1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঙালির গর্বের মানুষ সত্যজিত রায়

২ মে ২০১০

যে কজন বাঙালিকে নিয়ে আমাদের গর্ব চিরকালীন, তাঁদেরই একজন সত্যজিত রায় আজ বেঁচে থাকলে নব্বই বছরে পড়তেন৷বিংশ শতাব্দের সিনেমা যে নামগুলিকে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছে, তাঁদের মধ্যে বাঙালি সত্যজিত অন্যতম৷

https://p.dw.com/p/NCag
সত্যজিত রায়ছবি: AP

সত্যজিত রায়ের জন্ম পরাধীন ভারতবর্ষের কোলকাতায়৷ এক সংস্কৃতিমোদী পরিবারে৷ যে রায় পরিবার বাংলা সাহিত্য, শিল্পকে দিয়েছে বহুকিছু৷ সময়টা হল দোসরা মে, ১৯২১৷ অল্প বয়সে প্রখ্যাত লেখক পিতা সুকুমার রায়কে হারান সত্যজিত৷ পড়শোনা করেন শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের গভীর সান্নিধ্যে আর সাংস্কৃতিক পরিবেশে৷

যুবক বয়সে তাঁর আগ্রহ ছিল ছবি আঁকায়৷ শুরু করেন কমার্শিয়াল আর্টিস্টের কাজ৷ অ্যাড এজেন্সিতে৷ এরপর লন্ডন যাত্রা এবং সেখানেই পাশ্চাত্ত্যের নব্যধারার বা নিও রিয়ালিজমের ছবির সঙ্গে তাঁর পরিচয়৷ ফরাসি নির্দেশক জঁ রেনোয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় ইউরোপে৷ ইটালিয় পরিচালক ভিতোরিও দে সিকার ‘দ্য বাইসাইকল থিফ' নামের নব্য বাস্তবতার ছবিটি ১৯৪৮ সালে লন্ডনে দেখে মুগ্ধ হন সত্যজিত৷ খুঁজে পান তাঁর নিজের কাজের পথ৷

দেশে ফিরে শুরু হয় সংগ্রাম৷ ছবি বানানোর জন্য৷ প্রথম ছবি পথের পাঁচালি৷ বিভূতিভূষণের ধ্রুপদী উপন্যাস ছিল যার উত্স৷ এই ছবিটিই বিশ্বের আঙিনায় ভারতীয় ছবিকে পৌঁছে দেয়৷ শোনা যায়, বিশ্বের কোথাও না কোথাও আজও প্রতিদিন যে ছবিটি অন্তত একবার করে দেখেন কেউ না কেউ, তার নাম ওই পথের পাঁচালি৷ ১৯৫৫সালে তৈরি এই ছবি মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে৷

Rabindranath Tagore.jpg
রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে শান্তিনিকেতনে সত্যজিত কাটিয়েছিলেন তাঁর শৈশবের অনেকটাই৷ছবি: picture-alliance/dpa

অপু ট্রিলজি সত্যজিতের এক অসামান্য কাজ৷ তার বাইরে রবীন্দ্রনাথের কাহিনী নির্ভর চারুলতা বা ঘরে বাইরে ছাড়াও ছবি বানিয়েছেন প্রায় আমৃত্যু৷ পথের পাঁচালি দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ১৯৯১ সালে নিজের কাহিনী নির্ভর আগন্তুক ছবি দিয়ে সেই যাত্রার সমাপ্তি৷ মৃত্যু ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল৷

বাঙালিকে সত্যজিত তাঁর মেধা আর চিন্তনের যে ফসল উপহার দিয়ে গেছেন, তা সর্বকালের গর্ব৷ সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোরের সৃষ্টি দুটি চরিত্র গুপী বাঘা আর তাদের কার্যকলাপকে তিনি নিজে ছবিতে রূপ দিয়েছেন৷

একের পর এক কাহিনী সৃষ্টি করেছেন এই দুটি কিশোরপ্রিয় চরিত্র নিয়ে৷ বস্তুত, কিশোর বা শিশুদেরই নয়, গুপী বাঘা হয়ে উঠেছে সব বয়সের মানুষের কাছেই সমান গ্রহণযোগ্য৷ তাছাড়া বাঙালিকে দেওয়া তাঁর আরও উপহার এক একশোভাগ বাঙালি গোয়েন্দা ফেলুদা বা প্রদোষ মিত্র৷ ছবি করেছেন ফেলুদাকে নিয়েও৷

জন্মদিন আসে জন্মদিন ফিরে যায়৷ যেমন এই দোসরা মে৷ এই দিনটায় বেঁচে থাকলে তাঁর নব্বই হত৷ সেটা তো শুধুই একটা সংখ্যার হিসাব মাত্র৷ হয়তো আরও অনেক কাজ করতেন তিনি৷ পাওনা হত সেটাও আমাদের মননের৷ কিন্তু, যা করে গেছেন, তা আমাদের সকলের কাছেই আত্মার প্রিয় সম্পদ হয়ে রয়ে গেছে৷ থাকবেও৷ যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, থাকবে সুস্থ সংস্কৃতি, রুচি আর সৃজনের মূল্য, ততদিন এই সম্পদ আমাদের ঘুরেফিরেই ঋদ্ধ করবে৷ আনন্দ দেবে৷

প্রতিবেদন- সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা - সাগর সরওয়ার