1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে ফিল্ম তৈরি

১৪ মার্চ ২০১১

জার্মানিতে প্রথমবারের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছবি তৈরির ওপর কোর্স করাচ্ছে৷ কোর্সে ভর্তি হচ্ছে বাচ্চারা৷ ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইউনিভার্সিটি কনরাড ভল্ফ’ পটসডামের বিশ্ববিদ্যালয়৷

https://p.dw.com/p/10Ydu
Kinder, film, university, Konrad, Wolf, Potsdam, museum, জার্মানি, বিশ্ববিদ্যালয়, বাচ্চা, ছবি, কোর্স, Germany, চলচ্চিত্র,
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ে বাচ্চাদের জন্য ছবি তৈরির কোর্সছবি: DW/Nadine Wojcik

যে কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার জন্য চাই নির্দিষ্ট একটি বয়স এবং মেধা৷ তবে জার্মানি সম্প্রতি বাচ্চাদের একটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ তা হল চলচ্চিত্র তৈরি৷ বার্লিনের পট্সডামের কাছে অবস্থিত ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইউনিভার্সিটি কনরাড ভল্ফ'৷ এখানে খুদে খুদে বাচ্চারা আসছে চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে পড়াশোনা করতে৷

প্রতিটি বাচ্চাকেই বাধ্যতামূলকভাবে ভর্তি হতে হচ্ছে৷ প্রথম সেমেস্টারে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী৷ সবার বয়স নয় থেকে বারো বছরের মধ্যে৷ প্রথমদিন সবাই ক্লাসে উপস্থিত৷ পুরো একটি সেমেস্টার ধরে বাচ্চাদের শেখানো হবে চলচ্চিত্র কী, ক্যামেরার কাজ কী, এ্যাকশান-কাট – এসব বলতে কি বোঝায়৷ তবে সবার আগে বোঝানো হচ্ছে চলচ্চিত্রের ইতিকথা৷ বাচ্চাদের জন্য বিষয়টি একটু খটখটে, তাই না?

একটি বাচ্চা জানাল, ‘‘আমার কাছে পুরো বিষয়টি দারুণ লাগছে৷ কীভাবে ছবি তৈরি করা হয় তা আমরা শিখবো৷'' আরেকজন বলল,‘‘ আমি প্রচুর ছবি দেখি৷ আমার বাবা-মা সবসময়ই বলেন, আমার মধ্যে ছবি তৈরির প্রতিভা লুকিয়ে আছে৷ একারণেই আমি ছবি সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করতে চাই৷ কীভাবে রেকর্ড করা হয়, এসব৷'' হেনড্রিক বলল,‘‘আমি প্রায় প্রতি বছরই আমার বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরায় কিছু না কিছু রেকর্ড করি, ছবি তৈরির চেষ্টা করি৷ আমার কাছে পুরনো একটি ক্যামেরা আছে, ফিল্মও আছে৷''

Kinderfilmuni Konrad Wolf Potsdam
ছবি তৈরি কোর্সের খুদে শিক্ষার্থীরাছবি: DW/Nadine Wojcik

বারো বছরের হেনড্রিকের সত্যিই একটি ভিডিও ক্যামেরা আছে৷ ফিল্মও আছে৷ তবে আজকাল এধরণের ক্যামেরা নিয়ে আর কেউ কাজ করে না৷ তাই অত্যন্ত আধুনিক ক্যামেরা দেখে সে মোটই চমকে যায়নি৷ অত্যাধুনিক ক্যামেরায় ক্যামেরা-ওয়ার্ক চমকে দেয়ার মত৷

ক্লাস চলাকালে প্রথম সারিতে দশটি ছেলে-মেয়ে এসে বসেছে৷ চলচ্চিত্রের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তারা জেনে নিচ্ছে৷ প্রতি শনিবার চলচ্চিত্রের ইতিকথা নিয়ে ক্লাস নেয়া হয়৷ সবমিলে ছয়টি ক্লাস নেয়া হবে৷ তাই কোন প্রতিযোগিতা নেই৷ সেমেস্টার শেষে সবাইকে একটি সার্টিফিকেট দেয়া হবে৷

ক্লাইডিয়া ভেগেনার বললেন,‘‘ ইদানিং বাচ্চারা অনেক ছোট বয়স থেকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ বাচ্চাদের জন্য ছবিও ইদানিং তৈরি হচ্ছে অনেক৷ সেল ফোন দিয়ে অনেকেরই শর্ট-ফিল্ম তৈরির নেশা রয়েছে৷ ডিজিটাল ক্যামেরা আজকাল প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে৷ প্রাপ্তবয়স্করা সবাই যদি কম-বেশি ক্যামেরায় রেকর্ড করতে পারেন, তাহলে বাচ্চারা বাদ থাকবে কেন? তাদের আমরা আরো ভালভাবে তৈরি করে দিতে পারি৷''

কথাগুলো জানান ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইউনিভার্সিটি কনরাড ভল্ফ'এর অধ্যাপিকা ক্লাউডিয়া ভেগেনার৷ চার বছর আগে তিনি বাচ্চাদের জন্য এই কোর্সটি চালু করার কথা ভাবেন৷ বাচ্চাদের বেছে নেয়া হয় না৷ যে আবেদন করে, তাকেই নেয়া হয়৷ প্রতি সেমেস্টারে প্রায় ৮০টি সিট রয়েছে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন ক্রিস্টিনা হান্ডকে৷ পাশাপাশি তিনি পট্সডামের ফিল্ম মিউজিয়ামেও কাজ করেন৷ ক্রিস্টিনা জানান,‘‘ বাচ্চারা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সরল৷ তারা অনেক প্রশ্ন করে, যেগুলো সাধারণত বড়রা করে না৷ যেমন –‘হঠাৎ করে নায়ক কোত্থেকে এলো?', ‘এই কাজটা কীভাবে করা হল?' আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বাবা-মায়েরাও দিতে পারেন না৷ তারাও তখন চিন্তিত হয়ে পড়ে৷ তারাও তখন জানতে চান বিষয়গুলো৷''

Kinderfilmuni Konrad Wolf Potsdam
ছবি তৈরি কোর্সের এক খুদে শিক্ষার্থীছবি: DW/Nadine Wojcik

এসব খুদে বাচ্চারা আসলেই জানতে চায়, শিখতে চায়৷ প্রায় প্রতি মিনিটেই তারা অধ্যাপিকার লেকচার থামিয়ে প্রশ্ন করছে৷ প্রতিটি ক্লাসের শেষে তাদের দেখানো হচ্ছে সত্যিকারের ফিল্ম রিল, ক্যামেরা এবং সঙ্গীতের নানা যন্ত্র, যা চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে৷

একটি ছেলে বলল,‘‘আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে, যখন আমাদের পুরো ছবিটি দেখানো হয়েছে৷ ছবিটি অনেক পুরনো ছিল, আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় মনে হয়েছে৷ কারণ ইদানিং এগুলো একেবারেই দেখা যায় না৷ অনেকে কোনদিন চোখেও দেখেনি৷ তবে ছবির কোন কোন জায়গায় আমার মনে হয়েছে এই জায়গা বা এই মানুষগুলোকে আমি চিনি৷ খুব হালকাভাবে আমার তা মনে হয়েছে৷''

কোর্সের শেষে থাকবে একটি প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা৷ সবাইকে একটি ফিল্ম তৈরি করতে হবে৷ এভাবে পরিচিতি পাবে খুদে এসব ফিল্মমেকাররা৷ একসময় তারা হয়তো কাজ করার সুযোগ পাবে পেশাদারদের সঙ্গে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন