1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পৃথিবী মোটেই শান্তিপূর্ণ নয়

গ্রেহেম লুকাস/এসবি১৫ জুন ২০১৫

পরমাণু অস্ত্রধর দেশগুলি তাদের অস্ত্রগুলি আরও উন্নত করে তুললেও সার্বিকভাবে গোটা বিশ্বে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রবণতা চলছে৷ তবে তা সত্ত্বেও সিপ্রি-র বাৎসরিক রিপোর্টের খবর মোটেই ভালো নয় বলে মনে করেন গ্রেহেম লুকাস৷

https://p.dw.com/p/1FhOa
Symbolbild SIPRI Militärausgaben Bericht 2014
ছবি: picture-alliance/dpa

গোটা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কমছে – শুনলে সুখবর বলেই মনে হয়৷ ২০১০ সাল থেকে সেগুলির সংখ্যা ২২,৬০০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫,৮৫০-এ৷ তবে কেউ যদি ভেবে বসেন, যে অবশেষে মানবজাতির সুমতি হয়েছে এবং মানুষ তাদের অর্থ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করছে, তাহলে সেটা হবে এক মারাত্মক ভুল৷ বাস্তবে ঠিক তার বিপরীতটাই ঘটছে৷ আসলে শীতল যুদ্ধের শেষে প্রধান পরমাণু শক্তিধর দেশগুলি বুঝতে পেরেছে যে, বিশাল পরমাণু ভাণ্ডারে বিনিয়োগ করে কোনো লাভ নেই৷ তার মানে এই নয় যে, একে অপরকে হুমকি দেওয়ার প্রয়োজন বন্ধ হয়েছে৷ তারা নিয়মিতভাবেই সেটা করে চলেছে৷ মাত্র কয়েক মাস আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বড়াই করে বলেছিলেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে তিনি পরমাণু হামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ এই সংকটের সময় রাশিয়ার সেনাবাহিনী ভুয়া গণভোটের ঠিক আগে ক্রাইমিয়া দখল করেছিল৷ গত সপ্তাহেই পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে বলেছিল, যে প্রয়োজনে তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত৷

পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কমার পেছনে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তাই দায়ী৷ মনে রাখতে হবে, এই দুই দেশের হাতেই সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে৷ কারণ এতে ব্যয় সাশ্রয় হয়৷ এই দুই দেশ অদূর ভবিষ্যতে তাদের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার পুরোপুরি ত্যাগ করবে – এমন কোনো রকম সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ ব্রিটেনও সে পথে হাঁটছে না৷ উলটে সে দেশ অ্যামেরিকার কাছ থেকে ট্রাইডেন্ট নিউক্লিয়ার ওয়েপনস সিস্টেম কেনার মাধ্যমে তার পরমাণু শক্তি জাহির করছে৷ ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও একই মনোভাব দেখা যাচ্ছে৷ চীন সাম্প্রতিক কালে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে৷ সে দেশ পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে৷ পরমাণু অস্ত্র ক্লাবের বাকি তিন সদস্য – ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েলের প্রত্যেকের কাছে প্রায় ১০০টির মতো বোমা আছে, যা দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করা যায়৷ সেইসঙ্গে উত্তর কোরিয়া ও সে দেশের স্বৈরাচারী নেতার কথাও ভুললে চলবে না৷ সে দেশের হাতে প্রায় ৮টি পরমাণু বোমা আছে, যা দিয়ে বড় আকারের সংঘাত শুরু করা সম্ভব৷

অবশ্যই এই হুমকির কোনো অর্থ হয় না৷ পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার অবিশ্বাস্য মাত্রার ধ্বংসলীলা ঘটাবে৷ এমনকি মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে৷ একমাত্র কোনো পাগলই এই বাস্তব উপেক্ষা করতে পারে৷ আরও একটি বিষয় উপেক্ষা করলে চলবে না৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পরমাণু শক্তি নিয়ে অচলাবস্থা কাটার অনেক আগে থেকেই আধুনিক যুদ্ধের চরিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে৷ দুই রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ তার বদলে বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর লড়াই চলছে৷ ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাকে অ্যামেরিকানদের বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘাতের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে বিপর্যয়ের মুখ দেখেছে৷ আজও সেই বাস্তব সত্যের পরিবর্তন ঘটেনি৷ ভারত তার পূর্বাঞ্চলে মাওবাদী গেরিলা এবং কাশ্মীরে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে৷ ইসলামপন্থি তালিবান আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামে লিপ্ত৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে অ-মুসলিমদের গণহত্যার হুমকি দিয়ে চলেছে৷ বড় বা মাঝারি শক্তিধর দেশগুলি এমন সব বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিতে বা বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে পারে না৷ দুই পক্ষের শক্তির কোনো তুলনা হয় না বটে, কিন্তু বিদ্রোহীদের কঠিন মনোবল এবং জনসংখ্যার মধ্যে সমর্থন থাকায় তাদের পরাস্ত করা কঠিন৷ কাজেই প্রচলিত অস্ত্র কেনা ও প্রতিরক্ষা বাজেট যে বেড়ে চলেছে, তা মোটেই বিস্ময়কর নয়৷

Lucas Grahame Kommentarbild App
গ্রেহেম লুকাস, ডয়চে ভেলে

সম্প্রতি চীন, রাশিয়া ও সৌদি আরব সাধারণ অস্ত্রের জন্য বাজেট অনেক বাড়িয়েছে৷ অন্যদিকে রাশিয়ার সীমান্তের দেশগুলি নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে৷ নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলিও আরও অস্ত্র কিনছে৷ এই খাতে ব্যয় বাড়ার পেছনে দুর্নীতি, কায়েমি স্বার্থ ও একনায়কন্ত্রও কাজ করছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি এখনো রাশিয়ার হুমকি উপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে৷ ২০০৮ সালের ব্যাংকিং সংকটের পর এই সব দেশ কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতেই বেশি ব্যস্ত৷

না, পৃথিবী মোটেই আরও সুন্দর জায়গা হয়ে উঠছে না৷ মানুষ কী ভাবে একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে বা হত্যা করছে, তার ধরনটা শুধু বদলেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান