1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌প্রবীণদের দায়িত্ব কার?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৯ আগস্ট ২০১৭

গত বছরের মতো এ বছরও কলকাতার বুকে রহস্যজনকভাবে মারা যাচ্ছেন অসহায় বয়স্ক নাগরিকরা৷ সম্প্রতি আরও এক প্রবীণ নাগরিক খুন হলেন মহানগরীতে৷ তাহলে এই শহর কি ক্রমশই বয়স্ক মানুষদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে?‌

https://p.dw.com/p/2hvhN
ছবি: DW/M. Krishnan

আবারও রহস্যমৃত্যু৷ এবারও শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দা৷ নিউ আলিপুরের ৮২ বছরের এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার নিজের বাড়িতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেলেন৷ পুলিশ সন্দেহ করছে, ডাকাতির চেষ্টা থেকেই এই অপঘাতে মৃত্যু৷ কিন্তু এই ঘটনা ফের নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, কলকাতা শহর কি তার প্রবীণ বাসিন্দাদের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ থাকছে না?‌

এর আগেও শহরে একাধিকবার আততায়ীর টার্গেট হয়েছেন প্রবীণ বাসিন্দারা৷ গত জুন মাসেই খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে খুন হয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার এক জনবহুল গোলপার্ক এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছরের এক ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণ শহরতলীর নেতাজীনগরের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা৷ সাধারণভাবে নিঃসঙ্গ, অশক্ত ও শারীরিকভাবে অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই এ ধরনের হামলার লক্ষ্য হচ্ছেন৷ কিন্তু সাম্প্রতিকতম খুনটির ক্ষেত্রে ৮২ বছরের প্রবীণ মানুষটি একা ছিলেন না৷ একই বাড়িতে থাকেন তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূ৷ পাশের ঘরেই ছিলেন তাঁর দেখভালের জন্যে বহাল আয়া ভদ্রমহিলা৷ তার পরেও অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতিদের হাতে বৃদ্ধ ভদ্রলোককে খুন হতে হলো৷

কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ডয়চে ভেলেকে জানালেন, অনেক সময়ই কিন্তু দেখা যায়, বয়স্ক মানুষদের নিকট আত্মীয়, এমনকি সন্তানেরাও ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে খুন করায়৷ এটা যদিও নিয়ম নয়, কিন্তু এ ধরনের ব্যতিক্রম আকছারই ঘটে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্পত্তির লোভ, কিংবা পারিবারিক আক্রোশ কাজ করে এর পেছনে৷ ব্যবসায়িক শত্রুতাও আরেক বড় কারণ৷ কাজেই কলকাতা শহর যে হঠাতই প্রবীণ নাগরিকদের জন্য অনিরাপদ হয়ে গেছে, এমন কথা বলা যায় না৷ বিশেষ করে যেখানে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক শত্রুতার প্রমাণ পাওয়া যায় হাতেনাতে৷ অন্যদিকে আরেক ভুক্তভোগী, তিনিও পরিচয় প্রকাশ করতে অপারগ, জানালেন যে অনেক সময় পুলিশও তাড়াতাড়ি রহস্যভেদের তাগিদে কাছের লোকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়, যা পরবর্তী সময়ে মামলার সূত্রে ধরা পড়ে যায়৷

অবশ্য কলকাতার প্রবীণ বাসিন্দাদের সুরক্ষায় এবং দেখভালের লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেই ‘‌প্রণাম’ নামে একটি সমান্তরাল উদ্যোগ চালু আছে, যার সূচনা করেছিলেন প্রাক্তন এক পুলিশ কমিশনার৷ শহরেরই এক বিশিষ্ট শিল্পপতির একটি বেসরকারি সেবা সংস্থা বা এনজিও-র সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতা পুলিশের এই কর্মসূচি কলকাতা এলাকার সমস্ত প্রবীণ-প্রবীণাদের দেখভালের দায়িত্ব বেশ সফলভাবেই পালন করে চলেছে৷ এখন যিনি এই প্রণাম কর্মসূচির দাপ্তরিক দায়িত্বে, কলকাতা পুলিশের সেই শুক্লা তরফদার ডয়চে ভেলেকে জানালেন, আলাদাভাবে প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও প্রণামে এবং সেই সূত্রে স্থানীয় থানায় নথিভুক্ত, এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা দিনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷ সে তাঁদের গ্যাস ফুরিয়ে গেলে গ্যাসের ব্যবস্থা করে দেওয়াই হোক, বা কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, প্রণামের কর্মীরা সবসময়ই হাজির হন, গিয়ে দাঁড়ান পাশে৷

‘আলাদাভাবে প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই’

যদিও এই প্রণাম প্রকল্পটি কেবলমাত্র কলকাতার প্রশাসনিক এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু শহরতলীর অনেক থানা এলাকায়, এবং এখন জেলাগুলিতেও এই একই মডেলে প্রবীণদের দেখভাল, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে রাজ্য পুলিশ৷ এখন যিনি রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল, সেই সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ নিজে এই কর্মসূচি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং তিনি নিজেও খুবই উদ্যোগী, জানালেন শুক্লা তরফদার৷ তিনি আশ্বাস দিলেন, নাগরিকরাও, বিশেষত বয়স্করা যখনই চাইবেন, নিখরচায় এই পরিষেবার সুযোগ নিতে পারবেন৷