1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবরোধের সঙ্গে নতুন কর্মসূচি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৯ জানুয়ারি ২০১৫

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে লাগাতার অবরোধ বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট আর কতদিন চালিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও, খালেদা জিয়া অনড়৷ তাই অবরোধের সঙ্গে হরতাল এবং গণমিছিলের কর্মসূচি নিতে চলেছে দলটি৷

https://p.dw.com/p/1ESoa
Proteste in Dhaka Bangladesch 24.12.2014
ছবি: AFP/Getty Images

অবরোধের ২৪তম দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, ঢাকা মহানগরীসহ ন'টি জেলায় ২৪ ঘণ্টার হরতাল চলছে৷ এর আগেও অবরোধের মধ্যেই টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করেছে বিএনপি জোট৷ এর সঙ্গে অবরোধ অব্যাহত রেখে সহসাই গণমিছিল বা গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি৷ বিএনপি নেতারা মনে করছেন, টানা অবরোধ চালিয়ে যেতে হরতাল, গণমিছিল বা গণসমাবেশের মতো কর্মসূচি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে৷ এর কারণ, রাজধানী ঢাকা এর মধ্যেই অবরোধের চরিত্র হারিয়েছে৷ দেশের অন্যান্য স্থানেও অবরোধ চলছে ঢিলেঢালাভাবে৷ তাই অবরোধের মধ্যেই বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে অবরোধকে চাঙ্গা রাখার কৌশল অবলম্বন করার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি নেতারা৷

তাঁরা মনে করছেন, সরকারের কঠোর মনোভাব এবং নতুন করে ক্রসফায়ার বেড়ে যাওয়া অবরোধে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে৷ এছাড়া পেট্রোলবোমাসহ বাস পোড়ানো ও নাশকতা সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ তাই জনসম্পৃক্তা বাড়িয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই৷ বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ তাঁদের উত্‍সাহিত করেছে৷ তাই তাঁরা মনে করছেন, অবরোধ অব্যাহত রেখে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিলে তাতে লোক সমাগম হবে৷

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবারের আন্দোলনকে ‘বাঁচা-মরার লড়াই' হিসেবে দেখছেন৷ তিনি তাই কোনোভাবেই অবরোধ থেকে সরে আসতে চাইছেন না৷ বিএনপির মধ্যে যাঁরা অবরোধ স্থগিত করে অন্য কর্মসূচির কথা বলার চেষ্টা করছেন, তাঁরা খালেদার তোপের মুখে পড়ছেন, বিরাগভাজন হচ্ছেন৷

গুলশান কার্যালয়ে টানা ১৬ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হয়ে ১৯শে জানুযারি বিকেলে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের ন'জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে প্রবীণ কয়েকজন সদস্য রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে দলের করণীয় সম্পর্কে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি৷ বাকি কয়েকজন অবশ্য নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন৷ আর টানা অবরোধের বিপক্ষে দেওয়া নেতাদের বক্তব্য ‘কঠোর ভাষায়' খণ্ডন করে অবরোধের পক্ষে ‘অনড়' অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া৷

তিনি বলেন, ‘ডু অর ডাই'৷ যা হবার তাই হবে৷ টানা অবরোধ ছাড়া সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা যাবে না৷ তিনি আরও বলেন যে, অতীতের ভুল পথে তিনি আর পা দিতে চান না৷ বলা বাহুল্য, চেয়ারপার্সনের এহেন কঠোর মনোভাবে নিশ্চুপ হয়ে যান টানা অবরোধবিরোধী নেতারা৷

এদিকে বিএনপির বহু কর্মসূচির ব্যাপারেই শীর্ষ নেতাদের অনেকেই তেমন কিছু জানেন না৷ যেমন ২১শে জানুয়ারি থেকে বিএনপির অরোধের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল দলের স্থায়ী কমিটি বা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়৷ আবার বৃহস্পতিবার থেকে ডাকা ঢাকাসহ ন'টি জেলার হরতালে ঢাকা মহানগরী অন্তর্ভূক্তই ছিল না৷ পরে বিবৃতি দিয়ে ঢাকা মহানগরীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ তাছাড়া সময়সীমাও ১২ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা করা হয়৷ আর এই কর্মসূচিও দেয়া হয় এককভাবে৷

Bangladesch Khaleda Zia vor dem Gericht in Dhaka
অবরোধ অব্যাহত রেখে সহসাই গণমিছিল বা গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপিছবি: M. uz Zaman/AFP/Getty Images

জানা গেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে অবস্থানরত তাঁর বড় ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই কর্মসূচি ঠিক করছেন৷ দু'জনই অবরোধ অব্যাহত রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনড়৷ এ কারণে খালেদা নিজের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার দিনও অবরোধ শিথিল করতে রাজি হননি তাঁরা৷

তাঁরা মনে করছেন, অব্যাহতভাবে এই আন্দোলনে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একমসয় ক্লান্ত হয়ে পড়বে৷ সরকারের ওপরও দেশি-বিদেশি চাপ বাড়বে৷

বিএনপির এক নেতা উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোকোর জানাজায় অনেক মানুষ হওয়ায় সরকার কিছুটা হলেও চিন্তায় পড়েছে৷ তাই আওয়ামী লীগ অবরোধে নিহতদের গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি দিয়েছে শুক্রবার৷ অবশ্য এর বিকল্প হিসেবে বিএনপি আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহয়াতা দেয়ার চিন্তা করছে৷

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান আন্দোলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিত যে আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে যাওয়ার আগে অবরোধ প্রত্যাহার হচ্ছে না৷ আর অবরোধের মধ্যেই জেলায় জেলায় হরতাল বা সারাদেশে হরতাল ডাকা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা কৌশল৷''

তিনি বলেন, ‘‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া এই আন্দোলন নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন৷ কারণ তিনি দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি৷ এছাড়া কর্মসূচি গোপন রেখে সময়মত ঘোষণা করাও একটি কৌশল৷'' তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া কর্মসূচি নিয়ে দলের নির্ভরযোগ্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন৷ তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়াই নেন৷''

আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘টানা অবরোধ চালিয়ে নিতে গণমিছিল বা গণসমাবেশ ছাড়াও আরো নতুন কর্মসূচি আসতে পারে৷ তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ আর তা চূড়ান্ত হলেও আগেভাগে জানার কোনো সুযোগ নেই৷ তবে সময় মতোই জানানো হবে৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘এই আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ আছে৷ তার বড় প্রমাণ আরাফাত রহমান কোকোর ঢাকার জানাজায় বিপুল মানুষের উপস্থিতি৷ তাই আন্দোলনের কৌশল হচ্ছে অবরোধ অব্যাহত রেখে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি ঘোষণা করা৷''

তিনি বলেন, ‘‘কর্মসূচি ঘোষণায় দলের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই, তবে গোপনীয়তা আছে৷ পরিস্থিতির কারণেই এ কৌশল নিতে হচ্ছে বিএনপিকে৷''

আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি বলতে কী মনে করছেন জানতে চাইলে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন ঘোষণা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য