1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নূর চৌধুরীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর

দেবারতি গুহ, আশীষ চক্রবর্ত্তী২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী আবারো শিরোনামে৷ শেখ হাসিনাকে দেয়া জাস্টিন ট্রুডোর আশ্বাসের কয়েকদিন পরই আনন্দবাজার ও বাংলাদেশের ৭-৮টি সংবাদপত্র জানায়, ক্যানাডার আদালত নূরকে দেশ ছাড়তে বলেছে৷ খবরটির নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ৷

https://p.dw.com/p/1K6li
শেখ মুজিবুর রহমান
ছবি: AP

গত কয়েকদিনে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এবং বাংলাদেশের দৈনিক জনকণ্ঠ, সমকাল, আমাদের সময়, যায় যায় দিন, ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে নূর চৌধুরী সম্পর্কে একটি খবর প্রকাশিত হয়৷ ২১শে সেপ্টেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে দাবি করা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল নূর চৌধুরীকে ক্যানাডা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের ফেডারেল কোর্ট৷ গত সোমবার তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমানে ক্যানাডায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন নূর চৌধুরী৷ সরকার ইচ্ছা করলে যে কোনো মুহূর্তে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে৷' জনকণ্ঠ, সমকাল, ইনকিলাবসহ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের পত্রিকাগুলোর একই দাবি৷

খবরটি কৌতূহলোদ্দীপক, কেননা, এর মাত্র দু'দিন আগেই ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দেন, খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উপায় খুঁজবে ক্যানাডা৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করীম তখন সংবাদমাধ্যমকে জানান, মন্ট্রিয়ালে অনুষ্ঠিত ‘ফিফথ রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অফ দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)' সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে শেখ হাসিনা ক্যানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত পিয়ের ট্রুডোকে বাংলাদেশের দেওয়া মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাটি তাঁর ছেলে, অর্থাৎ ক্যানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর হাতে তুলে দিয়েছেন৷ তারপর সংক্ষিপ্ত এক বৈঠকের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে জাস্টিন ট্রুডো আশ্বাস দিয়েছেন, নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উপায় খুঁজবে তাঁর সরকার৷

ক্যানাডায় মৃত্যুদণ্ড নেই৷ তাই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এতদিন সুস্পষ্টভাবেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল ক্যানাডা সরকার৷ ট্রুডোর আশ্বাস দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী খুনি নূর চৌধুরীর শাস্তি কার্যকর করার একটি সম্ভাবনার জন্ম দেয়৷

শেখ হাসিনা-জাস্টিন ট্রুডোর বৈঠকের দু'দিন পরই আনন্দবাজার ও অন্য কিছু পত্রিকায় '৭৫-এর আত্মস্বীকৃত খুনি সম্পর্কে প্রকাশিত খবরটিতে বিচারপ্রার্থী অনেকেই আনন্দিত৷ সেই সঙ্গে খানিকটা বিস্ময়েরও জন্ম দেয় খবরটি৷ দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরই ক্যানাডার ফেডারেল কোর্ট কোনো রায় দিতেই পারে৷ একজন খুনির ক্যানাডার মতো দেশে থাকার অধিকার নেই – এমন রায় তো যে কোনো সময়ই দিতে পারে আদালত৷ কিন্তু এমন একটি মামলার রায় সম্পর্কে আর কোথাও কোনো খবর নেই কেন? এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি খবরের সূত্র কী? সূত্রের বিশ্বাসযোগ্যতাই বা কতটুকু?

এ প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের সিনিয়র সাংবাদিক অঞ্জন ব্যানার্জি ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁদের সংবাদদাতা নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়েই খবরটি পরিবেশন করেছেন৷ তা সেই নির্ভরযোগ্য সূত্রটি কী? ক্যানাডার ফেডারেল কোর্টের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি? সে দেশের সংবাদমাধ্যম? নাকি বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্তাব্যক্তি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ক্যানাডা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ' শিরোনামে খবরটির প্রতিবেদক, বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাংবাদিক টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখুন, খবরটি জনকণ্ঠ পত্রিকায় আগে ছাপা হয়েছে৷ এর বাইরে শুধু এইটুকু বলতে পারি যে, আমরা বানিয়ে কিছু লিখিনি৷''

সব শেষে কথা হয় ক্যানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের সঙ্গে৷ তিনি জানান, আনন্দবাজার পত্রিকা ও বাংলাদেশের অন্তত ৭-৮টি পত্রিকায় যা দাবি করা হচ্ছে, ক্যানাডার ফেডারেল কোর্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তা সম্পূর্ণ অসত্য৷ শওগাত আলী সাগর টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি ক্যানাডার ফেডারেল কোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম৷ ফেডারেল কোর্টের লিগ্যাল কাউন্সেল অ্যান্ড্রু বাউমবার্গ আমাকে জানিয়েছেন, ফেডারেল কোর্টে সাম্প্রতিক সময়ে নূর চৌধুরীর কোনো মামলার কার্যক্রম বা রায় হয়েছে বলে তাদের জানা নেই৷ ফেডারেল আদালতের নথিতে তেমন কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি৷''

প্রশ্ন হলো, ক্যানাডার ফেডারেল কোর্টের নথিতে যদি নূর চৌধুরী সম্পর্কিত সাম্প্রতিক কোনো মামলার তথ্যই না থাকে, যদি ওই খুনিকে ক্যানাডা থেকে বহিষ্কার সংক্রান্ত কোনো রায়ের উল্লেখ আদালতেই না থাকে, তাহলে ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ক্যানাডা থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ' সংক্রান্ত খবরটি কতটা তথ্যনির্ভর?

প্রিয় পাঠক, নিশ্চিত না হয়ে কি কোনো খবর প্রকাশ করা ঠিক? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান