1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পৃথিবীতেই এলিয়েন!

৬ ডিসেম্বর ২০১০

এলিয়েন অর্থাৎ ভিন গ্রহের প্রাণীদের নিয়ে আমাদের পৃথিবীবাসীর আগ্রহ অনেক৷ তাই তাদের নিয়ে হয়েছে অনেক গল্প লেখা, বানানো হয়েছে অনেক বিশ্বখ্যাত সিনেমাও৷ কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীতেই নাকি এলিয়েন থাকতে পারে!

https://p.dw.com/p/QQRw
এলিয়েন অর্থাৎ ভিন গ্রহের প্রাণীদের নিয়ে হয়েছে অনেক সিনেমাছবি: AP/Midway

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের একজন বিশ্বাস করে যে, এলিয়েনরা পৃথিবীতেই আছে৷ তারা আমাদের মধ্যেই মানুষের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ প্রায় ২২টি দেশের ২৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে জরিপটি চালানো হয়েছে৷

জরিপ থেকে পাওয়া এই ধারণা কী সত্যি হতে যাচ্ছে? অন্তত: বিজ্ঞানীরা এধরণের একটা সম্ভাবনার কথা বলছেন৷ আর বিজ্ঞানীরা যখন একটা কথা বলেন তখন ধরেই নিতে হবে সেটার মধ্যে একটা যুক্তি আছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া লেকে সম্প্রতি এক ধরণের ব্যাকটিরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ যেটা আর্সেনিক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে৷ আর এতেই বেশ পুলকিত বিজ্ঞানীরা৷ কারণ আর্সেনিক প্রাণীদেহের জন্য বিষাক্ত একটা জিনিস৷ কিন্তু ঐ ব্যাকটিরিয়াটি সেই বিষাক্ত খাবার খেয়েই বেঁচে থাকতে পারছে৷ এছাড়া এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বলে এসেছেন, পৃথিবীতে বাস করা প্রাণীর দেহ ছয়টি উপাদান দিয়ে তৈরি৷ এগুলো হলো নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন, সালফার এবং ফসফরাস৷ এই তালিকায় আর্সেনিকের নাম নেই৷

২০০৯ সালে প্রকাশিত মার্কিন তিন বিজ্ঞানীর এক প্রবন্ধে প্রথমবারের মতো এক ধরণের প্রাণীর কথা বলা হয় যারা ফসফরাসের পরিবর্তে আর্সেনিক ব্যবহার করে থাকে৷ এক বছর পর গবেষণার সেটা প্রমাণ করে দেখালেন তাঁরা৷ বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স'এর সর্বশেষ সংখ্যায় তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে৷ ঐ বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্ব দেন ওল্ফ সাইমন৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ফেলো হিসেবে কাজ করেন তিনি৷ নাসা এই গবেষণায় আর্থিক সহ সব ধরণের সহায়তা দিয়েছে৷ আর বাকি দু'বিজ্ঞানী হলেন, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যারিয়েল আনবার ও পল ডেভিস৷ গবেষণা সম্পর্কে সাইমন বলেন, ‘‘বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আর কোথায় আর কী কী থাকার সম্ভাবনা আছে, তা জানার দরজাটা আমরা হুট করে খুলে ফেলেছি''৷

ক্যালিফোর্নিয়ার যে লেকে ব্যাকটিরিয়াটি পাওয়া গেছে সেটি বেশ লবণাক্ত এবং সেখানে আর্সেনিক সহ অন্যান্য খনিজ পদার্থের বেশ উপস্থিতি রয়েছে৷ লেকের একেবারে তলা থেকে জিএফএজে-১ নামের ঐ ব্যাকটিরিয়াটি সংগ্রহ করা হয়৷ এরপর ল্যাবরেটরীতে নিয়ে একটি বোতলে রাখা হয়৷ ঐ বোতলে ছিল কিছু ফসফরাস আর ছিল অনেকখানি আর্সেনিক৷ কিন্তু দেখা গেল ব্যাকটিরিয়াটি ঐ পরিবেশে বেঁচে গেল৷ একবার নয় বার বার করা হয় পরীক্ষাটি৷ আর সববারই পাওয়া যায় একই ফলাফল৷ আর তাতেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে এটা হয়তো কোনো সাধারণ প্রাণী নয়৷

বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, কিছু কিছু ব্যাকটিরিয়া শক্তি সংগ্রহের জন্য আর্সেনিক ব্যবহার করে থাকতে পারে, যেমনটা মানুষ করে থাকে অক্সিজেন সংগ্রহের মাধ্যমে৷ কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেল এই ব্যাকটেরিয়াটি বেঁচে থাকার জন্যই আর্সেনিকের উপর নির্ভরশীল৷

গবেষণা দলের অন্যতম বিজ্ঞানী ডেভিস বলেন, তাঁদের এই আবিস্কার বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন এক দুয়ার খুলে দিল৷ কারণ তাঁর ধারণা, আর্সেনিক নির্ভর প্রাণী পৃথিবীতে নিশ্চয় একটাই থাকার কথা নয়৷ ভবিষ্যতে এরকম আরও অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন৷

লিডস মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জন ইলিয়ট, যিনি বহুদিন থেকে এসব বিষয়ে গবেষণা করছেন, তিনি এই আবিস্কারকে একটা অনেক বড় আবিস্কার বলে মন্তব্য করেছেন৷ তিনি বলেন, এর ফলে এটাই প্রমাণ হলো যে, বিশ্বের প্রাণীকূল শুধু নির্দিষ্ট কতগুলো সত্যের ওপরই বেঁচে থাকে, তা বোধ হয় ঠিক নয়৷ তিনি এই আবিস্কারকে দেয়াল থেকে একটা ইঁট সরিয়ে আনার সঙ্গে তুলনা করেছেন৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়