1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাতিল কারখানায় সংগীত উৎসব

মিরিয়াম ডাগান / এসবি১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩

বিশ্বায়নের এই যুগে জার্মানিতে অনেক বড় বড় কারখানা বাতিল হয়ে গেছে৷ কিন্তু ঐতিহাসিক কারণে এর অনেকগুলি ইউনেস্কো স্বীকৃত সৌধে রূপান্তরিত হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/19hDB
ছবি: Martin Menke/Trägerverein Haus der Vereine in der Alten Dreherei e.V.

আগে যেখানে ব্লাস্ট ফারনেস-এর আগুন জ্বলতো, এখন সেখানে ডিজে দর্শকদের মাতাচ্ছেন৷ চলছে ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক' উৎসব৷ সম্প্রতি ইউরোপের সেরা ফেস্টিভাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই আয়োজন৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত জার্মানির সারলান্ড রাজ্যের এক ইস্পাত কারখানায় চলে এই উৎসব৷ সমবেত দর্শকদের কেউ বলেন, আদর্শ লোকেশন৷ কেউ আবার বলেন, ধাতু, ইস্পাত – শক্ত সব জিনিস৷ মানুষকে কেমন যেন আচ্ছন্ন করে দেয়৷

এই উৎসবের অন্যতম জনপ্রিয় ডিজে-র নাম ইয়াকব ডিলসনার, লোকে তাঁকে ‘ভাংকেলমুট' বলেই চেনে৷ ২০১২ সালে তাঁর হিট রিমিক্স ‘ওয়ান ডে' জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের চার্টের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল৷ ডিলসনার বলেন, ‘‘আমাকে বলতেই হবে, গোটা স্থাপত্য ও শিল্পের এই পরিবেশ সত্যি রোমাঞ্চকর৷ টেকনো পার্টির জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত৷ কারণ টেকনো মানেই তো যন্ত্রের সংগীত৷ তাই যেখানে এককালে মানুষ কাজ করেছে, সেখানে তা মানায় বটে৷''

প্রায় একশো বছর ধরে শ্রমিকরা এই সব যন্ত্রপাতির সাহায্যে লোহা ও ইস্পাত তৈরি করেছেন৷ ১৯৮৬ সালে ফ্যোলকিংঙেন লোহার কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেয়৷ ভারী শিল্পের প্রথম যুগের এত বড় কোনো লোহার কারখানা গোটা বিশ্বে আর নেই, যা এখনো সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে৷

ফ্যোলকিংঙেন-এর এই ঐতিহ্যস্থলের প্রধান মাইনরাড গ্রেভেনিশ৷ তিনি শুধু প্রায় ৬ লাখ বর্গমিটার প্লান্টটির সংরক্ষণ করেই সন্তুষ্ট নন৷ তিনি এখানে আরও সাংস্কৃতিক ছোঁয়া চান৷ যেমন এখন চলছে এক ‘স্ট্রিট আর্ট' প্রদর্শনী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের এই পপ সংস্কৃতির সন্তান বা উত্তরসূরী মনে করি৷ কারণ ভারী শিল্প, উৎপাদন – এসবের প্রতি আকর্ষণও তো পপ আর্ট-এর অঙ্গ৷ আর পপ সংস্কৃতির মাধ্যমেই ভারী শিল্পের এই জায়গাটি প্রথম বারের মতো সংস্কৃতির স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে৷''

আগে শ্রমিকদের জন্য এটা ছিল কঠিন জায়গা৷ কোক ওভেনে ১,২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তাপে কয়লা জ্বালানো হতো৷ গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ফ্যোলকিংঙেন-এর কারখানায় ১৭,০০০ পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করেছেন৷

তবে রুয়র এলাকাই ছিল জার্মানির সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পাঞ্চল৷ তারপর বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ইস্পাত ও কয়লা প্রস্তুতকারকরা বাজারে ভিড় জমাতে শুরু করলো৷ তখন একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে লাগলো৷

রুয়র এলাকায় এই নিয়ে তৃতীয় বার ‘এক্সট্রা শিফট' নামের সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ পুরানো কারখানা ও খনি এলাকায় প্রায় ২ লাখ মানুষ এসেছেন৷ এক দর্শক জানালেন, ‘‘তরুণ বয়সে আমি নিজে একাধিক পিট ও কোক ওভেনে কাজ করেছি৷ এখন সংস্কৃতি দেখতে ‘এক্সট্রা শিফট' উৎসবে যাই৷ সেখানে আমি আমার নিজের অতীতের একটা অংশ দেখতে পাই৷ বেশ ভালো লাগে৷''

উৎসবের একটি অনুষ্ঠান বসে হাটিঙেন-এর কারখানায়৷ অভিনেতারা সে সময়কার যন্ত্রপাতি নিয়ে শব্দের জাল বোনেন৷ প্রেরণার উৎসই হোক অথবা মঞ্চ – গত কয়েক দশকে শিল্প কারখানাগুলি অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে৷ অভিনেতা উভে স্মিডার বলেন, ‘‘চলচ্চিত্রে দেখা যায়, শ্রমিকরা কীভাবে প্রচণ্ড গরম, নোংরা পরিবেশের মধ্যে কাজ করতেন, ঘামতেন৷ তার মধ্যেও ছিল একটি সাউন্ড বা শব্দ৷ এই শব্দ কানে নিয়েই তাঁরা বাসায় ফিরতেন, বিছানায় নিয়ে যেতেন, সকালে উঠতেন৷ এটাই ছিল তাঁদের জীবন৷''

এককালের শিল্প কারখানা সংস্কৃতি কেন্দ্র ও স্মৃতিশোধে রূপান্তরিত হচ্ছে৷ গোটা বিশ্বেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ শুধু ব্রিটেনেই ৬টি প্লান্ট ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে৷ জার্মানিতে সংখ্যাটা ৪৷ বছরে একবার টেকনো-ফ্যানরা জায়গাটির দখল নেয়৷ শিল্পের ভগ্নস্তূপ তখন নতুন রূপে জেগে ওঠে৷