1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশি কনেদের রক্ষায় আইন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া

১৯ ডিসেম্বর ২০১০

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদেশি স্ত্রীদের উপর নির্যাতন ও পীড়নের নানা ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ এবার নড়েচড়ে বসেছে৷ বিদেশি বৌদের সুরক্ষায় আইন করেছে সৌল সরকার৷ বিয়ের ঘটকালি করে যে এজেন্সিগুলো তাদের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/Qfqd
ভারতীয় কনেছবি: picture-alliance / dpa

কনে ভিয়েতনামের৷ আর বর দক্ষিণ কোরিয়ার৷ বর আর কনে, তাঁরা কিন্তু আগে থেকে দু'জন দু'জনকে চিনতেন না৷ তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো একটি এজেন্সি৷ এবছর জুলাই মাসে মানসিকভাবে অসুস্থ স্বামীর হাতে খুন হন ভিয়েতনামের সেই নারী৷ কিন্তু প্রশ্ন, ম্যারেজ এজেন্সি কি আগে থেকে জানতোনা তাঁর স্বামীর কথা? নাকি জেনেশুনেই গোপন করেছিলো পাত্রের মানসিক অসুস্থতার কথা!

সামাজিক বন্ধন বিয়ে৷ বিয়ে যে সবসময় একই সমাজের দু'জন মানুষের মধ্যে হয়, তা নয়৷ বিয়ে হতে পারে এক সমাজ থেকে আরেক সমাজের মানুষের মধ্যে৷ হতে পারে এক দেশের মানুষের সঙ্গে আরেক দেশের মানুষেরও৷ এমনই এক বিয়ে হয়েছিলো দক্ষিণ কোরিয়ায়৷ কিন্তু ভিয়েতনামের সেই কনেকে খুন করে তাঁর কোরিয়ান স্বামী৷ আর তারপর যেন টনক নড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার৷ এই ধরণের ম্যারেজ এজেন্সিগুলোর কার্যক্রমের উপর নজরদারি শুরু করেছে সরকার৷ প্রণয়ন করেছে নতুন আইন৷

Buchcover Bapsi Sidhwa: The Pakistani Bride

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের টেবিল ঘিরে বসে আছেন কয়েকজন নারী৷ তাঁরা কথা বলছেন নিজেদের মধ্যে৷ এমন দৃশ্য প্রায় দেখা যায় এখানে৷ প্রায় চল্লিশ জন নারী সারা বছর ধরেই বাস করেন এখানে৷ তাঁদের বেশিরভাগই এসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে৷ এবং ম্যারেজ এজেন্সিই প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো তাঁদের কোরিয়ান স্বামীদের সঙ্গে৷

এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ভিয়েতনামের একজন নারী৷ দেখলে মনে হয়, বয়স বিশ বছরের বেশি হবে না৷ নাম হং৷ সেই দিনটির কথা এখনও তাঁর মনে পড়ে৷ যেদিন একজন ঘটক এসে তাঁদের বাড়ির দরজায় কড়া নেড়েছিলেন৷ হং বলেন, ‘‘ঐ ঘটক মহিলা আমাদের প্রতিবেশী সবার বাড়িতেই গিয়েছিলেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ার ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি এমন মেয়ের খোঁজ করছিলেন তিনি৷ কথাবার্তা বলে তিনি আমাকে মুগ্ধ করে ফেলেন৷ প্রথমদিকে আমার পরিবার এই বিয়েতে রাজি ছিলো না৷ কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দক্ষিণ কোরিয়ার ছেলেকেই আমি বিয়ে করবো৷ তাহলে সহজেই সেইদেশে যেতে পারবো৷''

মাত্র একদিনের পরিচয়েই হং বিয়ে করেছিলেন কোরিয়ান পাত্রকে৷ তিনি জানতেন, কোরিয়ায় তাঁর জীবন সহজ হবে না৷ তিনি কিংবা তাঁর স্বামী একে অপরের ভাষা জানতেন না৷ কিন্তু শেষে পরিস্থিতি যে এত বেশি খারাপ হবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি৷

হং বলেন, ‘‘আমার স্বামী দিনরাত মদ খেতো৷ প্রতিরাতে আমাকে যৌন মিলনে বাধ্য করতো৷ এমনকি তার বোনও আমাকে বলত যে আমি তার জীবন ধ্বংস করে ফেলেছি৷ তাই আমি তার কিংবা তার পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরণের সমর্থন পেতামনা৷ কিন্তু ভিয়েতনামে ফিরে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিলোনা আমার৷ কারণ এইসব সমস্যা নিয়ে আমি আমার পরিবারের বোঝা হতে চাইনি৷''

এভাবে চলতে থাকলে একসময় হং তাঁর ম্যারেজ এজেন্সি'র কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করেন৷ এরপর তাঁর স্বামী আরও হিংস্র হয়ে উঠে৷ তাকে মারধোর করে৷ এমনকি ছুরি নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসে৷ পরে পুলিশ এসে তাকে এই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে৷ হং এর অভিযোগ, যে ম্যারেজ এজেন্সি তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো সেই এজেন্সি ইচ্ছা করেই তাঁর স্বামীর আয়, বাড়িঘরের অবস্থা এবং মদ্যপান করার কথা গোপন করেছিলো৷

The Syrian Bride

এই ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে৷ বললেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালক৷ তাঁর আশ্রয়ে যেসব নারী আছেন তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি তাঁর নাম জানাননি৷ তিনি বললেন, ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা এইসব মেয়েরা খুব গরিব৷ জোর দিয়ে কিছু বলার ক্ষমতা তাদের নেই৷ ফলে কোরিয়ার পুরুষরা এইসব নারীদের অবহেলা করে৷ তারা তাদের স্ত্রীকে মানুষ হিসেবেই দেখে না৷ তারা ভাবে, টাকা দিয়ে তারা স্ত্রীকে কিনে নিয়েছে৷ তাই স্ত্রীকে তারা যেন দাসী, যৌনদাসী হিসেবেই দেখে৷ এ হলো এক ধরনের আধুনিক দাসত্ব৷''

এইসব সমস্যা ঘটানোর জন্য মূলত ঘটকালির এজেন্সিগুলোকেই দায়ী করেছেন তিনি৷ ম্যারেজ এজেন্সিগুলোতে কাজ করেন যেসব ঘটক তাঁরা এরইমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু কিছু জায়গায় সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ এবছরের শুরুতেই ক্যাম্বোডিয়া সেদেশে কোরিয়ার এজেন্সিগুলোর জন্য ঘটকালি করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে৷

এ বিষয়ে বিভিন্ন ম্যারেজ এজেন্সির ঘটক বা দালালদের অনুরোধ করা হলেও তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি৷ পত্রিকায় এই বিষয়গুলি নিয়ে লেখালেখি হলে এবং এইসব এজেন্সির বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করলে কোরিয়ার সরকার আইন করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ দক্ষিণ কোরিয়ার নারী সমানাধিকার ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সং জি ইউন বলেন, এইসব এজেন্সি বিদেশে তাঁর দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে৷ তিনি বলেন, এই কনেদের রক্ষা করার জন্য, বিশেষকরে, এবছরে ভিয়েতনামের কয়েকজন মেয়েকে হত্যা করার ঘটনার পর, সরকার ম্যারেজ এজেন্সিগুলোকে তাদের তালিকাভুক্ত পাত্রদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত সব তথ্য জানতে চেয়েছে৷

তিনি বলেন, এই আইনের বলে সরকার ম্যারেজ এজেন্সিগুলোকে বিদেশি পাত্রীদের কাছে হবু বরের আর্থিক, স্বাস্থ্যগত এবং অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়াদির কাগজপত্র সরবরাহ করতে বলেছে৷ যদি তারা না করে তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ায় সেই এজেন্সি তার লাইসেন্স হারাবে৷

ভিয়েতনামের মেয়ে হং যখন জানতে পারলেন যে তাঁর স্বামী নেশাগ্রস্ত, ততদিন অনেক দেরি হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, সেই ঘটকের মুখ তিনি আর দেখতে চাননা৷ তাঁর স্বামীর শাস্তি হলেই বা কী হবে? কারণ তিনি এখন সাত মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা৷ হং বলেন, ‘‘আমি শুধু চাই আমাদের সন্তানের কথা ভেবে অন্তত আমার স্বামী আমাকে সাহায্য করুক৷ আমি ভিয়েতনামে ফিরে যেতে চাইনা৷ আমি এই আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকবো৷ আমি শুধু কোরিয়াতে সাধারণ এক জীবনই চেয়েছি৷''

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক