1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্লামেংকো নাচের পীঠস্থান

২৯ জুন ২০১৭

ফ্লামেংকো নাচ স্পেনের গণ্ডি পার হয়ে গোটা বিশ্বের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ ডয়চে ভেলের এক সহকর্মী হাতেনাতে সেই নাচের স্বাদ পেতে ও তা আরও ভালোভাবে শিখতে স্পেনের গ্রানাদা শহরের এক স্কুলে গিয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/2fbTZ
ছবি: DW

কিছুটা বিষাদমাখা সুর, উচ্ছ্বাস আর আবেগের ফোয়ারা – এই হলো ফ্লামেংকো৷ সংগীত ও নৃত্যের বৈচিত্র্যময় সম্ভার৷ ফ্লামেংকো সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের শহর গ্রানাদা৷ কয়েক’শো বছর ধরে আরব বাদশাহরা এখানে রাজত্ব করেছেন৷ আলহামব্রা প্রাসাদ ছিল তাঁদের ক্ষমতাকেন্দ্র, যা এখন শহরের মূল আকর্ষণ৷ আরব সংগীতের প্রভাবও থেকে গেছে, যার স্বাদ ফ্লামেংকোর মধ্যে পাওয়া যায়৷ অনেক বিখ্যাত ফ্লামেংকো সংগীত ও নৃত্যশিল্পী এই শহরেরই মানুষ৷ ডয়চে ভেলের ইউরোমাক্স অনুষ্ঠানের প্রতিনিধি মারিয়া গ্রুনভাল্ড বলেন, ‘‘গ্রানাদা শহরে আমি বুলেরিয়া শিখতে চাই৷ এটা ফ্লামেংকোরই কিছুটা চনমনে ও মেয়েলি রূপ৷ অ্যামেচারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়৷ আমিও শখের ফ্লামেংকো নর্তকী৷ আশা করি, এখানে পেশাদারদের কাছ থেকে কিছু শিখবো৷ অতএব, আর দেরি নয়৷’’

ফ্লামেংকো নাচের পীঠস্থানে অভিনব অভিজ্ঞতা

শহরের সাক্রোমন্টে এলাকায় নাচের স্কুল, স্প্যানিশ ভাষায় যার অর্থ পবিত্র পাহাড়৷ এককালে এখানে ‘খিটানো’ বা জিপসিদের বসবাস ছিল৷ তারা ছিল ‘সিন্টি’ ও ‘রোমা’ সম্প্রদায়ের অভিবাসী৷ ফ্লামেংকোর উপর তাদের বিপুল প্রভাব রয়েছে৷ অনেক গুহার মধ্যে একটিতে নাচের স্কুল৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদারী নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভিওলেটা রুইস৷ আজ দেশে-বিদেশে নাচ দেখান তিনি৷ তাঁর বাবাও ছিলেন বিখ্যাত ফ্লামেংকো গিটারিস্ট৷ হাততালি দিয়ে নাচ শুরু হয়৷

ভিয়োলেটা ঠিক করেছেন, এ ভাবেই নাচ শুরু হয়৷ বুলেরিয়া শৈলির কিছু নিজস্ব পায়ের স্টেপ রয়েছে, কিন্তু কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই৷ অবস্থা অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে তা স্থির করতে হয়৷ প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে সে সব রপ্ত করা কঠিন৷

আচমকা একাই নাচের সুযোগ দিলেন শিক্ষিকা৷ একই ‘স্টেপ’ বা পায়ের কাজ বার বার অভ্যাস করার পর মনে একটু সাহস আসে৷ ভিওলেটা স্প্যানিশ চরিত্র অনুযায়ী আড়ষ্টতা ভেঙে অন্তরের আবেগ প্রকাশ করার উপর জোর দেন৷ বুলেরিয়া শৈলির ভিত্তিই হলো ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, কোনো বিষয় – এমনকি নিজেকেও গুরুত্ব না দেওয়াই এর লক্ষ্য৷ ধীরে ধীরে আড়ষ্টতা ভাঙার পালা৷

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত অনুশীলনের পরেও কীসের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে? নাচের শিক্ষিকা বলেন, ‘‘তালের অভাব রয়েছে, যা ফ্লামেংকো, বিশেষ করে বুলেরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ গিটার ও গানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ জানতে হবে, নর্তকী হিসেবে কখন শুরু করবে, মুদ্রা দেখাবে, বেদায় নেবে৷’’

সংগীতে সঙ্গ দিতে এলেন আন্তোনিও এল তুরি৷ তিনিও অবস্থা অনুযায়ী কখনো গান প্রলম্বিত করেন, কখনো কমিয়ে দেন৷ গানের তাল অনুযায়ী নাচ শুরু হয়, কিন্তু এবার সেই তাল কেটে গেল৷ ভিওলেটা তাল ঠিক করতে সাহায্য করছেন৷ অবশেষে তাতে কাজ হয়েছে৷ তারপর একক নাচের পালা৷ কারণ বুলেরিয়া একাই নাচতে হয়৷ চনমনে, আনন্দময় আবেগের কারণে সাধারণত ফ্লামেংকো শো-র শেষে এই নাচ রাখা হয়৷ এবার দর্শকদের সামনে নাচ দেখানোর পালা৷

শহরের একটি বারে প্রতি সন্ধ্যায় ফ্লামেংকো সংগীত ও নাচের আসর বসে৷ গ্রানাদা শহরে এমন একাধিক পানশালা রয়েছে৷ ভিওলেটা রুইস বারের মালিক এবং একইসঙ্গে নর্তকীও৷ তাঁর নাচের পর মঞ্চে যাবার পালা, অতএব মুখের হাসির আড়ালে ভয় তো থাকবেই৷ একটু দেরি হয়ে গেছে৷ যাই হোক, নিজেকে তেমন গুরুত্ব না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে আর সমস্যা কী! মারিয়া গ্রুনভাল্ড বলেন, ‘‘আমার বুলেরিয়া নাচ প্রত্যাশামতো ভালো হয় নি৷ তবে খুব মজা হয়েছে, অবস্থা অনুযায়ী আমি তাৎক্ষণিকভাবে নাচতে পেরেছি৷ এটাই তো ফ্লামেংকো!’’

এতক্ষণের উত্তেজনার পর এবার বাকি সন্ধ্যাটা উপভোগ করার সময় এসে গেছে৷

মারিয়া গ্রুনভাল্ড/এসবি