1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফরাসি মায়েদের ওপর কাজ ও সংসারের চাপ

২৬ মে ২০১০

''দ্য কনফ্লিক্ট বিটুইন উইম্যান এ্যান্ড মাদার'' বই-এ লিখেছেন, বর্তমান জেনারেশনের মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো, নতুন ডায়াপার ব্যাবহারসহ সন্তানদের প্রয়োজনটাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে নিজেদের দিকে নজর দিতে পারছেন না৷

https://p.dw.com/p/NXAq
ছবি: AP

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি জন্মহার পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ প্রতিটি মহিলার দুটি করে সন্তান৷ ফরাসি দার্শনিক এলিজাবেথ বাডিনটার এই প্রজন্মের মা'দের নিয়ে একটি বই লিখেছেন৷ সেখানে তিনি যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন, তাতে দেখা গেছে, মায়েদেরকে রীতিমত এক নির্দেশনার মধ্যে রাখা হয়, যা তাঁদের জন্যে এক বাড়তি চাপ৷

ফরাসি মায়েরা তাদের সন্তানদের প্রয়োজনটাকেই সবসময় অগ্রাধিকার দেন৷ সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে শিশু মনস্তত্ত্ববিদরা একজন নিখুঁত মা হওয়ার জন্যে যা যা দরকার তার সবকিছু একজন মায়ের কাছ থেকে পাবার জন্যে তাদের ওপরে রীতিমত চাপ প্রয়োগ করে থাকে৷ দার্শনিক এলিজাবেথ বাডিনটার বলেছেন, আর এর ফলাফলে একজন মা'কে,অসংখ্য কাজ করতে হচ্ছে – যা শেষ পর্যন্ত নারী অধিকার রক্ষা করতে পারছে না৷

দার্শনিক বাডিনটার বলেছেন, সামাজিক চাওয়া পাওয়াটা এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে কাজের চাপে একজন ফরাসি মা হিমশিম খাচ্ছেন৷ বাডিনটার ''দ্য কনফ্লিক্ট বিটুইন উইম্যান এ্যান্ড মাদার'' তাঁর নতুন বইএ লিখেছেন, বর্তমান জেনারেশনের মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো, নতুন ডায়াপার ব্যাবহারসহ সন্তানদের প্রয়োজনটাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে নিজেদের দিকে নজর দিতে পারছেন না৷ বাডিনটার একসঙ্গে ঘুমানো এবং বেবী বন্ডিং-এর ব্যাপারে যেসব বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন, তাদের বিরোধিতা করেছেন৷ তিনি তাঁর বই-এ লিখেছেন, বাসায় সমস্ত কাজ করা, এবং অন্যান্য কাজের চাপ একজন নতুন মা' চারিদিক থেকে আটকে ফেলছে৷ বাডিনটার স্পষ্টভাবেই নার্ভে আঘাত হেনেছেন, তাঁর বই-এর বিষয়বস্তু শুধু অসংখ্য টেলিভিশন বিতর্কেরই জন্ম দেয়নি, বইটি বেস্ট সেলার খেতাব অর্জনের দিকেই যাচ্ছে৷

দেশটিতে জন্মহার বেশি হওয়া সত্ত্বেও ফরাসি নিয়ম অনুযায়ী শিশুর বয়স তিন বছর না হওয়া পর্যন্ত, সরকারিভাবে পরিচালিত ডে-কেয়ার এবং কিন্ডারগার্টেনগুলোতে রাখা য়ায় না৷ অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলো – যেমন জার্মানি এবং ইটালিতে জন্মহার কম, এবং এই দেশগুলোতে পরিবারের সবাইকে কাজ করতে কমই দেখা যায়৷ বাডিনটার বলেন, কাজ করাটা জরুরি৷ তবে এই ক্ষেত্রে এটাও জরুরি, যাতে কোন মা তাদের পছন্দের কারণে নিজেকে দোষি মনে না করেন৷ তিনি বলেন, ''মাতৃত্বকালিন ছুটির পর কোন মা যখন তার তিন অথবা চার মাস বয়সি শিশুকে নার্সারিতে রেখে কাজে ফিরে যান, তখন সবাই এটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখে৷ ফ্রান্সে অঙ্গুলি নির্দেশ করে দেখানোর কোন বিষয় নয় এটি৷ কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য দেশে, অন্য কারো কাছে বাচ্চাকে রেখে যাওয়াটা ভ্রূকুটির জন্ম দেয়৷ আসলে কাজে ফিরে যাবার পর ফরাসি মায়েদের সহায়তা করা হয়৷ কাজের বাইরের বিষয়গুলো দেখতেও, উৎসাহিত করা হয়৷ এর অর্থ হচ্ছে, অন্যান্য দেশের চেয়ে, ফরাসি মহিলাদের কাছে মাতৃত্ব কোন বাধা নয়৷''

বাডিনটার বলেন, ফ্রান্স যদি এই ঐতিহ্য অনুযায়ীই চলতে থাকে তবে ফ্রান্সেও শিশু জন্ম হার কমে আসতে পারে৷ বিশেষ করে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর যে চাপ থাকে একজন মায়ের ওপরে, সেই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাডিনটার৷ তিনি বলেন, '' নতুন নিয়ম শিশুকে বেশদিন বুকের দুধ দেবার জন্যে একজন মা' কে চাপের মধ্যে রাখে৷ তার মানে হচ্ছে, ছয় মাস বুকের দুধ দিতে চাইলে মা'কে সবসময় বাচ্চার কাছাকাছি থাকতে হয়, ২৪ ঘন্টার যেকোন সময় বাচ্চা দুধ চাইতে পারে৷ আর এই কারণেই একজন মহিলাকে বাসায় ফিরে আসতে হয়৷ বলা হয়ে থাকে, মায়ের বুকের দুধ শিশুকে প্রাথমিক রোগ থেকে রক্ষা করে৷ কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকিগুলো যদি একটু ভালো করে দেখা যায় তাহলে মনে হবে অনেক সমীক্ষাই পক্ষপাতদুষ্ট৷''

কয়েকজন মহিলা এবং কয়েকটি গোষ্ঠী বাডিনটারের এই দৃষ্টিভঙ্গির কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, নিজের ইচ্ছেতেই বা নিজের পছন্দেই তাঁরা শিশুর দায়িত্ব পালন করেন, কেউ বা কোন কিছু তাঁদেরকে বাধ্য করে না৷

তিন সন্তানের মা ৪১ বছরের সেগোলেন ফিনে৷ স্বামীর সঙ্গে তিনি একটি কোম্পানি চালান৷ সেখানে বিক্রি করা হয়, বুকের দুধ কাওয়ানোর সুবিধেজনক পোশাক – যা বিক্রি করী হয় অনলাইনে৷ ফিনে বলেন, ''আমি আমার তিন সন্তানকেই বুকের দুধ খাইয়েছি৷ আমি একজন এম বি এ৷ আমি সবসময়ই কাজ করেছি৷ আমার নিজের ক্যারিয়ার রয়েছে৷ আমি নিজেই আমার কোম্পানি চালায়৷ বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্যে কোন কিছুই বদল হয়নি৷ আমি এটা ভালোবাসি৷ আমার বাচ্চাদের জন্যেও এটি দারুণ ব্যাপার, আর এতে ব্যক্তি হিসেবে আমার কোন কিছুই বদলায়নি৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন