1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চালের সঙ্গে আর্সেনিকের যোগসূত্র

৩০ নভেম্বর ২০১৩

বাংলাদেশের অনেক এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতির কথা আগেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এবার তাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পানি থেকে বিষাক্ত আর্সেনিক চালের মাধ্যমেও পৌঁছচ্ছে মানবদেহে৷

https://p.dw.com/p/1AQea
ক্যালোরির উৎস হিসেবে ভাতের উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে গম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরাছবি: DW

বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় ১৮,৪৭০ জন স্বেচ্ছাসেবীর দেওয়া নমুনা পরীক্ষা করেছেন৷ তারা সবাই আর্সেনিক-দূষিত এলাকায় বসবাস করছেন৷ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে যারা বেশি করে ভাত খান তাদের প্রস্রাবে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি৷ অপেক্ষাকৃত কম ভাত খাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে এই তুলনা করেছেন গবেষকরা৷

উদ্বেগের কথা হচ্ছে, ভাত বেশি খাওয়া ব্যক্তিদের শরীরে আর্সেনিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবও শনাক্ত হয়েছে৷ যেমন অনেকের চামড়ায় ক্ষত রয়েছে৷ ‘‘প্লোস ওয়ান'' জার্নালের চলতি সংখ্যায় গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে৷ ভূগর্ভস্থ পানিতে থাকা আর্সেনিক যে চালের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, তা নিয়ে এটাই এখন অবধি সবচেয়ে বড় গবেষণা৷ বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত৷

Bangladesch Reis Frauen Frau Rangpur
ছবি: AP

ব্রিটেনের লিচেস্টারে অবস্থিত ডি মোন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিসিন বিশেষজ্ঞ পারভেজ হারিস বলেন, ‘‘গবেষণায় পানিতে আর্সেনিক দূষণ এবং ‘ফুড চেইনে' তার প্রভাবের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে৷ একইসঙ্গে এটাও পরিষ্কার যে চালের মাধ্যমে পরিবাহিত আর্সেনিক মানবদেহের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ বিশেষ করে চামড়ায় ক্ষতের সঙ্গে এটির সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷''

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই এই বিষাক্ত উপাদানের মিশ্রন ঘটে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্তরের দশকে ‘সবার জন্য পানি' সংক্রান্ত এক প্রকল্পের আওতায় অনেক অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়৷ ফলে আর্সেনিকযুক্ত পানি সহজে সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসে৷

ঢাকা বিভাগের আড়াইহাজার এলাকায় সর্বশেষ গবেষণাটি করা হয়েছে৷ আর্সেনিক সংক্রান্ত আগেকার গবেষণাগুলোতে মূলত পানীয় জলের মাধ্যমে মানবদেহে এই বিষ সংক্রমণের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে৷ এবারই প্রথম চালে আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করা হয়৷ কেননা অনেক অঞ্চলে সেচের পানিতে আর্সেনিকের প্রভাব রয়েছে৷

তবে স্থানীয় চালে আর্সেনিক দূষণের পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করতে পারেননি গবেষকরা৷ সংশ্লিষ্ট এলাকার পানিতে দূষণের পরিমাণ অবশ্য গবেষকদের জানা আছে৷ গবেষণাস্থলের পঁচিশ বর্গকিলোমিটার জায়গার মধ্যে নলকূপ রয়েছে প্রায় ছয় হাজার৷ হারিস বলেন, ‘‘আড়াইহাজার এবং আর্সেনিক দূষণের শিকার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে যারা প্রতিদিন গড়ে ১ দশমিক ছয় কেজির বেশি ভাত খান, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আপনারা ক্যালোরির উৎস হিসেবে ভাতের উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে দিন৷ এক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে গম এবং কম আর্সেনিক দূষণযুক্ত এলাকায় উৎপাদিত চাল৷ এর আগে আমরা গবেষণা করে দেখেছি, সিলেট অঞ্চলের চালে আর্সেনিকের মাত্রা কম৷''

গবেষকরা বলছেন, তাদের এই গবেষণা আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে থাকা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও কাজে লাগানো যেতে পারে৷ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কম্বোডিয়া, চীন, ভারত এবং ভিয়েতনামে আর্সেনিক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে৷

হারিস এবং তাঁর দল এর আগে ব্রিটেনে বসবাসরত অল্প কিছু বাংলাদেশির শরীরে আর্সেনিকের সংক্রমণের সঙ্গে চালের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলেন৷ তাঁর বর্তমান গবেষণায় বাংলাদেশে আর্সেনিকের বিস্তৃত প্রভাব সম্পর্কে একটি চিত্র ফুটে উঠেছে৷

এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৪১৭টি গ্রামে পরিচালিত এক গবেষণায় সেখানকার মানুষের প্রস্রাবের নালীর কোষের জেনেটিকে ক্ষতির নমুনা পাওয়া গেছে৷ এরফলে একটি কোষ থেকে আরেকটি কোষে ডিএনএ কোড সঠিকভাবে স্থানান্তর হতে পারছে না৷ এধরনের জটিলতা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে মনে করেন গবেষকরা৷

এর আগে প্রকাশিত আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প পরিমাণে আর্সেনিক নিয়মিত শরীরে প্রবেশ করলে মূত্রাশয়, কিডনি, ফুসফুস অথবা চামড়ায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷

এআই / জেডএইচ (এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য