1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝুঁকির মুখে এটিএম সেবা

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৭ জুলাই ২০১৩

সম্প্রতি বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম (অটোমেটেড টেলর মেশিন) সেবা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তবে কয়েকটি কার্ড জালিয়াত চক্র ধরার পর ঝুঁকির মুখে পড়েছে এই এটিএম সেবা৷ অনেকে সতর্কতার কারণে কার্ড ফেরত দিতে চাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/19Ew0
--FILE--A local Chinese resident inserts a bank card into an ATM in Guangzhou city, south Chinas Guangdong province, 15 April 2012. China issued 3.23 billion bank cards as of the end of the second quarter, up an annual 20.6 percent, the central bank said Monday (20 August 2012). The growth rate was 2.6 percentage points higher than that registered during the same period last year, the Peoples Bank of China said in a statement on its website. The number of bank cards grew by 3.9 percent quarterly, the statement said. Some 302 million credit cards were issued by the end of June, up an annual 17.4 percent and by 4 percent from the end of March, the statement said.
ছবি: picture-alliance/dpa

সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই চার জনের একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ৷ এই চারজনের সবাই মেধাবী ও শিক্ষিত৷ এর মধ্যে প্রধান ব্যক্তি মোহাম্মদ সেলিম৷ তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ দেশে বিদেশে তাঁর বেশ কয়েকটি ডিগ্রিও রয়েছে৷ ১৯৮৯, ৯০ ও ৯১ সালে ‘তরুণ উদ্ভাবক' হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ লাখ টাকা পুরস্কারও পান তিনি৷ অনেকদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন৷ ১৯৯৮ সালে এটিএম সার্ভিস চালুর শুরুতে তিনি এই নেটওয়ার্কিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷

তাঁর সঙ্গে আরো গ্রেফতার হয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম, আরিফ হোসেন খান ও আসাদুল ইসলাম৷ এর মধ্যে মঞ্জুরুল ইসলাম মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আইটি বিভাগের কর্মকর্তা৷ আসাদুল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগ থেকে পাশ করেছেন৷ অপরজন আরিফ হোসেন খান খুলনা পালিটেকনিক থেকে পাশ করে অ্যাডভান্স ডাটা নেটওয়ার্ক (এডিএন) নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ এই চারজনে কিছু ডাটা চুরি করে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দুই কোটি টাকারও বেশি তুলে নিয়েছেন৷ গ্রেফতারের পর তারা সেটা স্বীকারও করেছেন৷

Bengalische Banknoten von 2 bis 1000 BDT. Datum: 25.10.2011. Eigentumsrecht: A H M Abdul Hai, Bengali Redaktion, DW, Bonn
ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা (ফাইল ফটো)ছবি: DW

এই কার্ড জালিয়াত চক্রকে গ্রেফতার করা গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যই অত্যন্ত মেধাবী৷ তারা অল্প কিছু ডেটা পেলেই কার্ড তৈরি করতে পারে৷ পাসওয়ার্ড চুরি করা তাদের কাছে খুবই সহজ৷ অনেক সময় এটিএম বুথে গোপন ক্যামেরা সেট করে গ্রাহকদের পাসওয়ার্ড চুরি করে তারা৷ খুব অল্প দিনের মধ্যেই তারা দুই কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে তুলে নিয়েছে৷ তাদের কাছ থেকে আরো ৫০টির মতো কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে৷ যা দিয়ে আরো প্রায় কোটি টাকা তোলা যেত৷ কিন্তু তার আগেই গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করতে পেরেছে৷

পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর মোহাম্মদ সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা, প্রাইম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ৯০০ বুথ তাঁর হাতে স্থাপন হয়েছে৷ যে কারণে এটিএম বুথের সবকিছু তাঁর নখদর্পণে৷ কিছু ডেটা পেলেই তিনি জাল কার্ড তৈরি করতে পারেন৷ কীভাবে তথ্য চুরি করে টাকা তুলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, বুথের সিপিইউ থেকে পেনড্রাইভে তিনি গ্রাহকের তথ্য চুরি করেন৷ পাসওয়ার্ড ও পিনকোড চুরি করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাও বসানো হয়৷ পরে কার্ড রিডার অ্যান্ড রাইটার যন্ত্রের মাধ্যমে ল্যাপটপের সহায়তায় সংগৃহীত তথ্য ব্যাংক কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে ধারণ করে নতুন কার্ড তৈরি করতেন৷ ওই কার্ড ও গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত পাসওয়ার্ড দিয়ে টাকা উঠাতেন তিনি৷

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ সার্ভিসের আইটি সাপোর্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান টেক্সাস ইলেকট্রনিকস-এর প্রধান আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেলিম কর্মরত ছিলেন৷ অন্য তিন জনও সেলিমের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আইটি এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেছেন৷ বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের আইটি সাপোর্ট ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন৷ পরবর্তীতে চাকরিচ্যুত হয়ে তারা নকল ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে দুই কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নিয়েছে৷

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে নকল ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোপন ক্যামেরা, কম্পিউটার, কার্ড রিডার অ্যান্ড রাইটার (কার্ড তৈরির যন্ত্র) এবং অন্যান্য কম্পিউটার ও ইঞ্জিনিয়ারিং আইটেম পাওয়া গেছে৷ মশিউর রহমান বলেন, এই চক্রটিকে ধরার পর অনেকেই তাঁকে ফোন করে নিজের পকেটে থাকা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন৷ কেউ কেউ কার্ড ফেরত দেবেন বলেও তাকে জানিয়েছেন৷

এই চক্রটি বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছে৷ তবে বেশি টাকা তুলেছে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ কি অরক্ষিত? ব্র্যাক ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান মো. কামরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ কোনো ভাবেই দুর্বল নয়৷ কোনো ব্যাংকের ভেতর থেকে তথ্য চুরি করতে না পারলে বাইরে থেকে ভুয়া কার্ড বানিয়ে টাকা তোলা অনেক কঠিন৷ তাছাড়া বাংলাদেশে এটিএম সার্ভিস তো খুব বেশিদিন চালু হয়নি৷ তাই কিছু সমস্যা তো আছেই৷ কোনো সমস্যা ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হচ্ছে৷ এখন কিন্তু প্রত্যেক বুথে একাধিক সিসিটিভি লাগানো আছে৷ দায়িত্ব পালনকারী গার্ডদের সচেতন করা হয়েছে৷''

কামরুল হকের মতে, গ্রাহকরা সচেতন হলে প্রতারণার সুযোগ অনেক কমে যাবে৷ নিজের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড যেন কেউ জানতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ তার৷ এছাড়া এটিএম বুথে ঢুকে কোনো অসংলগ্নতা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের অনলাইনে ফোন করে জানানোরও পরামর্শ দেন তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য