1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রান্সে বোরখা নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজনৈতিক হাওয়া গরম

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০

ফ্রান্সে মুসলমান মেয়েদের বোরখা পরার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক হাওয়া বেশ গরম হয়ে উঠেছে৷ প্রকাশ্যে বোরখা পরে চলাফেরা করা যাবে কিনা সে বিতর্ক পৌঁছে গেছে ফ্রান্সের সংসদ পর্যন্ত৷

https://p.dw.com/p/LzZc
বোরখা পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরিকল্পনা চলছেছবি: Dzevad Sabljakovic

জানুয়ারি মাসের শেষে ফরাসি সংসদের একটি কমিটি বোরখা পরার বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে৷ এই যুক্তিকে সমর্থন করছে সংসদের ডান এবং বামপন্থী রাজনীতিকরা৷ এমনকি ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি পর্যন্ত বলেছেন, ফ্রান্সে এ ধরণের পোশাক পরিধান করা যাবে না৷ বোরখা যা পুরো শরীর আবৃত করে রাখে, মুখ ঢাকা থাকে নেকাবে শুধু চোখ দুটো দেখা যায়৷ প্রেসিডেন্ট সার্কোজি নিজেউ বলেছেন, ফ্রান্সে সম্পূর্ণ শরীর এমনকি পুরো মুখ ঢেকে চলাফেরা করা যাবে না৷ সেটা গ্রহণযোগ্য নয়৷

এখন অন্যান্য সাংসদদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আইন করে ফ্রান্সে বোরখা পরা নিষিদ্ধ করা সম্ভব কি না, সেটা সঠিক কাজ হবে কিনা৷ যদি নিষিদ্ধ করা হয় তবে তা কিভাবে করা হবে, কোথায় কোথায় করা হবে৷ তবে সাংসদদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে মতৈক্য৷ একদল বলছে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা কোন ব্যাপারই না৷ সে দিকেই এগিয়ে যাওয়া উচিৎ৷

Sarkozy Rede in Davos beim Weltwirtschaftsforum
বোরখা ফ্রান্সে গ্রহণযোগ্য নয় - সার্কোজিছবি: AP

প্রতি শুক্রবার প্যারিসের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা গুত দ’র -এ মুসলমানরা ভীড় করেন জুম্মার নামাজ আদায় করতে৷ সেখানে রয়েছে এল ফাতেহ মসজিদ৷ প্রতি শুক্রবার সেখানে প্রায় এক হাজারেরও বেশি মুসলমান আসেন৷ মসজিদের ভেতর জায়গা না হওয়ায় অনেকই রাস্তায় নামাজ পড়েন, সঙ্গে নিয়ে আসেন জায়নামাজ, পাটি বা কাগজের শক্ত বোর্ড৷ পুরো রাস্তা তখন আটকে যায়৷ পাঁচ বছর আগেও এই এলাকায় বোরখা পরা কোন মহিলা দেখা যেত না৷ এখন এক ঘন্টায় অন্তত তিন থেকে চারজন বোরখাধারী মহিলা অনায়াসেই চোখে পড়বে৷ যেমন মালি থেকে আগত এই মহিলা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা বললেন, ‘‘বোরখা আমি আনন্দের সঙ্গে পরি৷ এবং এটা পুরোপুরি আমার সিদ্ধান্ত৷ অনেকেই অবশ্য অনেক কিছু আমাকে বলেছে৷ আমাকে ইঙ্গিত করে নানা রকমের মন্তব্যও করা হয়৷ কিন্তু বোরখা পরা আমার অধিকার৷ সবার ইচ্ছেমত পোশাক পরার স্বাধীনতা রয়েছে৷’’

ফ্রান্সের গোয়েন্দা দপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ঠিক কতজন মহিলা বোরখা পরে রাস্তায় বের হন তা খুঁজে বের করতে৷ দেখা যায়, প্রায় দু হাজার মহিলা বোরখা পরেন৷ তবে ব্রিটেনের তুলনায় বোরখা পরিহিত মহিলার সংখ্যা ফ্রান্সে অনেক কম৷ এ কারণেই যারা বোরখার বিরুদ্ধে তাদের দাবি : ‘অঙ্কুরেই এর বিনাশ হোক ’৷ নয়তো ব্রিটেনের মত অবস্থা হবে ফ্রান্সের৷ এবং সেটা কেউই দেখতে চান না৷

Fashionweek in Paris, Frankreich: Chanel Kollektion
সব ধরণের পোশাক পরা যাবে ফ্রান্সে - শুধু বোরখা নয়ছবি: picture alliance/dpa

সিহেম হাবচি একটি নারীবাদি সংস্থার সভাপতি৷ প্রতিবাদমুখর কন্ঠ তাঁর৷ তাঁর কাছে নারী নির্যাতনের একটি হাতিয়ার হল এই বোরখা৷একই সঙ্গে এই বোরখা হল নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার যন্ত্র৷ বোরখা মেনে নেয়ার অর্থ হল বৈষম্যকে মেনে নেয়া৷ তিনি বলেন, আমরা যদি এর বিরোধিতা এখনই না করি তাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে৷ যদি ব্রিটেনের দিকে তাকানো যায় তাহলে আমরা দেখবো যে, বোরখা বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ এই বিষয়টি সমাজের অত্যন্ত গভীরে প্রবেশ করেছে৷ বোরখা নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জ্বলে উঠবে সবার আগে৷ বোরখার সমর্থকরা এই সংগঠনগুলোর মধ্যেও ঢুকে গেছে৷ আফগানিস্তানের তালেবান জঙ্গিদের আমরা কি করে প্রতিহত করবো যদি খোদ ইউরোপেই এই সমস্যা সামলানো না যায় ?’’

সংসদের কমিটি দুটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে৷ প্রথমত, তারা চাচ্ছে একটি প্রস্তাব পাশ করা হোক যেখানে বোরখা পরা নিষিদ্ধ করা হবে৷ দ্বিতীয়ত, প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়ার পর সাংবিধানিক আদালতের পরামর্শ অনুসারে সরকারি অফিসে, আদালতে, জনসম্মুখে বোরখা পরে উপস্থিত হতে দেয়া হবেনা৷ মহিলারা যদি কোন সরকারি অফিসে কোন কাজে যান তাহলে তাদের মুখের নেকাব সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলতে হবে৷ এমনকি রাষ্ট্রীয় যানবাহনে চলাফেরা করতে হলেও নেকাব সরিয়ে ফেলতে হবে৷ যুক্তি দেখানো হচ্ছে প্রকাশ্যে যাতায়াতের জন্য যে যাত্রী টিকিট কিনছেন তাঁর মুখ যেন দেখা যায়, তাঁকে যেন সনাক্ত করা যায়৷

ফরাসি মুসলিম পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মুসাভি৷ তিনি নিজেও বোরখার বিরুদ্ধে৷ তবে বোরখা নিষিদ্ধ করার জন্য আইনের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন না৷ মুসাভি জানান, ‘‘যদি আইন করা হয় তাহলে রাস্তায় সব সময় পুলিশ থাকবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে৷ যদি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে তাহলে প্রত্যক্ষদর্শীরা সঙ্গে সঙ্গে তা মোবাইল ফোন বা ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দেবে৷ বোরখা নিষিদ্ধ হবার কারণে ফ্রান্স নিজেই সমালোচনার সম্মুখীন হবে, এটা ফরাসি জাতির জন্য কোন গৌরবের কথা নয়৷’’

Burka
শুধু চোখ দেখা গেলেই যথেষ্ঠ নয়ছবি: Dzevad Sabljakovic

ফ্রান্সে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ জ্যাক মিয়ার্দ৷ বোরখা নিষিদ্ধকরার পক্ষে তিনি৷ তাঁর মতে একবার আইন করা হলে তা পালনে কোন সমস্যা হবে না৷ তিনি বেশ জোর দিয়েই বললেন, খুব সহজ কথা৷ কেউ যদি নেকাব পরে রাস্তায় বের হয় তাহলে তাঁকে সোজা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ অবশ্য কেউ যদি তা একেবারেই আইন মান্য করতে অস্বীকার করে তাহলে ৭৫০ ইউরো জরিমানা করা যেতে পারে৷ এবং আইন নিয়ে খেলা করার সাহস তখন আর কেউ পাবে না৷ অনেকেই বলছে, আইন প্রণয়ন করা এত সহজ হবে না৷ আমি মোটেই তা মনে করি না৷ কারণ আমরা দেখেছি স্কুলে হিজাব পরে ঢোকা নিষিদ্ধ করার পর সবাই তা মেনে নিয়েছে, কোন ঝামেলা হয়নি৷

২৮ বছরের মাবরুকা বুনিয়াহ বোরখা এবং নেকাব - দুটোই পরেন৷ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন৷ তিনি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি অমানবিক৷ আমি আতঙ্কে সারারাত ঘুমাতে পারি না৷ আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আর কখনো আমার পরিবারকে দেখতে পাবো না৷ আমার জীবন যাপন হবে অস্বাভাবিক৷ আমরা কোন্ অপরাধ করেছি যে আমাদের এ ধরণের শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷ আমরা নাকি উগ্রপন্থী৷ আমাদের শুধু অপমান করা হচ্ছে৷’’

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক