1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রেডেরিক শোপ্যাঁ - দ্বিশত জন্মবর্ষ

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০

বিশ্বখ্যাত সংগীতস্রষ্টা ফ্রেডেরিক শোপ্যাঁর দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজন করা হয়েছে নানা রকমের অনুষ্ঠানের৷ বিশেষ করে তাঁর জন্মভূমি পোল্যান্ডে শুরু হয়েছে এক ম্যারাথন কনসার্ট৷

https://p.dw.com/p/MAp8
শোপ্যাঁ’র সংগীতের সিডি কভার

অসাধারণ প্রতিভাশালী এই শিল্পী বেঁচে থাকতেই পরিণত হয়েছিলেন এক কিংবদন্তিতে৷ ১৮১০ সালে ১লা মার্চ ওয়ারশর কাছে ছোট্ট গ্রাম সেলাসোভা ভোলায় জন্ম হয় শোপ্যাঁর৷ বাবা ছিলেন ফরাসি, মা পোলিশ৷ মাত্র ৪ বছর বয়সেই পিয়ানোতে হাতে খড়ি তাঁর৷ ১৮১৭ সালে ৭ বছর বয়সে প্রথম পিয়ানো সংগীত রচনা করেন তিনি৷ প্রথম কনসার্ট দেন ৮ বছর বয়সে৷ তাঁর সংগীতের সুর ও তালে লক্ষ্য করা যায় পোলিশ লোকসংগীতের প্রভাব৷ ১৮২৯ সালে কনসার্টে অংশ গ্রহণ করার জন্য ভিয়েনার উদ্দেশে প্রথম বিদেশ যাত্রা তেজোদীপ্ত তরুণ পিয়ানিস্ট শোপ্যাঁর৷

১৮৩১ সালে পোল্যান্ডের বিপ্লব ব্যর্থ হলে স্বদেশে আর ফিরে যাওয়া হয়নি তাঁর৷

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু প্যারিসে থিতু হন শোপ্যাঁ৷ পরিচিত হন সাহিত্য ও শিল্পাঙ্গনের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সঙ্গে৷ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে প্রতিভাধর সংগীতকার ফ্রান্স লিস্ট, লেখক বালজাক, হাইনরিশ হাইনের সাথে৷ তবে স্বদেশ হারানোর বেদনা তাঁকে পীড়িত করেছে সবসময়৷ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলি পোল্যান্ডকে দমিয়ে রাখায় তীব্র যাতনা অনুভব করতেন তিনি৷ আর তা প্রকাশ পেয়েছে শোপ্যাঁর বহু সৃষ্টিকর্মে৷ এ প্রসঙ্গে জার্মানির ডুইসবুর্গ শহরের ফল্কভাং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক দক্ষ পিয়ানোবাদক বরিস ব্লখ বলেন:

‘‘স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি মমতা ও ভালবাসার এমন প্রকাশ শোপ্যাঁর মত আর কোনো সংগীতকারের মধ্যে দেখা যায়নি৷ তবে তাঁর এই ভালবাসায় কোনো সংকীর্ণ জাতীয়তাবোধ ফুটে ওঠেনি৷ এটাই তাঁকে অনন্য করে তুলেছে৷’’

Alle Welt spielt Chopin
পিয়ানোকে পেশা হিসেবে নিতে হলে শোপ্যাঁর কাছে আসতেই হবে৷ বললেন সংগীত শিক্ষক বরিস ব্লখ৷ছবি: DW

সংগীত জগতে বিশাল ভান্ডার রেখে গেছেন প্রতিভাধর এই শিল্পী৷ যার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আজো বিভিন্ন সংগীতের ধারায়৷ শোপ্যাঁর প্রখর অভিব্যক্তিময় সংগীতাংশ, সংগীতের সুললিত কলাকৌশল বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার৷ তাই পিয়ানো শেখা ও পিয়ানোর পরীক্ষায় শোপ্যাঁর সংগীত অপরিহার্য৷ এ প্রসঙ্গে পিয়ানো সংগীত শিক্ষক বরিস ব্লখ বলেন:

‘‘শোপ্যাঁর সংগীত না বাজিয়ে পিয়ানিস্ট হওয়া যায়না৷ শোপ্যাঁর সংগীত যেন পিয়ানোর এক বিস্তীর্ণ জগত, এক ধরণের এনসাইক্লোপেডিয়া৷ পিয়ানোকে পেশা হিসাবে নিতে হলে শোপ্যাঁর কাছে আসতেই হবে৷''

শোপ্যাঁ নিজেও পিয়ানো শেখাতে ভালবাসতেন৷ তবে এক্ষেত্রে ধৈর্য্য ছিল তাঁর কম৷ কেননা অন্য অনেকের মত পিয়ানো শেখানোকে শুধু পেশা হিসাবে দেখেননি তিনি, পিয়ানোর প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ৷

সংগীত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ানোর ছাত্রী দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা জিয়ে লি উচ্ছ্বসিত কন্ঠে শোপ্যাঁর সংগীতের বর্ণনা দেন:

‘‘আমি শোপ্যাঁর সংগীত বাজাতে ভালবাসি৷ তাঁর সংগীত অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ৷ এতে আছে লিরিকের সুর, সূক্ষ্ণ কারুকার্য এবং উজ্জ্বল দীপ্তি৷ রয়েছে গভীর আবেগ, শক্তি এবং অবশ্যই গতিময়তা৷''

এত নাম ডাক সত্ত্বেও স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে ভাগ্য খুব একটা প্রসন্ন ছিলনা শোপ্যাঁর প্রতি৷ তরুণ বয়সেই টিবিতে আক্রান্ত হন তিনি৷ এই কালব্যাধি থেকে তাঁর আর সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি৷ ১৮৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন ক্ষণজন্মা এই প্রতিভা৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক