1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের পরিণতি

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০

প্রায় ৮০ শতাংশ ছাত্রী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কালে কোন না কোন সময় তারা সবাই মুখোমুখি হয়েছিল যৌন হয়রানির৷ এবং তা ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই৷

https://p.dw.com/p/Lsrv
ফ্রাঞ্জ কাফকার শহর প্রাগছবি: Illuscope

সম্প্রতি চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে মেয়েদের ওপর যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে একটি জরিপ চালানো হয় ৷ একটি গবেষক দল প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে৷

লেঙ্কা একজন ছাত্রী৷ সে বলল, যৌন বিষয়ক কৌতুক বা তা নিয়ে হাসাহাসি করা প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্যদিনের ঘটনা, এমন অভিযোগ ছাত্রীদের৷ অধ্যাপকরাই এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখান বেশি৷ লক্ষ্য, ক্লাসকে আরো আকর্ষণীয় করা৷

Deutschland Tschechien Dominika Huzvarova zur Miss EM gewählt
সুন্দরীদের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন অধ্যাপকরাছবি: picture-alliance/ dpa

লেঙ্কার বয়স ২৫, সমাজবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে সে পড়ছে৷ অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার আগে সম্পূর্ণ অন্য এক চিত্র ছিল তাঁর মনে৷ ছাত্রীদের লক্ষ্য করে অধ্যাপকদের নোংরা মন্তব্য কোন অবস্থাতেই লেঙ্কা আর সহ্য করতে পারছে না৷ লেঙ্কা আরো বলল, আমি এবং আমার বেশ কিছু বান্ধবী ঠিক করেছি কয়েকজন প্রফেসরের ক্লাসে আর যাব না৷ সোজা বয়কট৷ কারণ আমরা মনে করি যে সব নোংরা কথা তারা বলেন আর কটুক্তি করেন তা আমাদের জন্য অপমান ছাড়া আর কিছুই না৷ পর পর কয়েকটি অশ্লীল কৌতুক বা ঘন্টায় ঘন্টায় নোংরা কটুক্তি - সত্যিই বিরক্তিকর৷

টিউশন ফি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লেঙ্কা আর তাঁর বান্ধবীরা ক্লাশ বয়কট করছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ কিন্তু সেটা মোটেও কোন কারণ ছিল না৷ গবেষকদের দল শুধু প্রাগের কার্লস বিশ্ববিদ্যালয় নয় আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জরিপ চালিয়েছে৷ জরিপে অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে আটশ ছাত্রী৷ সবাইকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল অপ্রিয় একটি প্রশ্নের৷ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির শিকার তারা হয়েছিল কি না৷ প্রায় ৭৮ শতাংশের উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ'৷ তারা নিজেরাই এর শিকার অথবা তাদের চোখের সামনে এ ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে৷ পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়ার অজুহাতে অধ্যাপক ছাত্রীকে বাড়িতেও আমন্ত্রণ জানান৷ ইরিনা স্মেটাচকোভা বললেন, প্রায়ই দেখা যায় ছাত্রীদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে প্রফেসররা৷ এবং বেশ স্বাভাবিকভাবেই, সরাসরি৷ কোন লুকোচুরি নেই৷ বিশেষ করে ইমেল বা এসএমএস- এর মাধ্যমে এই আমন্ত্রণগুলো আসে অনেক বেশি৷ অনেক ছাত্রীই তখন বুঝে উঠতে পারে না কি বলবে, জবাব কি হতে পারে ! অনেকে ভীষণ ভয় পায় এই ভেবে যে যদি প্রফেসরের বাড়িতে না যায় তাহলে হয়তো পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবে৷

Besucher in historischen Kostümen in Tschechien
ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রীষ্মের আনন্দ উৎসবেছবি: Transit-Archiv

ক্যাটারিনা কোলারোভা এই জরিপ চালানোর মূল উদ্যোক্তা৷ তিনি জানান, এর চেয়েও অনেক নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটে থাকে৷ তিনি জানান, কোন কোন প্রফেসর ছাত্রীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান৷ শুধু তাই নয়, কোন্ বিশেষ বিশেষ আসন ব্যবহার করে তারা ভোগ করতে চায় সেকথাও তারা স্পষ্টভাবে ছাত্রীদের জানান৷ এর বিনিময়ে ছাত্রীরা পাবে সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের কাংখিত নম্বর৷

প্রশ্ন উঠতে পারে এজন্য কোন প্রফেসর কি তাঁর চাকরি হারাতে পারেন ? তাঁকে কি জবাবদিহি করতে হতে পারে ? বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড কি তা জানে ? সমাজবিজ্ঞানী স্মেটাচকোভা জানালেন, এদেশে কোন পুরুষ যদি কোন মহিলাকে যৌন হয়রানি করে তাহলে তা খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় না৷ এমন কি রাজনীতিকরাও এ বিষয় নিয়ে তেমন কোন কথা বলেন না৷ সবাই মনে করে এ ধরণের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক৷ অনেকের কাছে এসব ঘটনা যেন বিনোদনের মত৷ তারা বুঝতে চায় না বা পারে না যে এর ফলে ছাত্রীদের ওপর মানসিক চাপ কি প্রচন্ড রকমের হতে পারে৷

তবে সবকিছুর পরিবর্তন দেখতে চান স্মেটাচকোভা৷ প্রাগের এই সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন প্রচারপত্র বিতরণ করছেন, জানিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে চলতে হবে, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হতে হবে৷ কিন্তু শুধু এই প্রচারপত্র বিতরণই যথেষ্ঠ নয়৷ তিনি জানান, শুধু এই সব লিফেলেট নয়, অন্যভাবেও বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে৷ সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টরের দায়িত্ব হবে সে অনুযায়ী কাজ করা৷ আমরা কোন অবস্থাতেই ছাত্রীদের ওপর কোন রকম যৌন হয়রানি মেনে নেব না৷

এর কিছুটা ফল পেতে শুরু করেছে প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত নভেম্বর মাসে একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধে এক অধ্যাপক তাঁর চাকরি হারান৷ ছাত্রীকে অধ্যাপক জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান, জোর করে ছাত্রীর কাপড় খোলার চেষ্টা করেন তিনি৷ ভয়ে ছাত্রীটি দুই বছর কাউকে কিছু জানায়নি৷ কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে দু বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল অধ্যাপকটির৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক