1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী শ্রমিক

সমীর কুমার দে, ঢাকা৩০ জুলাই ২০১৫

বাড়ছে বিদেশে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা৷ ফলে রেমিটেন্সে দারুণ প্রভাব রাখছে তাঁদের পাঠানো অর্থ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘টাকা পাঠালেই হবে না, তাঁদের সঠিক কাজের ব্যবস্থা করা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে৷''

https://p.dw.com/p/1G7Wc
Symbolbild Fenster Putzen
ছবি: Konstantin Yuganov - Fotolia.com

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এক হিসেবে দেখা গেছে, বিদেশে প্রথম নারী শ্রমিক যাওয়া শুরু হয় ১৯৯১ সালেয সে বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪১৬ জন ও কুয়েতে ৪১৭ জনসহ মোট বিদেশে গেছেন ২ হাজার ১৮৯ জন নারী৷ এক পর্যায়ে, ২০০১ সালে ৬৫৯ জন নারী বিদেশে যান৷ এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি৷ ২০০২ সালে গেছেন এক হাজার ২১৬ জন, ২০০৩ সালে গেছেন ২ হাজার ২৫৩ জন৷ এভাবে প্রতি বছরই বেড়েছে নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা৷ ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৫৭৯ জন৷ ২০১২ সালে ৩৭ হাজার ৩০৪ জন৷ আর গেল বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে ৭৬ হাজার ৭ জন নারী৷ তাছাড়া সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে বিদেশে গেছেন ৪৯ হাজার ৩২৬ জন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখলে বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক পাঠানো সম্ভব৷'' তিনি বলেন, ‘‘এতদিন নারীরা যেত মূলত গৃহকর্মী হিসেবে৷ তাই এবার অন্য খাতে শ্রমিক পাঠানো শুরু হওয়াটা বেশ সুখবর৷''

তবে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, যাতে কোনো নারী বিদেশে গিয়ে প্রতারিত না হন৷ এ জন্য দূতাবাসগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে, কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে নারীদের ব্যাপারে৷ প্রয়োজনে ঢাকায় সরকারের আলাদা অফিস খোলা যেতে পারে বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক৷ তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত অদক্ষ শ্রমিকরাই বিদেশে যাচ্ছেন৷ তবে দক্ষ শ্রমিক পাঠালেই লাভ বেশি হবে৷'' এই বিবেচনায় নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও পরামর্শও তাঁর৷

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন৷ ঐ দেশগুলোতে নারীরা পোশাক কারখানায় কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন, আগে যেখানে নারীদের শুধুমাত্র গৃহকর্মীর কাজ দেয়া হতো৷ গত চার বছরে সরকারিভাবে জর্ডানের ৩৮টি পোশাক কারখানায় নিয়োগ পেয়েছেন ১৪ হাজার নারী শ্রমিক৷ এছাড়া প্রতি মাসেই আসছে নতুন কর্মীর চাহিদাপত্র৷ অবশ্য বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় সবচেয়ে কম বেতন পাওয়া অদক্ষ শ্রমিকদের নিতেই আগ্রহ বেশি জর্ডানের৷

জানতে চাইলে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমানে জর্ডানে নারী শ্রমিক যাচ্ছেন পোশাক কারখানায় কাজ করতে৷ এটা অবশ্যই একটি ভালো দিক৷ বাইরে বেশি বেতনে এই শ্রমিকরা কাজ করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে৷'' তবে প্রবাসে নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হওয়ায় দেশের পোশাক খাতেও কর্মপরিবেশ এবং মজুরির উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘এতে শ্রমিকদের মধ্যে তুলনা করার মতো সুযোগ তৈরি হবে৷ এখানে না পোষালে তাঁরা বিদেশে যেতে চাইবেন৷ ফলে মালিকপক্ষ আর একচেটিয়াভাবে মজুরি কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে পারবে না৷''

সরকারি মালিকানাধীন জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল-এর একজন কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জর্ডান, ওমান বা কাতারে আমরা যেসব নারী শ্রমিকদের পাঠাচ্ছি, তাঁদের সপ্তাহে ছ'দিন দিনে আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়৷ চাইলে ওভারটাইমও তাঁরা করতে পারেম৷ চাকরির শর্তানুযায়ী নিয়োগকর্তা, অর্থাৎ কোম্পানি থাকা, তিন বেলা খাওয়াসহ প্রাথমিক চিকিৎসা, এমনকি আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়াও বহন করে৷ চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকরা তিন বছর সেখানে কাজ করতে পারেন৷ আর এরপর চাইলে কোম্পানির সঙ্গে অলোচনা করে মেয়াদও বাড়ানো যায়৷'' তিনি বলেন, অদক্ষ শ্রমিকরা অপারেটর হিসেবে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পাচ্ছেম৷ অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি৷

বোয়েসেল-এর ঐ কর্মকর্তা বলেন, চাকরিদাতা কোম্পানি প্রত্যেকের বেতন থেকে ভবিষ্যৎ তহবিল হিসেবে ছয় শতাংশ কেটে রাখবে৷ এরপর এটি একটি তহবিলে জমা হবে৷ এর পাশাপাশি কোম্পানি দেবে ১২ শতাংশ৷ তার ওপর যোগ হবে লাভ৷ সব মিলিয়ে প্রতি মাসে বেতনের ১৮ শতাংশ টাকা জমা হবে শ্রমিকদের৷ এই বাধ্যতামূলক জমা শ্রমিকদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো বলেও মনে করে এই কর্মকর্তা৷ শ্রমিকরা দেশে ফিরে আসার সময় এই টাকা নিয়ে আসতে পারেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য