতো অভিজ্ঞ আলোকচিত্রীর বক্তব্য, আলাদা পোশাক দিয়ে তাঁদের চিহ্নিত করে দেওয়ার ফলে যেটা হবে, সাংবাদিকদের এক জায়গায় আটকে রাখার কাজটা অনেক সহজ হবে৷ দূর থেকে তাঁদের আসতে দেখেই সতর্ক হয়ে যাবে পুলিশ৷ অত্যাচার চলবে, কিন্তু আড়ালে৷

প্রবীণ সাংবাদিক, বহু বছর খবরের কাগজ এবং টিভি'র সঙ্গে যুক্ত শুভাশিস মৈত্রও মনে করছেন, পুলিশ নিজেদের অপকর্মের প্রমাণ নষ্ট করতেই সেদিন সংবাদকর্মীদের ওপর লাঠি চালিয়েছে৷ তাঁর আরও আক্ষেপ, পুলিসের এই অপরাধের কোনও বিচার হবে না, দোষীদের শাস্তি হবে না৷

শুভাশিস মৈত্র

সংবাদকর্মীদের পুলিশি নিগ্রহের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম ঘটল, তা নয়৷ প্রতিবারই পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছুই হয়নি৷ এবারেও কলকাতার পুলিশ কমিশনার একই আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এর পরিণতিও সবারই জানা৷ এবং সবথেকে বড় কথা, রাজ্য সরকারের দিক থেকে এমনকি একটি সান্ত্বনাবাক্যও উচ্চারিত হয়নি নিগৃহিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে৷ এই যে পরিস্থিতি, এর কারণ হিসেবে শুভাশিসের ধারণা, সাংবাদিকদের কোনও মজবুত সংগঠন নেই, তাঁদের হয়ে বলার মতো কোনও জায়গা নেই৷ সাংবাদিক ইউনিয়ন যেক'টি আছে, রাজ্য, বা জাতীয় স্তরে, তাদের সেই সাংগঠনিক শক্তি, এমনকি গলার জোরও নেই৷ ফলে সাংবাদিকদের ওপর এই অত্যাচার চলতে থাকবে, যদি না সংবাদকর্মীরা সমবেতভাবে রুখে দাঁড়ান৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...