1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের পর্যটনে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে

২৫ আগস্ট ২০১০

বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের দেশ বাংলাদেশে দিন দিন পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে৷ তবে এসব পর্যটকদের বেশিরভাগই তরুণ৷ আগামীতে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন তরুণ প্রজন্ম মূল ভূমিকা নিতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/OvNZ
সাগরের নীল পানির টানে ছুটে আসেন পর্যটকরাছবি: Jafar Alam/Coxs Bazar

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রে সৈকতে প্রতিদিনই ভীড় করেন হাজারো পর্যটক, যারা ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ এই সমুদ্র সৈকত৷ সাগরের নীল পানির টানে ছুটে আসা এসব পর্যটকদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়সই বিশের কোঠায় যারা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ রয়েছেন সদ্য বিয়ে করা নব দম্পতিরাও৷ কেবল কক্সবাজার নয়, সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল, কুয়াকাটার নারকেল গাছ ঘেরা সৈকত, সিলেটের পাহাড় ঘেরা চা বাগান এইসব জায়গাতেই এখন দেখা যায় তরুণ পর্যটকদের ভীড়৷

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে এই পর্যটন৷ কিন্তু এর দিকে এখনো তেমন নজর দেওয়া হয়নি৷ তবে দিন দিন যেভাবে তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী হচ্ছে তাতে দিন বদলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ বেশিদিন আগের কথা নয়, বিগত শতকের আশির দশক থেকে এর শুরু৷ দেশ ঘুরে দেখার আগ্রহ বাড়তে থাকে তরুণদের মধ্যে৷ তাদের সে উৎসাহকে আরও বাড়িয়ে তুলতে অন্যতম ভূমিকা রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিস্ট সোসাইটি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠন শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্যটন নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়৷ এই সংগঠনের অনেক সদস্যই পরবর্তীতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন৷ তাঁদের একজন, ট্যুরিস্ট প্লাস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোরতাজা৷ তরুণদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিটি ট্যুরে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ জন পর্যন্ত থাকে৷ তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ এর মধ্যে৷'

Cox`s Bazar: Sturm vor der Küste von Bangladesh
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারছবি: picture alliance/dpa

কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিস্ট সোসাইটির বর্তমান সভাপতি শেফাউল হোসেন মেঘের সঙ্গে, যিনি নিজেও একজন শিক্ষার্থী৷ তিনি জানান, তার সংগঠনে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা পাঁচ শতাধিক৷ দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে৷ শেফাউল হোসেন জানালেন, ‘পর্যটন নিয়ে এতদিন যে ধারাটা ছিল, সেটি দিন দিন বদলে যাচ্ছে৷ এখন আমার মত যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে পর্যটন নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বাড়ছে৷'

তরুণদের মধ্যে এই আগ্রহ বাড়ার কারণ কি? জানতে চেয়েছিলাম শেফাউল হোসেন মেঘের কাছে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিগত কয়েক বছরে পর্যটন নিয়ে বেশ কাজ করা হয়েছে৷ সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ' এই ব্র্যান্ডটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এর বাইরে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সের প্রতিযোগিতার বিষয়টিও রয়েছে৷ সেখানকার তালিকায় প্রথমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সুন্দরবন ছিল, এখন সুন্দরবন রয়েছে৷ এটাও পর্যটনে আগ্রহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করেছে৷''

কোন কোন জায়গাগুলো পর্যটকদের জন্য মূল আকর্ষণ? জানতে চাইলে শেফাউল হোসেন মেঘ জানান, ‘বেশিরভাগ ট্যুর হয় কক্সবাজার, সেইন্ট মার্টিন এবং সুন্দরবন৷ প্রতি বছরই এখানে যাওয়া হয়৷ এর বাইরে রয়েছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি বান্দরবান এবং সিলেট৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলের প্রত্বতাত্ত্বিক জায়গাগুলো যেমন, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বাগেরহাট রয়েছে৷'

বাংলাদেশের অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে রয়েছে প্রকৃতির অকৃত্রিম ছোঁয়া৷ তবে এই প্রকৃতিকে পর্যটকদের উপযোগী করে তোলাটাও পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য একটি প্রয়োজনীয় শর্ত৷ অনেক জায়গাই এখন পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার কাজ চলছে৷ যেমন কক্সবাজার ও সেইন্ট মার্টিনসহ ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে নির্মিত হয়েছে অনেক নতুন হোটেল, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাও আগের চেয়ে হয়েছে অনেক উন্নত৷ তাই সেসব জায়গাগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে অনেক বেশি৷ তরুণ পর্যটকদের মধ্যে মেয়েদের অংশগ্রহণ কেমন? ট্যুরিস্ট প্লাস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোরতাজা বললেন, ‘মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশ ভালো এবং উল্লেখযোগ্য৷ বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ট্যুরিস্ট দলগুলোর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই নারী৷ আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ট্যুরের আয়োজন করা হলে তাতে অর্ধেকেরও বেশি মেয়েদের অংশগ্রহণ থাকে৷ এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম৷'

পর্যটনে তরুণদের এই আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলতে ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন বিভাগ খোলা হয়েছে৷ আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন