1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রান্সে আইন করেই নিষিদ্ধ হলো বোরখা

১৭ এপ্রিল ২০১১

ফ্রান্সে জনসমক্ষে কোন অবস্থাতেই বোরখা পরা যাবে না, পরলে আর্থিক জরিমানা৷ যারা এতদিন বোরখা পরতেন তারা এখন কী করবেন?

https://p.dw.com/p/10uwz
ছবি: AP

গত সপ্তাহে ফ্রান্সে বোরখা পরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তা আইন করেই করা হয়েছে৷ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই আইনের খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয় সংসদে৷ বোরখা পরাকে প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি দেখেছিলেন অন্যভাবে৷ তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, ফ্রান্সের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর বোরখা একটা বিশাল হুমকি৷ নারী-পুরুষের মধ্যে সমানাধিকার তাতে ক্ষুণ্ণ হয়৷ ঠিক কীভাবে, তা কিন্তু তিনি বলেননি৷ পরে জানা গেছে ডান-পন্থী ভোটারদের টানতেই তিনি এই ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন৷

প্রায় এক বছর ধরে চলে এই বোরখা নিষিদ্ধ করা নিয়ে তর্ক এবং বিতর্ক৷ প্রায়ই উত্তপ্ত থেকেছে ফ্রান্স৷ ফ্রান্সের রেডিও আর টেলিভিশন সারাক্ষণই বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, ‘‘যদি এই আইনটি পাশ হয় তাহলে যারা এতদিন বোরখা পরতেন তারা কি বোরখা পরা ছেড়ে দেবেন? নাকি এরপরও বোরখা পরে বের হবেন?'' প্যারিসের কাছেই ওবারভিয়ের মানুষরা পুরো বিষয়টি দেখছে ভিন্নভাবে৷ ওবারভিয়ের মসজিদে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ইমাম সবার উদ্দেশ্যে বললেন,‘‘ আপনারা জানেন এই দেশের মানুষদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে ভীতি জন্মেছে৷ এখন পুলিশ রাস্তায় নামাজ পড়াকেও বরদাস্ত করবে না৷''


বোরখা হচ্ছে ‘চলমান জীবন্ত কফিন' – ফরাসী অভিবাসী দপ্তর

মসজিদের পাশেই পুরনো একটি অফিস বিল্ডিং৷ সেখানে কার্পেট বিছানো৷ সবাই সেখানে নামাজ পড়ে৷ রশিদ জায়েরি বলল, ফ্রান্সের বেশির ভাগ স্থানেই মুসলমানদের সহজে মেনে নেয়া হয়েছে৷ কখনোই কোন সমস্যা হয়নি মুসলমানদের৷ তবে তিনি স্বীকার করলেন যে, গত কয়েক বছরে চিত্রটা পাল্টেছে৷ রাজনীতিকরা খোলাখুলিভাবেই ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের সমালোচনা করছে৷ বোরখা পরা নিষিদ্ধ করা তারই একটা অংশ৷ রশিদ জায়েরি জানালেন,‘‘এধরণের আইন করা অন্যায় সেটা আমরা মনে করি৷ তার মানে এই নয় যে আমরা বোরখা পরাকে সমর্থন করছি৷ আমরা মনে করি এই আইন হল শুধু একটি অজুহাত৷ এই আইনের মাধ্যমে ফ্রান্সের মানুষদের মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে –‘দেখ তোমার আশেপাশে কত মুসলমান রয়েছে৷ এরা ভয়ঙ্কর৷''

Islam Frau mit Schleier
ছবি: AP

অনেক মুসলমান এ ধরণের মনোভাবের জন্য প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজিকে দায়ী করেন৷ তাদের মতে, ইসলাম বিরোধী মনোভাব এই প্রেসিডেন্টের বেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রখর হয়েছে৷ এই প্রেসিডেন্ট ইসলাম ধর্মকে এমন একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যে সবাই তাদের নিজের ব্যক্তিগত, আসল সমস্যার কথাই ভুলে গেছে৷ দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ৷ অথচ সেটা নিয়ে কোন কথা নেই, কোন উচ্চবাচ্যও নেই৷

মসজিদের যে অংশে মহিলারা নামাজ পরেন, তাদের সবার পরনে লম্বা পোশাক এবং সবার মাথা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা৷ খুবই অল্প সংখ্যক কয়েকজন বোরখা অর্থাৎ নিকাব পরা৷ তাদের শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে৷ গোটা ফ্রান্সে দুই হাজারেরও কম মহিলা নিকাব পরে চলাফেরা করেন৷

২২ বছর বয়স্ক সোমেয়া বললেন, ‘‘আমি নিকাব পরে নিজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছি৷ আমি খোদা এবং আমার স্বামীর জন্য নিজেকে এভাবে ঢেকে রাখি৷ শুধু আমার স্বামীই আমার পুরো মুখ দেখার অধিকারী৷ শুধুমাত্র আমার স্বামীই আমার রূপ, আমার সৌন্দর্য দেখতে পাবেন৷''

সোমেয়া জানান, তিনি তার নিকাব সরিয়ে নেবেন৷ এছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই৷ তবে তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতায় সরকার হস্তক্ষেপ করেছে৷

নিকাব সরাবেন না মোরভান

আঠারো বছর বয়সী সারাহ মোরভান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন৷ মুসলমান হওয়ার পর থেকেই তিনি নিকাব পরা শুরু করেন৷ তিনি রাস্তায় বের হওয়ার আগে কালো রঙের হাত মোজা পর্যন্ত পরে নেন৷ এক চুল পরিমাণ ত্বকও দেখা যায় না৷ মোরভান কোন অবস্থাতেই নিকাব পরা বন্ধ করবেন না৷ নতুন আইন থাকা সত্ত্বেও না৷ তিনি জানান, এখন বেশির ভাগ সময়েই তিনি বাড়িতে থাকবেন৷ তাঁর মেয়ের বয়স তিন মাস৷ দিনের বেলা মাঝে-মাঝে মেয়েকে নিয়ে বের হন৷ তা এখন থেকে পুরোপুরি বন্ধ৷ ক্ষুব্ধ মোরভান বললেন,‘‘নিকাব পরার সঙ্গে আবেগ, ধর্মের প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা জড়িত৷ অনেকের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা যায়৷ সমাজ থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রাখা যায়৷''

আর ঠিক একারণেই ফরাসি সরকার এ ধরণের একটি আইন প্রণয়নের কথা ভেবেছেন৷ প্রেসিডেন্ট সার্কোজি বলেছেন, বোরখা এবং নিকাব একটি মেয়েকে সমাজ থেকে, নিজের সত্তা থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়ে আসে৷ ফরাসী অভিবাসী দপ্তর বোরখাকে ‘চলমান জীবন্ত কফিন' বলে আখ্যা দিয়েছে৷

ফ্রান্সে এখন বোরখা পরে কেউ যদি রাস্তায় বের হয় তাহলে তাঁকে ১৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হবে৷ কেউ যদি কোন মেয়ে বা মহিলাকে বোরখা বা নিকাব পরার জন্য জোর করে, তাহলে তাঁর জরিমানা হবে ত্রিশ হাজার ইউরো পর্যন্ত এবং এর সঙ্গে কারাদণ্ডও হতে পারে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন