1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদশে শিশুমৃত্যুহার হ্রাস

৩১ জানুয়ারি ২০১১

স্বাস্থ্যনীতি বা সুস্থভাবে থাকা বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে বাংলাদশে৷ তবে একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ সফল হয়েছে৷ তা হল শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ৷ তা সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন টীকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে৷

https://p.dw.com/p/107eE
ছবি: AP

গত কয়েক বছরে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ৷ বলা প্রয়োজন, জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি লক্ষ্য হল – তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুমৃত্যুর হার ‘শুন্য'-তে নামিয়ে আনা৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে৷ এর মূল কারণ হল সরকার নিজেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শিশুমৃত্যু রোধ করতে৷

জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আটটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে৷ এই লক্ষ্যগুলো যেভাবেই হোক ২০১৫ সালের মধ্যে পূরণ করতে হবে৷ এরমধ্যে রয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ, মাতৃ-মৃত্যুহার হ্রাস, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস, প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্যনীতি এবং পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ৷

সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রতিবেদন

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন' নামক সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যে, ১৯৯৩ সালে থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য কোন দেশে এতটা সফল হয়নি৷ দেশটিতে শিশুমৃত্যুহার কমেছে গড়ে ৫.৩ হারে৷

Logo Save the Children
‘সেভ দ্য চিলড্রেন' বলছে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুহার কমেছে

সংস্থাটি বেশ জোর দিয়েই জানায়, এর পেছনে রয়েছে সরকারসহ বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও'র যৌথ উদ্যোগ৷ তাদের লক্ষ্য ছিল – দেশের প্রতিটি শিশুকে টীকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে৷ ধনী-দরিদ্র কেউই বাদ যাবে না৷ এর সঙ্গে যোদ দিয়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিষয় নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করছে তারাও৷ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুকে টীকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷

প্রত্যন্ত অঞ্চলও বাদ যাচ্ছে না

ময়মনসিংহ জেলার পক্ষ থেকে চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আমজাদ আলি জানান, কোন শিশুকে টীকা দেওয়া হয়েছে আর কাকে টীকা দেওয়া হয়নি – তার ওপর নজর রাখছি আমরা৷ যেহেতু প্রতিটি শিশুর জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে জন্ম তারিখ এবং অন্যান্য তথ্য নথিভুক্ত করা করা হয়, সেহেতু আমরা জানি কোন শিশুকে কখন টীকা দেওয়া হয়েছে বা কে এখনো বাকি আছে৷

ষাট বছর বয়স্কা হাভিয়া খাতুন বললেন, টীকাদান কর্মসূচি কীভাবে একটি শিশুর, একটি পরিবারের মধ্যে পরিবর্তন এনেছে৷ তিনি জানান, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন কোন ধরণের টীকা নেইনি কারণ আমি সূঁচকে ভয় পেতাম৷ কিন্তু এখন আমি জানি একটি টীকা কীভাবে একটি শিশুর জীবন রক্ষা করে৷

টীকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে ছয়টি রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করা হয়৷ রোগগুলো হল ডিপথিরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, যক্ষ্মা, হাম এবং পোলিও৷

লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবন রক্ষা করা হয়েছে

গত কয়েক দশকে এই কর্মসূচির প্রসার ব্যাপক হয়েছে৷ ২০০৮ সালে টীকাদানের এই কর্মসূচির সঙ্গে যোগ দিয়েছে ‘রিচ এভরি ডিস্ট্রিক্ট – আরইডি' এবং ইউনিসেফ৷ ফলে ৯৬ লক্ষ শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে৷ এসব শিশুর বয়স এক বছরেরও কম৷ এর আগে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শিশু বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত৷ অথচ টীকা দেওয়া থাকলে এসব রোগে মারা যাওয়া তে দূরের কথা, আক্রান্ত হওয়ারও কোন সম্ভাবনা থাকে না৷

Polio-Schutzimpfung in Afghanistan
সরকারের নেয়া টীকাদান কর্মসূচি সফল হচ্ছেছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb

২০০৬ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে পোলিওতে আর কোন শিশু আক্রান্ত হচ্ছে না৷ সম্প্রতি জানানো হয়েছে বালাদেশের সাড়ে তিন কোটি শিশুকে হাম প্রতিরোধে টীকা দেওয়া হয়েছে৷

টীকাদান কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছেন প্রায় ২৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী৷ তাঁরা একই গ্রামে কয়েক মাস পরপর ঘুরে আসেন৷ খোঁজ-খবর নেন কোন শিশু জন্মেছে, কার টীকা নেওয়া এখনো বাকি আছে বা কোন বিশেষ টীকা এখনো নেওয়া হয়নি৷ সেসব তথ্য তারা সংগ্রহ করে টীকাদান কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান৷

বাদ যাবে না কোন শিশু – সে যেখানেই থাকুন না কেন

মোহম্মদ হারুন-উর-রশিদ একজন স্বাস্থ্যকর্মী৷ তিনি বলেন, মোটর সাইকেল নিয়ে আমরা সাধারণত কাজ করি৷ তবে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে মোটর সাইকেল নিয়েও যাওয়া সম্ভব নয়৷ যেমন বিভিন্ন চরায় অথবা যেখানে রাস্তাই নেই৷ পুরোটা পথই বাঁশের সাঁকো৷ তারপরেও টীকাদানের কর্মসূচি থেকে কোন শিশুকে আমরা বাদ যেতে দেই না৷

টীকাদান কর্মসূচি এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যনীতি কর্মসূচিতে কাজ করছেন চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর আলম৷ তিনি বলেন, টীকাদান কর্মসূচি এখন আর সরকারের নিজস্ব কোন কর্মসূচি নয় এটা সারা বাংলাদেশের, সাধারণর মানুষের সম্মিলিত কর্মসূচি৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়