1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুটবল পরিবর্তন করছে কেনিয়ার মেয়েদের জীবন

১৯ জুলাই ২০১০

ফুটবল পুরুষদের খেলা৷ দিন পাল্টেছে৷ মেয়েরাও মেতেছে ফুটবলে৷ কেনিয়ার কিলিফি অঞ্চলে মেয়েদের ফুটবল খেলায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে৷ যা কিছু এতদিন পুরুষদের আয়ত্বে ছিল এখন মেয়েদের কাছেও তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ ফুটবল এর মধ্যে একটা৷

https://p.dw.com/p/OOG4
ফুটবল মেয়ে কেনিয়া ‘মুভিং দ্যা গোলপোস্টস' এমটিজি জীবন পরিবর্তন football kenya women MTG moving the goalposts life change marriage teenage
ফুটবল খেলছে কেনিয়ার মেয়েরাছবি: DW

সামাজিক জীবনে মেয়েদের এগিয়ে আসার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য কিলিফি অঞ্চলের মেয়েদের প্রেরণা দেওয়া হচ্ছে৷

টিনাওয়েজা – এর অর্থ হল আমরাও তা করতে পারি৷ কেনিয়ার একটি সংস্থা নাম ‘মুভিং দ্যা গোলপোস্টস' সংক্ষেপে এমটিজি৷ এই সংস্থাটিই কেনিয়ার কিলিফি অঞ্চলের মেয়েদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে৷ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো যাতে মেয়েরা নিজেরাই নিতে পারে তার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে৷

দুটি গোলপোস্ট, একটি ফুটবল আর খেলার জন্য খোলা জায়গা – এর বেশি কিছু প্রয়োজন নেই৷ কিলিফি অঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার মেয়ে ফুটবল খেলে৷ কেনিয়াতে মেয়েরা ফুটবল খেলছে এই ব্যাপারটাই অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়৷ কারণ এতদিন ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে, ফুটবল ছেলেদের খেলা৷

নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া

মোম্বাসার উত্তরে সোকোকে শহরে ২২ জন মেয়ে ফুটবলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ ধুলায় মাখা ফুটবলের মাঠ৷ এখানে একটি ট্রেনিংক্যাম্প রয়েছে৷ এখানেই মেয়েদের ফুটবল খেলা শেখানো হচ্ছে৷ মার্গারেট জানান,‘‘ কিভাবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা-ই মেয়েদের শেখানো হচ্ছে৷ প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে হবে, নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে তা সে যে ধরণের সিদ্ধান্তই হোক না কেন৷ সাধারণত দেখা যায়, একটি মেয়ের জীবনকে ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেয় বাবা, ভাই অথবা স্বামী৷ অনেক সময় দেখা গেছে ভাই ছোট হলেও সে বড় বোনের হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷''

Flash-Galerie MTG in Kenia
ছবি: DW

মার্গারেট বেলেওয়া ‘মুভিং দ্যা গোলপোস্ট্স' বা এমটিজি প্রকল্পের ম্যানেজার৷ ‘মুভিং দ্যা গোলপোস্ট্স' অর্থাৎ গোলপোস্ট সরিয়ে নেওয়া৷ এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে মেয়েদের আরো সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ প্রতিটি মেয়ে যেন নিজের প্রতিটি বিষয়ে আরো সচেতন হয় তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে৷ তবে তা করা হচ্ছে ফুটবল খেলার মধ্যে দিয়ে৷ বোঝানো হয়েছে এতদিন যা পুরুষরা করতো তা এখন মেয়েরাও করতে পারে৷ মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই বা থাকতে পারে না৷ যে সব বাধার সম্মুখীন এতদিন মেয়েরা হয়েছে সে সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে এখন৷

পরিবর্তন এসেছে লিডিয়ার জীবনে

লিডিয়া কাসিনা জানান, ফুটবল খেলার মধ্যে দিয়ে যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে তা সত্যি সফল হচ্ছে৷ লিডিয়ার ভাষ্য, ‘‘আমি এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত হতে পেরে সত্যিই খুব আনন্দিত৷ যদি এই প্রকল্পটি চালু না হত তাহলে আমি হয়তো এখন, এই মুহূর্তে অন্য কোথাও থাকতাম৷ হয়তো এতদিনে আমার বিয়ে হয়ে যেত, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আমি ব্যস্ত হয়ে যেতাম৷ কিন্তু আমি পড়াশোনা করছি, নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ আমি আমার পরিবারের দেখাশোনা করতে পারবো৷ আমি নিজে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকি৷ আমি আমার বাবা-মাকে দেশে টাকা পাঠাই৷ আমি তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সক্ষম৷''

লিডিয়া ‘মুভিং দ্যা গোলপোস্টস' প্রকল্পে কাজ করছেন৷ মেয়েদের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের বিষয়েও মেয়েদের সাহায্য এবং সহযোগিতা করে থাকেন লিডিয়া৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই লিডিয়ার শরণাপন্ন হয় মেয়েরা৷ লিডিয়া আরো বললেন, ‘‘অনেক মেয়ে আছে যারা স্কুলে যাচ্ছে অথচ সেই সময়েই তারা গর্ভবতী হয়ে পড়ছে৷ যেসব মেয়ের বয়স ১৪ থেকে ২৫ তাদের মধ্যে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷ ছেলেদেরও একই অবস্থা৷''

Flash-Galerie MTG in Kenia
লিডিয়া কাসিনা’র জীবনে পরিবর্তন এনেছে ফুটবলছবি: DW

এগিয়ে যাচ্ছে এমটিজি

এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই ‘মুভিং দ্যা গোলপোস্টস' হাতে নিয়েছে এই বিশেষ প্রকল্পটি৷ সব ধরণের সমস্যা নিয়ে এখানে কথা বলা হয়, মেয়েদের সতর্ক করা হয়৷ যে কোন ধরণের সমস্যার প্রতিকার কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয় ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে৷ অনেক মেয়ের গ্রাম পর্যন্ত এমটিজি-র কর্মীরা গিয়েছে৷ ফুটবলে অংশগ্রহণ ছাড়াও মেয়েদের অনেক বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেছে৷

সমস্যা সম্পর্কে লিডিয়া জানালেন, ‘‘অনেক সময় মেয়েরা অনেক বিষয়ই ভুল বোঝে৷ সঠিক ধারণা বেশিরভাগ মেয়েরই থাকেনা৷ সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করি৷ ভ্রান্ত ধারণা থেকে মেয়েদের বের করে আনি৷ সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য দেই আমরা৷ তবে আমরা কখনোই বলি না যে বন্ধু থাকা উচিত না বা বন্ধুর সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত না৷ তবে পড়াশোনা, নিয়মিত স্কুলে যাওয়াকেই আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি৷ এসব মেলামেশার কারণে কোন মেয়ে যেন গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সেজন্য আমরা কনডম ব্যবহারের ওপর জোর দেই৷''

স্কুল ছাত্রী সারা কিটসাও৷ ১৭ বছরের এই মেয়েটি ফুটবল খেলায় বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছে৷ ফুটবল নিয়ে সে বাতাসের বেগে এগিয়ে যায় মাঠে৷ সারা জানে এ জন্য সে এমটিজি-র কাছে কৃতজ্ঞ৷ নয়তো এ সুযোগ সে কখনোই পেত না৷ সারার কৃতজ্ঞতা ভরা সুর,‘‘আমাকে পড়াশোনায় সাহায্য করছে এমটিজি৷ আমার বাবা-মা যখন স্কুলের বেতন দিতে পারেনি তখন এই সংস্থাটি এগিয়ে এসেছে৷ এই কারণেই আমি এখনো আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক