1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেয়ার ট্রেড বাণিজ্যে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যরক্ষা

২৪ মে ২০১১

ফেয়ার ট্রেড বা ন্যায্যবাণিজ্যের পণ্য আজকাল শুধু বিশেষ দোকানে নয়, প্রায় সব ধরনের দোকানেই পাওয়া যায়৷ ফেয়ার ট্রেড'এর লেবেল পাওয়া কোম্পানিগুলো শ্রমিক ও কৃষকদের সুযোগ সুবিধা বিশেষ করে স্বাস্থ্যরক্ষারওপর জোর দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/11MQh
ফেয়ার ট্রেড ছাপ মারা পণ্যের সম্ভারছবি: TransFair

কেনিয়ার রিফট ভ্যালি প্রদেশের একটি শহর নাইভাশার এক গোলাপ খেত৷ নেদারল্যান্ডস'এর এক শাখাপ্রতিষ্ঠান ‘ভান ডেন ব্যার্গ লিমিটেড' কোম্পানির এই গোলাপ খেতে ১৫০০ শ্রমিক কাজ করেন৷ জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস'এর ক্রেতারা শীতকালেও সুলভ মূল্যে সুন্দর সুন্দর গোলাপ ফুল পান এই খেত থেকে৷ কেনিয়ার ঝকঝকে রোদে ও গ্রিনহাউসে বেড়ে ওঠে লাল ও হলদে গোলাপগুলো৷

Flash-Galerie TransFair Reisbauer aus Indien
ভারতের এই ধান চাষীও ফেয়ার ট্রেড কাঠামোর সুবিধা পানছবি: TransFair e.V./C. Nusch

শ্রমিক বান্ধব পরিবেশ

কিছুদিনের মধ্যেই ‘ফেয়ার ট্রেড' লেবেল পাওয়ার ইচ্ছা কোম্পানিটির৷ এ জন্য অবশ্য বেশ কয়েকটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ গড়ে তুলতে হবে সমাজ ও শ্রমিক বান্ধব এক পরিবেশ৷ কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ৩২ বছর বয়সি আবিল নান্দি তিন বছর ধরে কাজ করছেন এই গোলাপ ফুলের খামারে৷ আগে তিনি কেনিয়ার অন্যান্য ফুলখেতেও কাজ করেছেন৷ তাই সেসব খামারের সঙ্গে রিফট ভ্যালির এই খামারের তুলনা করতে পারেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘যেসব খামারে আমি আগে কাজ করেছি, সেখানে রবারের জুতা ও গ্লাভস ছাড়াই কাজ করতে হত৷ কোনো অ্যাপ্রনও পাইনি৷ এই খেতে আমি এসব কিছুই পেয়েছি৷ এটা একটা বিরাট পার্থক্য৷''

আবিলের দুই সন্তান৷ এর বেশি চাননা তিনি৷ অন্যান্য খামারের তুলনায় বেশি বেতন পেলেও খুব বেশিও তা নয়৷ হেসে জানান আবিল৷ তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য জায়গায় ৩৫০ ইউরো দিয়ে শুরু করেন শ্রমিকরা৷ এখানে প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গেলে একজন ৪২০ ইউরো পর্যন্তও পেতে পারে৷ উচ্চ প্রশিক্ষণ নিলে বেতন হতে পারে ৫৫০ ইউরো৷ আমি এখানে এসেছি ভাল বেতন ও কাজের পরিবেশের জন্য৷''

Rosen mit Max Havelaar Logo FLASH-Galerie
ফেয়ার ট্রেড ছাপ অনেকের কাছেই পণ্যকে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলেছবি: Max Havelaar Stiftung

স্বাস্থ্যরক্ষায় বিশেষ নজর

যে সব কোম্পানি ফেয়ার ট্রেড লেবেল পেতে চায়, তাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয়৷ এ প্রসঙ্গে আবিল বলেন, ‘‘যে সব রাসায়নিক পদার্থ আমরা খেতে ব্যবহার করি, গ্লাভস পরে কাজ করলে তার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ গাছের চারাগুলিকে স্প্রে দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমাদের গ্রিনহাউসে ঢোকা নিষেধ৷ এ ছাড়া অন্যান্য অসংখ্য নিয়মকানুন রয়েছে৷ এসব বিবেচনা করলে মনে হয় আমার স্বাস্থ্য এখানে সত্যি সত্যি সুরক্ষিত৷''

শ্রমিকরা ‘ফান ডেন ব্যার্গ' কোম্পানিতে একটি ফেয়ার ট্রেড কমিটি গঠন করে একত্রিত হয়েছেন৷ এর মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের ধ্যান ধারণা, চিন্তা ভাবনা প্রতিফলিত করতে পারবেন৷ নজর রাখতে পারবেন নিজেদের দেখভালের দিকে৷ এই কমিটির মাধ্যমে শ্রমিকরা অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার চেষ্টা করছেন, যার সুফল তারা সবাই মিলে ভোগ করতে পারবেন৷ কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন ক্রিস্টিয়াবেলে থানজি৷ তিনি জানান, ‘‘ফেয়ার ট্রেডের অতিরিক্ত মুনাফা সরাসরি আমাদের কাছে অর্থাৎ তৃণমূলে গিয়ে পৌঁছাবে, কর্তৃপক্ষের কাছে নয়৷ পরিচালকমণ্ডলীর সাথে সম্পর্ক নেই এর৷ প্রতিটি ফুলের বিক্রি থেকে বোনাস পাওয়া যাবে৷ অতিরিক্ত অর্থ শ্রমিক ও কমিউনিটির কাজে লাগবে৷''

Fairtrade Kaffee
ফেয়ার ট্রেড কফি জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয়ছবি: picture alliance/dpa

লভ্যাংশ কাজে লাগানো

অতিরিক্ত অর্থ আরো কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে শ্রমিকদের পরিকল্পনার কোনো অভাব নেই৷ ক্রিস্টাবেলে আরো জানান, ‘‘আমাদের এলাকায় একটি কূপ খনন করতে পারি, এক টুকরো জমি কিনে সবাই ব্যবহার করতে পারি৷ কিংবা স্কুল ও টয়লেট তৈরি করতে পারি৷ ছাত্রদের জন্য বৃত্তি বা শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা করতে পারি৷''

‘ফান ডেন ব্যার্গ' কোম্পানিতে শ্রমিকদের জন্য কিছু কিছু সুব্যব্যবস্থা এখনই রয়েছে৷ ফেয়ার ট্রেড লেবেল পেতে হলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে বিশেষ সুনজর রাখতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু পদক্ষেপ বেশ আগে থেকেই নেয়া হয়েছে৷ কোম্পানিটির নিজস্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে৷ এখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিখরচায় চিকিৎসা করাতে পারেন৷ তাদের পরিবারের চিকিৎসার জন্যও অর্ধেক খরচ লাগে৷

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি দৃশ্য৷ ২০ বছর বয়সি এমিলি তার নবজাত বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের অপেক্ষায় একটি বেঞ্চে বসে আছেন৷ প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য আসা ৩০/৪০ জন রোগীর মধ্যে তিনিও একজন৷ বাচ্চাটার জ্বর হয়েছে৷ নার্স আগ্নেস তাকে খুব দরদের সঙ্গে ডেকে আনেন৷ আগ্নেস এখানে কাজ করছেন বহুদিন ধরে৷ তিনি ‘ফান ডেন ব্যার্গ' কোম্পানির কাজের মান সম্পর্কে গর্বিত, বিশেষ করে যে ভাবে এইচআইভি রোগটি নিয়ে মাথা ঘামানো হয় এখানে৷ এ ব্যাপারে শ্রমিকদের নিয়মিত পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়৷ আগ্নেস বলেন, ‘‘আমরা ৩০ জন রোগী সম্পর্কে জানি, যাদের এখানে চিকিৎসা করা হচ্ছে৷ কিন্তু এছাড়াও আরো অনেক রোগী আছেন, যাদের সম্পর্কে আমরা কোনো খবর রাখিনা৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক