1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে হাজারো শিশুর জীবন বাঁচায় ওরাল স্যালাইন

৭ মে ২০১০

এক চিমটি লবন, একমুঠো গুড় এবং আধা লিটার পানি৷ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারে ডায়রিয়া থেকে জীবন বাঁচাতে এই সহজ উপায়ে স্যালাইন বানাবার উপায় জানা রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/NGtQ
বাংলাদেশের মায়েদের আস্থা অর্জন করে চলেছে এই স্যালাইনছবি: AP

আট বছর বয়সি ছোট্ট মেয়ে মীম আক্তার৷ এই প্রস্তুতপ্রণালী বলার সময় তার ছোট্ট হাতগুলো দিয়ে স্যালাইনের উপাদানগুলোর পরিমাণ সুন্দর করে দেখাচ্ছিল মীম৷ তাকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে স্কুল থেকে এই স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি সে শিখেছে৷

গত ত্রিশ বছর ধরে ঘরে তৈরি এই স্যালাইন বাংলাদেশের মায়েদের আস্থা অর্জন করে চলেছে৷ তাছাড়া, এই স্যালাইন তৈরি করা যায় স্বল্প ব্যয়ে৷ এখন বলতে গেলে বংশানুক্রমে এই প্রণালীর ব্যবহার চলে আসছে৷ ঘরে তৈরি এই স্যালাইন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের খুব দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে৷

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে৷ নিউমোনিয়ার পর পরই ডায়রিয়াই হচ্ছে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ৷ প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শিশু মৃত্যুবরণ করে এই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে, যা কিনা এইডস, ম্যালেরিয়া এবং হামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যের সংখ্যার থেকেও অনেক বেশি৷ যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগামী দশকে এই ডায়রিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু চিকিৎসা বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. দীপঙ্কর কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু মারা যায়, যদিও মুখে খাওয়ার স্যালাইন বাজারে আসার পর থেকে শিশু মৃত্যুর হার অনেকটা কমে এসেছে৷ তারপরও প্রতি বছরই অনাকাঙ্খিত অনেক মৃত্যু ঘটছে৷ আর এর পেছনে কারণগুলো হলো বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যরক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানের ঘাটতি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারের সুবিধা না থাকা, কুসংস্কার, ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ না করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব, সময়মত চিকিৎসার অভাব, পুষ্টিহীনতা , অব্যবস্থাপনা প্রভৃতি৷

বর্তমানে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ওরাল স্যালাইন ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ ডা. দীপঙ্কর কুমার সাহা আরও বলেন, ওরাল স্যালাইন পানের মধ্য দিয়ে ৯০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব৷ যেহেতু, শিশুদের ডায়রিয়া ভাইরাস জনিত ৷ তাই এক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ওসুধের কোন ভূমিকা নেই৷

বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ওরাল স্যালাইন গ্রহণ করে থাকে৷ এরপরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে পঞ্চাশ হাজার শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়৷ ডা. দীপঙ্কর জানান, সরকার থেকে এই রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে৷ তবে, বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে মায়েদের উব্দুদ্ধ করা এবং পুষ্টিহীনতা রোধ করার মধ্য দিয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব৷

অথচ, পুরো বিশ্বের অন্তত ৬০ শতাংশ শিশুর এই স্যালাইন পাবার সুযোগ নেই৷ আফ্রিকার দেশগুলোতে ডায়রিয়ার প্রকোপ খুব বেশি৷ গত বছর জিম্বাবোয়েতে ডায়রিয়ায় চার হাজার মানুষ মারা গেছে যা কিনা গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি৷

বিশ্বের বৃহত্তম এক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বাংলাদেশের ‘ব্র্যাক' ১৯৮০-র দশকে মেয়েদের এক বিশাল দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ তারপর তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছে৷

ব্র্যাক-এর পরিচালক ফজলে হাসান আবেদ সম্প্রতি বলেন,‘‘এখানে অনেকেই আসেন, এই সমস্যাটিও দেখতে পান৷ তারা ভেবেই পাননা কিভাবে একজন মানুষ প্রতিটি ঘরে গিয়ে গিয়ে এই কাজ করছেন''৷ ফজলে হাসান আবেদ তাঁর উন্নয়ন কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি ইংল্যান্ডের নাইট উপাধি পেয়েছেন৷

জেনেভায় অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডায়রিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. ওলিভার ফন্টেন জানান,‘‘ যখন আমি উন্নত দেশগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর কথা বলি, তখন তারা আমার এই কথা বিশ্বাসই করে না''৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে রয়েছে ম্যাজিক বুলেট, আর শিশুদের এই রোগ থেকে বাঁচাতে হলে প্রতিটি শিশুর কাছে তা পৌঁছে দিতে হবে৷ আর সে জন্য আমাদের অর্থ প্রয়োজন৷ তাহলে বাংলাদেশে এক্ষেত্রে যে অগ্রগতি আমরা দেখেছি তা অন্যত্রও অর্জন করা সম্ভব হতে পারে৷''

প্রতিবেদন : আসফারা হক

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক