বাঘ বিলুপ্ত হওয়ার খবরে শঙ্কিত সুলতানা শিমুর মন্তব্য, ‘‘বাঘ দেশের সম্পদ, তাই তাদের রক্ষা করা অবশ্যই দরকার৷''
ডিডাব্লিউ-র ফেসবুক-বন্ধু আশিক হাসান বলছেন, ‘‘যে দেশে মানবাধিকার নেই, সে দেশের বাঘ বিলুপ্ত নিয়ে ভাবা হচ্ছে৷ বাংলাদেশে আজ যদি কেউ মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, আগামীকালই তাকে অজ্ঞাত পুলিশ বা ব়্যাব দ্বারা গ্রেপ্তার করা হবে এবং কয়েকদিন পরে হয়ত কোথাও তার লাশ পাওয়া যাবে৷'' এর অর্থ, আশিক বলতে চাইছেন, যে দেশে মানুষেরই কোনো মূল্য নেই, সে দেশে জীবজন্তুরই বা কী মূল্য থাকবে!
বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ভেবে চিন্তিত পুরনো বন্ধু অসিত কুমার দাস মিন্টুও৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বাঘ আমাদের জাতীয় সমম্পদ৷ বাঘ মানে বাংলাদেশ৷ রয়েল বেঙ্গগল টাইগার বলতে, বাংলাদেশকে বোঝায়৷ বাঘকে নিরাপদে রাখতে হবে, বাঘের বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে৷ বাঘ হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷'' পাঠক মিন্টু প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদও দিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
নাটকীয় হারে কমছে
২৯শে জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস৷ মূলত বিশ্বের অন্যতম রাজকীয় এই প্রাণীটি রক্ষায় উদযাপন করা হচ্ছে এই দিবস৷ গত শতকে গোটা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখ৷ আর বর্তমানে জঙ্গলে বাঘের এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩,২০০তে৷ এভাবে কমতে থাকলে আগামী দশ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে বাঘ৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
পৌরাণিক কাহিনিতে বাঘ
মানুষের কাছে অন্যতম সম্মানিত প্রাণী হিসেবে বাঘের কথা বিভিন্ন সংস্কৃতির পুরাণে রয়েছে৷ চীনের রাশিচক্রে উল্লিখিত ১২টি প্রাণীর একটি বাঘ৷ এই প্রাণীকে বনের রক্ষক এবং ক্ষমতা, শক্তি ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক মনে করা হয়৷ চীনে পরবর্তী বাঘের বছর ২০২২ সাল৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
উপপ্রজাতিগুলোও হুমকির মুখে
উনিশ শতক অবধি বাঘের নয়টি উপপ্রজাতির দেখা মিলেছিল গোটা বিশ্বে৷ বর্তমানে, ইন্দো-চায়না, মালয়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং আমুর বাঘ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে৷ আর সুমাত্রান এবং দক্ষিণ চীনের বাঘের অবস্থা আরো সঙ্গিন৷ বালি দ্বীপ, জাভা এবং কাস্পিয়ান অঞ্চলের বাঘ গত ৮০ বছরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ বাঘের বিভিন্ন উপপ্রজাতির মধ্যে আকার, রং এবং লোমের আচ্ছাদনে পার্থক্য রয়েছে৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে
ঐতিহাসিকভাবে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, তুরস্ক, রাশিয়ার পূর্ব উপকূল, চীন এবং সার্বিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে বাঘের আবাসভূমি৷ কিন্তু বর্তমানে বাঘের আবাসের ৯৭ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড – যেমন বাসস্থান সম্প্রসারণ, চাষাবাদ এবং রাস্তা নির্মাণের মতো কারণে বাঘের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে৷ থাকার জায়গার সংকটের কারণে সহজেই শিকারিদের ফাঁদে ধরা পড়ছে বাঘ৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
অবৈধ বাণিজ্য
গত এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে চীন এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রথাগত ঔষধ তৈরিতে বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ মূলত বাত এবং চর্ম রোগেই চিকিৎসায় এসব ব্যবহার করা হয়৷ ১৯৮৭ সাল থেকে অবশ্য বাঘের দেহের বিভিন্ন অংশ বিক্রি আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ৷ তবে এখনো কালোবাজারে বাঘের চাহিদা অনেক৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
খামারে বাঘ
জঙ্গলে খুব অল্প কিছু বাঘ টিকে থাকলেও বিভিন্ন খামার এবং চীন ও এশিয়ার বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় বর্তমানে বন্দি আছে পাঁচ হাজারের মতো বাঘ৷ পরিবেশ বিষয়ক অনুসন্ধানী এজেন্সি গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানিয়েছে, খামারে পালন করা বাঘের চামড়া এবং হাড় ব্যবহার করে বিলাসী আসবাব এবং ওয়াইন তৈরি করা হয়৷ এ কারণে জঙ্গলে মুক্ত পরিবেশে থাকা বাঘও শিকার করা হচ্ছে৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
বিনোদনে বাঘ
সেই সতেরো শতক থেকে সার্কাসে ব্যবহার হচ্ছে বাঘ৷ প্রাণিবাদিরা সার্কাসে বাঘের এ ধরনের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন৷ বিশেষ করে বাঘকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদ্ধতি, ক্রমাগত ভ্রমণ এবং অপ্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা৷ ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্কাসে বনের প্রাণী ব্যবহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ভূমি দখল নিয়ে বাঘ এবং মানুষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে জঙ্গলের বাঘ আরো হুমকির মুখে পড়ছে৷ জঙ্গলের পরিধি কমায় খাদ্যের সন্ধানে বাঘ লোকালয়ে হাজির হচ্ছে, হামলা চালাচ্ছে বিভিন্ন গবাদি পশুর উপর৷ ছবিতে একটি বাঘিনীর মরদেহ পরীক্ষা করছেন ভারতের বন কর্মকর্তারা৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে বাঘ আছে বাংলাদেশ সহ এমন ১৩টি দেশ ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে৷ এজন্য বাঘ শিকার বন্ধ এবং বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ ছবিতে শুল্ক বিভাগের হাতে আটক বাঘের চামড়া দেখানো হচ্ছে৷
-
বিলুপ্তির পথে বাঘ
চিড়িয়াখানায় অথবা জঙ্গলে, নাকি দু’টোতেই?
এমনকি স্বনামধন্য চিড়িয়াখানাতেও বাঘের প্রজনন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে৷ এক্ষেত্রে চিড়িয়াখানাগুলোর মন্তব্য হচ্ছে, তারা গবেষণা এবং জীনগতভাবে বৈচিত্র্যময় বাঘের বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে৷ তবে ‘‘বর্ন ফ্রি’’ এর মতো সংগঠনগুলো চায়, বাঘ রক্ষায় জঙ্গলেই আরো উদ্যোগ নেওয়া হোক৷
লেখক: সামান্থা আর্লি / এআই
প্রতিবেদন পড়ে ছদ্মনামে অবিকল নকল লিখেছেন, ‘‘কী মতামত জানাবো? মত প্রকাশের স্বাধীনতা এই দেশে নাই৷ সরকার বিরোধী কিছু কইলেই আমি হই জঙ্গি, না হয় জামাত শিবির না হয় রাজাকার৷''
অন্যদিকে রাজনৈতিক রসিকতা করে রানা কর্মকার লিখেছেন, ‘‘আরে ভাই বাংলার বাঘ তো মাঠে খেলতাছে, বিলুপ্ত হয় কেমনে?''
কামরুজ্জামান বিপ্লবের রসিকতা এ রকম, ‘‘বাঘগুলোকে হায়না খেয়ে ফেলেছে!!''
‘‘জলবায়ু পরিবর্তন আর মানুষের খারাপ স্বভাবের কারণেই বাঘ বিলুপ্ত হচ্ছে'' – এই বলে দুঃখ করেছেন বন্ধু নোমান উদ্দিন৷
আমাদের ফেসবুক-পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ বাঘকে অলস প্রাণি বলছেন, আবার অনেকে বাঘকে বন্ধু মনে করেন বলে লিখেছেন৷ নাজমুল শাহ সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন, বাঘ রক্ষা করতে সুন্দরবনে বিজিবি মোতায়েন করবার জন্য!
সাইদুল ইসলামের পাল্টা উত্তর, ‘‘বাঘ বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই দেশ প্রধানের৷''
তাসকিন আহমেদ নূরের গর্বিত মন্তব্য, ‘‘বাঘ বাংলার অহংকার৷''
জামশেদুল আলম বাংলার বাঘ নিয়ে গর্বিত৷ তবে তিনি চিন্তিত, কারণ: ‘‘আগামীতে বাঘের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে যেতে পারে''৷ তাই তাঁর পরামর্শ, এর জন্য আইনের সাহায্য নিতে হবে৷
শিশির ইসলামের মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সকলকে ‘সিরিয়াসলি' ভাবতে হবে৷''
রুবেল ভাট মনে করেন, সুন্দরবনের পরিবেশ দূষণই নাকি বাঘ কমে যাওয়ার কারণ৷ আর শফিক আল-জাবির রহিমের ধারণা, খাঁচায় বন্দি বাঘগুলোকে ছেড়ে দিলেই নাকি বাঘের সংখ্যা বেড়ে যাবে৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ