1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধারা আজও কেন অসহায়?

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

এক শহিদের সন্তানের সিদ্ধান্ত, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অমর্যাদা, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ জানাতে তিনি বিজয় দিবসে কোনো সাক্ষাত্‍কার দেবেন না, কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন না৷ বাংলাদেশে অনেকক্ষেত্রেই আজও কেন মুক্তিযোদ্ধারা অসহায়?

https://p.dw.com/p/2UO4J
সংসদ ভবনের সামনে সেল্ফি তুলছে দুই নারী
ছবি: DW

গত ৯ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অমর্যাদা, নির্যাতন এবং হত্যার যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসবের প্রতিবাদে বিজয় দিবসে কোনো সাক্ষাত্‍কার না দেয়া এবং কোনো অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান শহিদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ৷ সত্যি সত্যিই এবার তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যাননি৷ নিজের জায়গা থেকে নিজের সাধ্যমতো প্রতিবাদের কথা জানিয়ে শাওন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতন, অপমান এবং হত্যার বিরুদ্ধে এটা আমার নীরব প্রতিবাদ৷ যার যার স্থান থেকে তাঁর সাধ্য মতো কাজ করাতে বিশ্বাসী আমি৷ আমার স্থান থেকে এটুকুই সামর্থ, এটুকুই সাধ্য – এ সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার৷ আমার এই প্রতিবাদে আপনাদের সমর্থন আশা করছি৷''

জাতির পিতার আদর্শের দল যখন রাষ্ট্রের ক্ষমতায়, তখন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে কীভাবে পেটানো হয়, তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কাছে জানতে চেয়েছেন শহিদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী৷ গত বুধবার শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আলোচনা অনুষ্ঠানে শহিদ চিকিত্‍সক আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত বলেন, ‘‘আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই, আপনারা যদি সোনার বাংলা আর বঙ্গবন্ধুর আর্দশের লোক হন, তাহলে মুক্তিযোদ্ধার গায়ে কীভাবে রডের বাড়ি পড়ে? আমি আপনাদের কাছে এর জবাব চাই৷''

গত ১৮ অক্টোবর ঝিনাইদহের শৈলকূপায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ মৃধার ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যেই এ প্রশ্ন করেন তিনি৷ মুক্তার মৃধার পরিবারের অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আব্দুল হাই এবং শৈলকূপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোনা সিকদারের অনুসারীরাই ওই হামলা চালিয়েছিল৷ নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা এই বাংলাদেশ চাই না৷ আমরা চেয়েছি, যত শোক, যত বিচারহীনতার সংস্কৃতি – সব চলে যাক৷ শহিদ সন্তানদের বুকে এটা যে কত বড় আঘাত, সম্মানে যে কত বড় অপমান, আশা করি আপনারা এটা বুঝতে পারবেন৷''

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সারওয়ার আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে সচেষ্ট রয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, স্থানীয় যারা নেতা বা সমাজপতি, তাদের উপর রাষ্ট্র হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বা তারা লোভের বশবর্তী হয়ে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, যা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না৷'' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনে ও দলের মধ্যে প্রচুর আবর্জনা জুটেছে বলে আমার ধারণা৷ এই আবর্জনা যদি দূর করতে সরকার উদ্যোগী না হয়, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের বিষয় না৷ এখানে এটা করা না গেলে মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবাদর্শের বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে৷''

সারোয়ার আলি

তবে স্বাধীনতার এত বছর পর দেশি-বিদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হচ্ছে৷ বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারও হয়েছে৷ এর মধ্যে ছ'জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকরও করা হয়েছে৷ এই সরকারের নেয়া অনেকগুলো ইতিবাচক পদক্ষেপও আছে৷ তবুও মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত হওয়া, অপমানিত হওয়ায় উদ্বিগ্ন বিশিষ্টজনরা৷

যুদ্ধের সময় আলতাফ মাহমুদের বাড়ি থেকে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন চারুকলার শিক্ষক শিল্পী আবুল বারক আল্ভী৷ তিনি ছিলেন, ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য৷ অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন ড্রাম ফ্যাক্টরি থেকে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশের পট পরিবর্তন হয়৷ সেই থেকে দীর্ঘ সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকেনি৷ এরপর যুদ্ধাপরাধীদের দেশে আনা হয়েছে, পূনর্বাসন করা হয়েছে৷ ফলে তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে৷ অর্থনৈতিকভাবেও তারা অনেক শক্তিশালী হয়েছে৷ এখন একটা পরিবর্তন হচ্ছে৷ এখন সবাইকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে৷ নতুন প্রজন্মকে আরো এগিয়ে আসতে হবে৷ তাহলেই হয়ত অবস্থার পরিবর্তন হবে৷''

আবুল বারোক

এই ৪৫ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা যে এখন বিশ্বের দরবারে ‘রোল মডেল' হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তা উঠে এসেছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিজয় দিবসের বাণীতে৷ গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রহীন অবস্থায় নৈরাজ্যের অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে দাবি করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷

শুক্রবার বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্তিতে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই মাটির মুক্তির জন্য প্রাণ দেওয়া ৩০ লাখ শহিদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে দেশবাসী৷ সরকারি-বেসরকারি সব ভবনে উড়েছে জাতীয় পতাকা, সাভার স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব শহিদ বেদীগুলো ভরে উঠেছে শ্রদ্ধার ফুলে৷ পথে পথে চলেছে বিজয়ের শোভাযাত্রা৷

চার দশক পর শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার চলার মধ্যেই আবার বিজয় দিবস উদযাপন এবং ছয়জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিকে নতুন বিজয় হিসেবে দেখছেন মুক্তিযোদ্ধারা৷ নিয়মিত কর্মসূচির সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল নিষিদ্ধ এবং দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবিও উঠছে এবার৷ বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে৷ এরপর পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচী৷

মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষায় কোন কাজটি সবার আগে করা জরুরি? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান